'আমি বিনয় চণ্ডাল' : এক পংক্তির কবিতার দলিত পাঠ
Binoy Majumdar Dalit Poet: কোকিলের স্বরের সঙ্গে প্রেমিকার গলার তুলনা তাই বিনয় করতে চান না। ওই স্বর কোকিলের ফুসফুস, কণ্ঠনালী, আলজিভ সবকিছুর ফলাফল।
বাংলা ভাষার কবিতায় পরিচিতি সূচক কবিতার ধারা ঔপনিবেশিক সময়কাল থেকেই আধুনিকতার অভ্যাস করতে করতে প্রায় অবলুপ্ত হয়ে যায়। ঔপনিবেশিক সময় থেকে বাংলা কবিতার আধুনিক হওয়া শুরু মূলত ইওরোপের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদকে কেন্দ্রে রেখে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে কবিতার পরিচিতি সূচক পরিসর যা দিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তির পরিসর নয়, ব্যক্তিপরিসর গঠনের নেপথ্যে থাকা গোষ্ঠী, গোষ্ঠীর ইতিহাস, গোষ্ঠীর অভ্যাস ইত্যাদি বোঝা যায়, তা সংকুচিত হতে শুরু করে। অথচ বাংলা কবিতার প্রাক-ঔপনিবেশিক ধারার দিকে তাকালে পরিচিতি সূচক কবিতার গুরুত্ব স্পষ্ট বোঝা যায়। চর্যার সহজিয়া বৌদ্ধধারা, বিদ্যাপতি, জয়দেবের কৃষ্ণপ্রেম থেকে শুরু করে বৈষ্ণবধারা, মঙ্গলকাব্যের বিভিন্ন লৌকিক দেবীর উপধারা, লালনের বাউলধারা, রামপ্রসাদের শাক্তধারা ইত্যাদির পরিচিতি সূচক পরিসর বাংলা কবিতাকে পুষ্ট করেছে। এই পরিচিতি সূচক পরিসরে কবিতা শুধুমাত্র ব্যক্তির সচেতন, অবচেতন দিয়ে তৈরি হয় না। ব্যক্তি যে পরিচিতি সূচক ধারার ধারক ও বাহক তা অনেকখানি নির্মাণ করে কাব্যজগতকে। কবিতা শুধুমাত্র ব্যক্তির না থেকে গোষ্ঠীর হয়ে ওঠে এই ক্ষেত্রে। কবিতার সঙ্গে এইক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যায় গোষ্ঠীর ইতিহাস, গোষ্ঠীর দর্শন, গোষ্ঠীর অভ্যাস, গোষ্ঠীর সীমাবদ্ধতা। তাই এই আঙ্গিকের কবিতা স্বাভাবিকভাবেই টেস্টিমনি হয়ে ইতিহাস ও দর্শন চিনতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক জগতের কবিতা আত্ম অনুসন্ধান করে। এর থেকে জাত বোধ ইতিহাস ও দর্শনকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে আবিষ্কার করে। বলা যেতে পারে বাংলা কবিতার টেস্টিমনি হওয়ার প্রাক-ঔপনিবেশিক প্রবণতা মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দের কবিতাচর্চার মধ্য দিয়ে পুরোপুরি অবলুপ্ত হয়।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পরবর্তী বাংলাভাষার কবিতা আধুনিকতার মূল সুর মেনেই মূলত চর্চা হয়েছে। এছাড়া পঞ্চাশ পরবর্তী বাংলা কবিতায় মূলত 'গোষ্ঠী' গড়ে উঠেছে কবিতার কৃৎকৌশলকে ঘিরে, সামাজিক ও ঐতিহাসিক পরিচিতিকে ঘিরে নয়। কল্লোলই হোক, কৃত্তিবাসই হোক, কিংবা হাংরি, শ্রুতি বা নতুন কবিতা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই কবিতার কৃৎকৌশলই 'গোষ্ঠী'বদ্ধতার শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কেউ কেউ শাক্তপথটিকে নতুন আলোয় খুঁজতে চেয়েছেন। এই প্রেক্ষিত থেকে ভাবলে পঞ্চাশ পরবর্তী বাংলা কবিতায় দুইজন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তাঁদের