ইন্দিরাকে বলেছিলেন 'গুঙ্গি গুড়িয়া', নেহরুকে কোণঠাসা করেছিলেন নিমেষে, চেনেন এই রাজনীতিবিদকে?
Rammanohar Lohiya: প্রথম দেখাতেই লোহিয়ার হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে বসেন নেহরু। সন্ধেবেলা চা খেতে খেতে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় দু'জনের। এই ঘটনার পর দু'জনের এই সান্ধ্য আসর প্রায়ই চলত।
একটি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ক'জন প্রার্থী জিতে সাংসদ হতে পারেন? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নের উত্তর হবে এক। অর্থাৎ একটি লোকসভা কেন্দ্র থেকে একজনই জিতে সাংসদ হতে পারেন। কিন্তু ভারতের প্রথম দু'টি লোকসভা নির্বাচনে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল। কিছু লোকসভা কেন্দ্র, যেগুলো তুলনামূলক বড় সেখানে একইসঙ্গে দু'জন সাংসদ নির্বাচিত হতেন। ১৯৫৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, সে বছর লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা ছিল ৪০৩। এর মধ্যে ৩১২টি আসনে একজন সাংসদ এবং ৯১টি আসনে দু'জন সাংসদ ছিলেন। মোট নির্বাচিত সাংসদ সংখ্যা ছিল ৪৯৪।
এইরকমই একটি লোকসভা কেন্দ্র ছিল পূর্ব এলাহাবাদ। এই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। ১৯৫৭-র নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানাধিকারীও ছিলেন এক কংগ্রেসি। সেই সময়কার নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের আসনগুলিতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল দু'জন করে প্রার্থী দিতে পারত। সবচেয়ে বেশি ভোট যে দু'জন পেতেন তারাই সাংসদ নির্বাচিত হতেন। কিন্তু ১৯৬০ সালে নির্বাচন কমিশন এই নিয়মে বদল আনে। এই বড় আসনগুলিকে তুলনামূলক ছোট আসনে ভাগ করা হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যেন প্রত্যেকটি আসনে একজনই সাংসদ থাকতে পারেন। এই ডিলিমিটেশনের ফলে পূর্ব এলাহাবাদ আসনটি ভেঙে একটি নতুন আসন তৈরি হয়, ফুলপুর। ১৯৬২ লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জওহরলাল নেহরু কিন্তু এই নবনির্মিত লোকসভা কেন্দ্রে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই বেগ পাইয়ে দিয়েছিলেন এক সমাজবাদী নেতা। নিজেকে 'কুজাত গান্ধীবাদী' বলে দাবি করতেন তিনি। গান্ধীজির নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গান্ধীবাদের প্রসার ঘটানোই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। তিনি ছিলেন ভারতের অন্যতম চর্চিত 'অ্যান্টি-কংগ্রেসি' এবং সমাজবাদী নেতা, ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া।
তবে এই নির্বাচনের আগে ডঃ লোহিয়ার রাজনৈতিক জীবনের দিকে ফিরে তাকাতেই হয়। যুব বয়সেই গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন রাম মনোহর লোহিয়া। গান্ধীজির মৃত্যুর পর নেহরুর সঙ্গে একাধিক রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্য কংগ্রেস ছেড়ে দেন তিনি। কংগ্রেস ছেড়ে ১৯৫২ সালে প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি গঠন করেন লোহিয়া। কিন্তু ১৯৫৫ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। একটি নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন লোহিয়া এবং এই মর্মে যোগাযোগ করেন ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের সঙ্গে। দু'জনের কথাবার্তা অনেকদূর এগোয় কিন্তু মৃত্যু কেড়ে নেয় আম্বেদকরকে। তবে এই আকস্মিক ধাক্কা থামাতে পারেনি লোহিয়াকে। ১৯৫৬ সালেই সোশ্যালিস্ট পার্টি (লোহিয়া) গঠন করেন তিনি।
আরও পড়ুন- ইন্দিরাকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, ইন্দিরার হাতেই শেষও হয়ে যান! কে ছিলেন কামরাজ?
