মালদহে জয় 'মহব্বতে'রই , ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাংলাকে ডাক রাহুলের

Bharat Jodo Nyay Yatra: রাহুল জানান, দেশে এখন বিচারধারার লড়াই চলছে। একদিকে ঘৃণা (নফরত) ও হিংসার বিচারধারা, অন্যদিকে ভালোবাসা (মহব্বত) ও ভাতৃত্বে (ভাইচারা)-র বিচারধারা।

'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে তৃতীয় বার বাংলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। গত ১৪ জানুয়ারি মণিপুর দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন রাহুল। সেখান থেকে অসম হয়ে বাংলায় ঢোকে রাহুলের যাত্রা। তবে জরুরি কারণে সেইদিনই দিল্লি ফিরে যেতে হয়েছিল কংগ্রেস নেতাকে। দু'দিনের বিরতি নিয়ে গত ২৮ তারিখ ফের বাংলায় ফেরে যাত্রা। জলপাইগুড়ি জুড়ে কার্যত চলেছে রাহুল-ম্যাজিক। সেখান থেকে বিহারে গিয়েছিলেন রাহুলরা। সেখানে যাত্রা ও সভা শেষ করে বুধবার ফের মালদহ দিয়ে বাংলায় ঢুকেছে যাত্রা।

ঘটনাচক্রে এই দিনই মালদহে ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভাও। আর রাহুল যে পথে যাত্রা করেছেন, কার্যত সেই পথেই আজ মালদহে পৌঁছেছেন তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূল-কংগ্রেস দ্বৈরথ যেন সপ্তমে পৌঁছেছে গত কয়েকদিনে। বিজেপি বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের দুই প্রধান দল কংগ্রেস ও তৃণমূল। অথচ লোকসভা ভোটের ঠিক আগে দু-দলের মধ্যে তেমন সমঝোতার ছবিটা দেখা যাচ্ছে না। গোড়া থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে এসেছেন, তিনি নিজের রাজ্যে একাই লড়তে চান। আসন সমঝোতা নিয়ে রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে সম্প্রতি তুঙ্গে উঠেছে বিবাদ। যাত্রায় কংগ্রেসের তরফে বারবার আমন্ত্রণ জানানো হলেও সেই আমন্ত্রণ তিনি ফিরিয়েছেন। কংগ্রেসের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সভা থেকে।

বিহার থেকে বাংলায় ঢুকে রাহলের ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু হয় মালদহের ভালুকায়। জলপাইগুড়ির মতোই এদিন মালদহেও রাহুলকে ঘিরে উপচে পড়ে ভিড়। এমনকী ভিড়ের চাপে রাহুলের গাড়ির কাচ পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিন বিকেলে মালদহ থেকেই জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন রাহুল। তাঁর কথায় উঠে এসেছে নানা বিষয়।

আরও পড়ুন: ‘ন্যায় যাত্রা’ নিয়ে মালদহে রাহুল, নিজের গড়ে কেন গড়হাজির ডালু?

২০২৪ সালে মণিপুর থেকে মহারাষ্ট্র 'যাত্রা' করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। তবে এ বছর সেই ভারত জোড়ো যাত্রার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে 'ন্যায়' শব্দটিও। ইতিমধ্যেই মণিপুর থেকে অসম হয়ে ভারতে ঢুকেছে যাত্রা। তার ফাঁকে ঘোরা হয়ে গিয়েছে বিহারও। রাহুল বুধবার জানান, আজকের দেশের বিভিন্ন কোণায় বিভিন্ন রকম ভাবে অন্যায় চলছে। এই মুহুর্তে হিন্দুস্থানে যে পরিমাণ বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে, তা গত চল্লিশ-পঞ্চাশ বছকে ছিল না। আর্থিক অন্যায়, সামাজিক অন্যায় থেকে শুরু করে মহিলাদের উপর অন্যায় বেড়েই চলেছে দেশ জুড়ে। শুধু তাই নয়, কৃষক থেকে শুরু করে মজুর-শ্রমজীবী মানুষের উপর অন্যায়ের মতো হাজার রকমের ন্যায়হীনতা হয়েই চলেছে মোদি জমানায়। এদিন ভাষণ দিতে উঠে মোদি সরকারের কৃষি-আইনের বিরুদ্ধেও গর্জে ওঠেন রাহুল। তিনি জানান, এ জন্যই চলতি বছরের ভারত জোড়ো যাত্রার সঙ্গে এ বছর জুড়ে দেওয়া হয়েছে ন্যায় শব্দটি। ক্ষমতায় এলে দেশে জাতিগণনা বা কাস্ট সেন্সাসের মতো গোটা দেশে সামাজিক 'ন্যায়' করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন রাহুল। মোট জনসংখ্যার কত সংখ্যক মানুষ পিছিয়ে পড়া, কত সংখ্যক মানুষ দলিত, তা জানতে কাজে আসবে এই কাস্ট সেন্সাস।