মধ্যে একজন আল মাহমুদ সচেতনভাবেই নিজের ঐতিহাসিক, সামাজিক পরিচিতি থেকেই নিজের পোয়েটিক্সের নির্মাণ করেছেন। আল মাহমুদের কাব্যপরিসর আধুনিক বাংলা কবিতার ধারা থেকে সোচ্চারিতভাবেই আলাদা। বখতিয়ারের ঘোড়াকে আল মাহমুদ ব্যবহার করেছেন ত্রয়োদশ শতাব্দী পরবর্তী নতুন বাঙালি দুনিয়ার মোটিফ হিসাবে। আল মাহমুদ সচেতনভাবেই মুসলমান বাঙালির কবিতার পরিসর নির্মাণ করেছেন। পরিচিতি সূচক রাজনীতি এখানে সুস্পষ্ট। আরেকজন কিন্তু এতটা সচেতনভাবে এই পরিচিতি সূচক কাব্যপরিসর নির্মাণ করেননি। কিন্তু তাঁর কবিতার জগতের ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় নিজের অজান্তেই (কিংবা সচেতনভাবেই বুঝতে না দিয়ে) তিনি পরিচিতি সূচক টেস্টিমনি লিখে গেছেন তাঁর কবিতায়। বিনয় মজুমদারের 'অঘ্রাণের অনুভূতিমালা' পরবর্তী কবিতার জগৎ, বিশেষ করে 'এক পংক্তির কবিতা' মূলত এক টেস্টিমনি। সামাজিকভাবে এক দলিতের টেস্টিমনি। ঐতিহাসিকভাবে এক চাঁড়ালের টেস্টিমনি। এর ভিতর দিয়ে যে ইতিহাস, মন, ভয়, লুকোতে চাওয়া, দুনিয়াদারির বিকল্প এক দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায় তা বাংলা কবিতায় দলিত চেতনার মাইলস্টোন।
আরও পড়ুন- মৃত্যুর মুখোমুখি কি কবিতা হাতে দাঁড়ানো যায়? জয় গোস্বামী
দলিত তাত্ত্বিক গোপাল গুরুর মতে, একজন দলিত যেভাবে বাঁচেন, সেই বাঁচাকে যেভাবে লেখায় প্রকাশ করেন, সেটাই দলিত চেতনার টেস্টিমনি। গুরুর মতে এই প্রকাশভঙ্গি সমালোচনা শাস্ত্রে আলোচিত সাহিত্যের চিরায়ত ভঙ্গির থেকে পৃথক হতে পারে। এতে তথাকথিত সাহিত্যগুণ নাও থাকতে পারে। কিন্তু এই ভঙ্গি সবসময় প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য পরিসরকে একটা অস্বস্তি দেবে। প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য পরিসর এই ভঙ্গিকে স্থূল, কাঁদুনি, প্রলাপ বলে চিহ্নিত করতে চাইবে। শেষমেশ এই ভঙ্গিকে 'কোনও সাহিত্যই নয়' বলে দেগে দেওয়া হবে। বিনয় মজুমদারের টেস্টিমনি পর্বের কবিতা নিয়ে 'বিনয় মজুমদার কাব্য সমগ্রের' সম্পাদক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলছেন, "কাব্য সমগ্রর এই দ্বিতীয় খণ্ডে 'কাব্যসমগ্র' প্রথম খণ্ডের বিনয়কে প্রায় চেনাই যায় না। কবির মানসিক অসুস্থতা এই খণ্ডের কবিতাবলিতে গভীর ছায়া ফেলেছে"। এক পংক্তির কবিতাগুলি ঘেঁটে দেখা যাক, সম্পাদক মানসিক অসুস্থতার ছায়া বলে চিহ্নিত করছেন যে চেতনা, তা আসলে কী।
২০১ টি এক পংক্তি জুড়ে বিনয় একটিও উপমা ব্যবহার করেননি। একটা মাত্র মেটাফর রয়েছে। প্রথম কবিতাটিতেই তা ব্যবহৃত হয়ে গেছে:
"কবিতা লিখলেই মানুষ, গণিত আবিষ্কার করলেই বিশ্বের মালিক"।