১৯৬০-এর দশক আসতে আসতে লোহিয়া বুঝতে পারেন ক্রমশ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন নেহরু। সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধ প্রদর্শন করার সর্বোত্তম স্থান সংসদ। তাই আজীবন নির্বাচনী রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন ডঃ লোহিয়া। ঠিক করেন, সোজাসুজি লড়াই করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। স্বভাবতই হইচই পড়ে যায় দেশজুড়ে। ১৯৬২ লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে চর্চিত এবং 'হট সিট' ছিল ফুলপুর। রাজনীতির ময়দানে সম্মুখ সমরে ছিলেন জওহরলাল নেহরু এবং রাম মনোহর লোহিয়া।
ফুলপুর লোকসভার অন্তর্গত একটি ছোট্ট শহরতলি ছিল কাটরা। এই এলাকাটি স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল লক্ষ্মী টকিজ নামে একটি সিনেমাহলের জন্য। প্রত্যেকদিন নির্বাচনী প্রচার সেরে এসে বিকেলবেলায় এই হলের সামনেই ছাত্র-যুবদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন লোহিয়া। সেই সময় এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন বিনোদ দুবে। তিনি পরবর্তীকালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারক হন। নিজের এক লেখনীতে বিনোদ দুবে লিখেছিলেন, এরকমই এক ভাষণের মাঝে একদিন জনৈক সাংবাদিক লোহিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এত আন্দোলন করেন। ভারতের নির্বাচিত সরকারের উপর কি তাঁর আস্থা নেই? জবাবে লোহিয়া বলেছিলেন,
"রাস্তে খালি হো গয়ে তো সংসদ আওয়ারা হো জায়েগি। জিন্দা কৌমে পাঁচ সাল তক ইন্তেজার নহি করতি।"
ফুলপুরে নিজের প্রচার শুরু করার আগে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে একটি চিঠি লিখেছিলেন লোহিয়া। নেহরুকে বরাবরই 'ডিয়ার প্রেসিডেন্ট' বলে সম্বোধন করতেন লোহিয়া। সেই চিঠিতে লোহিয়া লেখেন,
"ডিয়ার প্রেসিডেন্ট, আমি জানি ফুলপুরে আপনার জয় অবশ্যম্ভাবী। আপনার সরকারিতন্ত্রের সামনে আমি টিকতে পারবো না হয়তো কিন্তু আমার বিশ্বাস আমি আপনার আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরিয়ে দিতে পারব। ঈশ্বর চাইলে আপনাকে হারিয়ে আমি সংসদেও যেতে পারি কিন্তু আপনার এই পরাজয় দেশের পক্ষে শুভ হবে। আমার বিশ্বাস, এই পরাজয় আপনাকে আরও ভালো একজন মানুষ এবং দক্ষ প্রশাসকে পরিণত করবে।"
চিঠি পেয়েই তৎক্ষণাৎ পাল্টা চিঠি লেখেন নেহরু। জবাবে তিনি লিখেন,
"প্রিয় রাম মনোহর, আমার সৌভাগ্য যে আমার বিরুদ্ধে তোমার মতো একজন সৎ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আমি আশা করব, আমাদের লড়াই রাজনৈতিক স্তরেই থাকবে এবং ব্যক্তিগত স্তরে আমাদের হৃদ্যতার সম্পর্ক অটুট থাকবে। একইসঙ্গে আমি কথা দিচ্ছি, আমি আমার নির্বাচনী ক্ষেত্র অর্থাৎ ফুলপুরে প্রচারে যাব না।"
ফুলপুরে রাস্তাঘাট সেরকম ভালো ছিল না। পাকা রাস্তা দূরস্থান, কাঁচা রাস্তাও ঠিকমতো ছিল না সব জায়গায়। সোশ্যালিস্ট পার্টি আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল ছিল না কংগ্রেসের মতো। বাধ্য হয়ে কখনও পায়ে হেঁটে, আবার কখনও এক্কাগাড়িতে চড়ে প্রচার করতেন রাম মনোহর লোহিয়া। ক্রমশ ফুলপুরের মানুষের ঘরের ছেলে হয়ে ওঠেন লোহিয়া। নিজের জ্বালাময়ী ভাষণের মাধ্যমে নেহরু সরকারের বিরুদ্ধে ফুলপুরের মানুষকে তাতিয়ে তোলেন তিনি। লোহিয়ার সমর্থনে ফুলপুরে পদযাত্রা করতে আসেন আচার্য জে বি কৃপালিনী, জর্জ ফার্নান্দেজ, মধু লিমিয়ে, কর্পূরী ঠাকুর-সহ প্রমুখ সমাজবাদী নেতারা। ক্রমশ নেহরু বিরোধী হাওয়া উঠতে থাকে ফুলপুরে।
স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বর থেকে রিপোর্ট যায় দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পরিষ্কার বুঝতে পারেন, ফুলপুরে সশরীরে গিয়ে প্রচার না করলে শেষ রক্ষা হবে না। বাধ্য হয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন নেহরু। গাড়ি, হেলিকপ্টার-সহ নিজের কনভয় নিয়ে ফুলপুর পৌঁছন তিনি। ফুলপুরের নিকটেই ছিল এলাহাবাদের আনন্দ ভবন। ভোট প্রচারের সময় এখানেই থাকতেন নেহরু। একদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আনন্দ ভবনে পৌঁছন রাম মনোহর লোহিয়া। প্রথম দেখাতেই লোহিয়ার হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে বসেন নেহরু। সন্ধেবেলা চা খেতে খেতে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় দু'জনের। এই ঘটনার পর দু'জনের এই সান্ধ্য আসর প্রায়ই চলত। সকালে দু'জন দু'জনের বিরুদ্ধে প্রচার করতেন এবং বিকেলে চায়ের আসরে গল্পে মগ্ন হয়ে যেতেন। এই ধরনের রাজনৈতিক সৌজন্য বর্তমানে আর দেখাই যায় না।