শুধু কাস্ট সেন্সাসই নয়, একই সঙ্গে আর পাঁচটি ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি দেন কংগ্রেস নেতা রাহুল। কী সেগুলি। রাহুল জানাচ্ছেন, তাঁর মধ্যে রয়েছে আর্থিক ন্যায়, সামাজিক ন্যায়, কৃষকদের জন্য ন্যায়, শ্রমিকদের জন্য ন্যায় এবং নারীদের জন্য ন্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঠুকে এদিন রাহুল বলে, 'যাত্রা'-র ভাষণ তেমন লম্বা হয় না। কারণ নিজের 'মন কি বাত' মানুষকে জানানো তার উদ্দেশ্য নয়। বরং মানুষের মনের কথা জানা ও বুঝতেই মানুষের কাছে এসেছেন তিনি।

রাহুল জানান, দেশে এখন বিচারধারার লড়াই চলছে। একদিকে ঘৃণা (নফরত) ও হিংসার বিচারধারা, অন্যদিকে ভালোবাসা (মহব্বত) ও ভাতৃত্বে (ভাইচারা)-র বিচারধারা। প্রসঙ্গত, এবার যাত্রায় রাহুলদের মূল স্লোগানই হল,নফরত কি বাজার মে মহব্বত কি দুকান। এদিনের বক্তৃতাতেও ফের উঠে এসেছে সেই কথাই। বাংলার প্রতিটি নাগরিকের কাছে রাহুলের আর্জি, "আপনারা দেশকে রাস্তা দেখান। আপনারা মননশীল মানুষ। বাংলা থেকে অসংখ্য় মননশীল মানুষের জন্ম হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে অমর্ত্য সেনের মতো অসংখ্য নোবেলজয়ীরা এসেছেন এই বাংলা থেকে। বাংলার মানুষের কাছে রাহুলের আবেদন, দেশ জুড়ে আরএসএসের যে ঘৃণার বিচারধারা চলছে, তার বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে মানুষকে, রুখতে হবে এই ধরনের প্রবণতাকে। একই সঙ্গে, ভারত জোড়ো যাত্রা চলকালীন বাংলা থেকে তিনি যে বিপুল ভালোবাসা পেয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।

একই সঙ্গে এ দিনের ভাষণে আব্দুল গনিখান চৌধুরীর কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি রাহুল। বহুদিন ধরেই কংগ্রেসের দুর্গ মালদহ। আর সেই দাপটের অন্যতম কারণ গণিখানের পরিবার। বরকত নামে পরিচিত ছিলেন তিনি এলাকায়। গণিখানের পরে তার ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুরর হাতে গিয়েছে সেই রাশ। গোটা বাংলায় যখন কংগ্রেস জমানা অপসৃয়মান, সেসময়েও দক্ষিণ মালদায় সেই প্রতাপ ধরে রাখতে পেরেছিল গনিখানদের পরিবার। তাঁকে স্মরণ করেই এ দিনের বক্তৃতা শেষ করেন রাহুল।

আরও পড়ুন:কাঁচ ভাঙল রাহুলের গাড়ির! ন্যায় যাত্রায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাই করেনি তৃণমূল প্রশাসন?

এরপরে মালদহ থেকে মুর্শিদাবাদের দিকে এগোবে যাত্রা। বহরমপুর কংগ্রেসের আরও একটি দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে দাপট প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। সেখানে আগামীকাল যোগ দেবেন বেশ কয়েক জন বাম নেতা। থাকার কথা বামেদের তরুণ নেতা মীনাক্ষী। রাহুলদের স্বাগত জানাতে ইতিমধ্যেই সাজতে শুরু করেছে বহরমপুর। শোনা যাচ্ছে, সেখানে তাঁর জন্য তৈরি হচ্ছে সাত কেজি ওজনের বিশেষ ছানাবড়া মিষ্টি। যা ইতিমধ্যেই জিতে নিয়েছে জিআই ট্যাগ। এখন মুর্শিদাবাদেও রাহুলের এই মহব্বতের দুকান কতটা ভালোবাসা বিলাতে পারে, সেদিকেই চোখ বাংলার। 

More Articles