যারা বিনয়ের কবিতায় প্রায়শই গাণিতিক মূর্চ্ছনা খুঁজে পান, তাদেরকে এই কবিতা নিশ্চিত ধাক্কা দেয়। গণিত অসীমকে বুঝতে পরিমাপযোগ্য একটা পরিসর আবিষ্কার করতে পারে। ফলে গণিত অবশ্যই সেই বিদ্যা যা একজনকে ক্ষমতাবান করে তোলে। বিশ্বের মালিক হওয়ার প্রথম শর্তই ক্ষমতাবান হওয়া। কবিতা নিতান্তই মানুষের ব্যাপার। ক্ষমতার পরিসর থেকে কবিতা অনেক দূরের। দলিত হওয়ার প্রথম শর্ত ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে দূরত্ব। ক্ষমতাহীন মানুষ কিছুই দিতে পারে না। দিতে যে পারে, সে ক্ষমতাবান। গণিত কষে, সরে আসা দূরত্বে সেই ক্ষমতাবানকে তখন মানুষই মনে হয় না, দেবতা মনে হয়। বিনয় লেখেন, "আমি দেবতা মানে আমি তোমাকে অমুক জিনিসটি দেবো"। এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত পৃথিবীর বয়ান লিখতে গিয়ে প্রথমেই বিনয় লেখেন, "যা ঘটে তাই স্বাভাবিক"। তাহলে দৈবিক, অধিদৈবিক, অতিলৌকিক, অধিবাস্তব, পরাবাস্তব এই প্রেক্ষিতগুলির কী হবে? এই প্রেক্ষিতগুলিকে আলাদা করারই প্রয়োজন অনুভব করে না দলিত চেতনা। দলন এমন একটা প্রক্রিয়া যা সবকিছুকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে শেখায় অবচেতনে, নইলে বাঁচা খুব কষ্টকর।
এই চেতনা থেকেই জাত হয় স্বাভাবিক এক বোধ: "সবচেয়ে বোকা প্রাণী মাছ"। অথচ এই মাছকে আর্য সাহিত্য জুড়ে কতই না মহিমান্বিত করা হয়েছে, অবতার অবধি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যেমন অবতার বানানো হয়েছে শুয়োরকেও। অথচ বর্ণহিন্দু শুয়োর থেকে নিজেকে বহু দূরে রেখেছে হাজার, হাজার বছর। এই মহিমান্বিত করার প্রবণতা থেকেই মহাত্মা গান্ধী 'হরিজন' শব্দটির ব্যবহার করে বর্ণবাদী নৃশংসতাকে ভুলিয়ে দিতে চান। নরেন্দ্র মোদী মেথরদের পায়খানা পরিস্কারের কাজকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মহান আত্মত্যাগ বলে ধামাচাপা দিতে চান। সবচেয়ে বোকা প্রাণী হিসাবে মাছকে চিহ্নিত করে, তাকে কবিতা হিসাবে নথিভুক্ত করতে চাওয়া একজন দলিতের পক্ষেই সম্ভব। একজন দলিতের পক্ষেই সম্ভব শাপলার গা থেকে শরৎ, শারদীয়, দিঘির টলটলে জল সব অনুষঙ্গ মুছে দিয়ে লিখে ফেলা, "সবচেয়ে সস্তা খাবার শাপলা", "শাপলার চাষ করতে হয় না"। ফুল, জল ও শরৎ মিলে যে ম্যাজিক তৈরি হয় শাপলাকে ঘিরে বিনয়ের এই সহজ শারীরিক উচ্চারণ সেই ম্যাজিককে অস্বীকার করে। শাপলা বর্ষার শেষ থেকে শরতের শেষ অবধি নমঃশূদ্ররা (এবং অবশ্যই অন্যান্য অন্তজ শ্রেণির বাঙালি) মুসুর ডালে দিয়ে, চচ্চড়ি রেঁধে, বড়া করে, ভেজে সব উপায়েই খায়। এই সহজ সত্যটি বাংলা কবিতায় বিনয়ের আগে একজনও উচ্চারণ করেননি কেন? শাপলা দৃশ্যত সুন্দর এবং উচ্চবর্ণের হিন্দুর পাতে তেমনভাবে উপস্থিত নয়। বাংলা কবিতায় শাপলাকে খাদ্য ভাবা কি স্থূল রুচির পরিচায়ক? আবার কুকুর খুব মানুষ ঘেঁষা বলে তার মাংসকে খাদ্য ভাবতে যে অস্বস্তি আসে আমাদের তথাকথিত মানবতাবাদী মনে, সেই একই অস্বস্তি কাজ করে শাপলাকে শুধু খাবার হিসাবে কবিতায় ধরতে। এই অস্বস্তিটিই ব্রাহ্মণ্যবাদ। বিনয় নিজ মনে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা করে চলেন নিজের এক পংক্তিগুলি দিয়ে।
আরও পড়ুন- “দলিত এখন একটা ফ্যাশন”! আম্বেদকরের আর প্রয়োজন কোথায়?