এই রাজনৈতিক দ্বৈরথের ফলাফল কী হয়েছিল? সেবারের নির্বাচনে প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন জহরলাল নেহরু। রাম মনোহর লোহিয়া পান ৫৪ হাজার ভোট। কিন্তু শুধু সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে এই ফলাফলকে বিচার করা ঠিক হবে না। কারণ, ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে নেহরুর পাওয়ার কথা ছিল অন্তত ২ লক্ষ ২০ হাজার ভোট। অর্থাৎ নেহরুর ১ লক্ষেরও বেশি ভোট কাটতে সক্ষম হন লোহিয়া। শুধু তাই-ই নয়, ফুলপুরের তিনটি বিধানসভায় নেহরুকে পরাজিত করেছিলেন লোহিয়া। হয়তো পুনরায় নির্বাচনের ময়দানে মুখোমুখি হলে নেহরুকেও হারাতে পারতেন লোহিয়া কিন্তু তার আগেই ১৯৬৪ সালে প্রয়াত হন জওহরলাল নেহরু।
আরও পড়ুন- মায়াবতীর বিশ্বাসঘাতকতায় পড়ে যায় সরকার, যে অভাবনীয় প্রতিশোধ নিয়েছিলেন বাজপেয়ী…
ফুলপুরের উপ-নির্বাচনে জয়ী হন নেহরুর বোন বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত। কিন্তু ততদিনে সংসদে পৌঁছে গিয়েছেন লোহিয়া। এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে ফারুক্কাবাদের উপনির্বাচনে জিতে সাংসদ হন তিনি। নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। শাস্ত্রী ক্যাবিনেটে সূচনা এবং সম্প্রসারণ মন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধি। এই সময়েই ইন্দিরাকে 'গুঙ্গি গুড়িয়া' বলেছিলেন লোহিয়া। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধি। ১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই একাধিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইন্দিরা। সেবছর একই সঙ্গে নয়টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হেরে যায় কংগ্রেস এবং সিন্ডিকেটের সামনে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকেন ইন্দিরা।
কংগ্রেসের দুর্দশা দেখে লোহিয়া বুঝতে পেরেছিলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে নতুন রাজনৈতিক বিকল্প তৈরি করা প্রয়োজন। এর জন্য তিনি শরণাপন্ন হন তাঁর এক পুরনো বন্ধুর। এই বন্ধুর কারণেই প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল তাঁকে। লোহিয়া দ্বারস্থ হন জয়প্রকাশ নারায়ণের। ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং সোশ্যালিস্ট পার্টির বিলয় হয়ে তৈরি হয় সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টি। কিন্তু এই সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টি বা 'সংসোপা'র রাজনৈতিক কার্যাবলী বেশি দিন দেখে যেতে পারেননি লোহিয়া। ১২ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে, দিল্লির উইলিংডন হাসপাতালে প্রয়াত হন রাম মনোহর লোহিয়া। এই হাসপাতালটির বর্তমান নাম ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া হসপিটাল। লোহিয়ার মৃত্যুর সঙ্গেই খসে পড়ে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। পরবর্তীকালে রাম মনোহর লোহিয়ার ফেলে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। ইন্দিরা গান্ধির এমার্জেন্সি ঘোষণা এবং তার বিরুদ্ধে জেপির লড়াইয়ের কাহিনি, কমবেশি আমরা সকলেই জানি।
রাম মনোহর লোহিয়া ফুলপুরে ফুল ফোটাতে না পারলেও, ফুটিয়েছিলেন আরেক লোহিয়া। ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে ফুলপুর থেকে দাঁড়িয়েছিলেন বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত। তাঁর বিরুদ্ধে সোশ্যালিস্ট পার্টির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন রাম মনোহর লোহিয়ার আপ্ত সহায়ক জ্ঞানেশ্বর মিশ্র। জ্ঞানেশ্বর মিশ্রকে এলাহাবাদের রাজনীতিতে 'ছোটে লোহিয়া' বলে অভিহিত করা হতো। দুর্দান্ত ছাত্রনেতা এবং প্রখর বক্তা জ্ঞানেশ্বর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতকে হারিয়ে সাংসদ হন। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কেউ কারাগারে বন্দি অবস্থায় নির্বাচন লড়ে জিতেছিল। তবে সেই কাহিনি অন্য কোনওদিন শোনানো যাবে।