কবিতাকে 'স্থূল' পার্থিব সীমা থেকে বেরিয়ে 'সূক্ষ্ম' আত্মিক অসীমে যেতে হয়- সংস্কৃত সমালোচনা শাস্ত্র থেকে পাওয়া এই ধারণা বাংলা কবিতা প্রায় ধ্রুবক বলে মনে করে। তাই 'ভালো' বাংলা কবিতা 'স্থূল' পার্থিব সীমায় ঢুকতে বাধ্য হলেও সেই পার্থিবকে 'অপার্থিব' করে তোলে। মোহিতলাল মজুমদারের কালবৈশাখীর বর্ণনা কিংবা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের হাটের বর্ণনা পড়লেই স্পষ্ট হয় পার্থিব রোজকার ব্যাপারকে অতিলৌকিক করে তুলতে পারাই যেন কবিতার কাজ। কবিতায় 'পার্থিব'-কে 'অপার্থিব' হয়ে উঠতে হবে- এই ব্রাহ্মণ্যবাদী ধারণাকে ভেঙে ফেলে বিনয়ের এক পংক্তিরা। এই কবিতার ব্যাপ্তি এতটাই বিস্তৃত যে যেকোনও কিছুই কবিতা হয়ে ওঠে, বলা ভালো, সব কিছুই কবিতা। দ্বিধাহীনভাবে বিনয় লেখেন, "সুপুরিগাছ সিধে উপরের দিকে ওঠে", "নারকেল গাছ একটু হেলে উপরের দিকে ওঠে", "কচু বহু প্রকারের- পানি কচু, মুখি কচু, মান কচু, ঘট কচু", "কাঁঠাল গাছে কলমের চারা হয় না"। এইসব পড়তে পড়তে স্বাভাবিক রোজকার জীবনের উদযাপন দেখতে দেখতে একটু গা এলিয়ে এলেই বিনয়ের কবিতা ধাক্কা মারে: "জাল তৈরি করেছিল কে আগে, মানুষ না মাকড়সা?" তাহলে কি বিনয় খুব সুনিপুণভাবে সেই চেতনার আধারে আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন যা মূলগতভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদী চেতনাকে অস্বীকার করে? এই অস্বীকার স্পষ্ট হয়ে ওঠে তুলসী গাছের আধ্যাত্মিক গুরুত্বের চেয়ে শারীরিক গুরুত্বে জোর দেওয়ায়। বিদ্যাপতিতে তুলসী দিয়ে যে জীবাত্মার আত্মসমর্পণ রয়েছে তার বিপ্রতীপে দলিতের স্বর হয়ে থাকেন বিনয়: "তুলসী গাছের পাতার রসে দাঁতের পোকা মরে এবং দাঁত-ব্যথা সারে"।
বাংলা সাহিত্যে 'থুথু' ঘেন্না ছাড়া আর কোনও অনুষঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে? চণ্ডাল বিনয় লিখে ফেলেন, "থুথু পেটের অসুখের এবং ঘায়ের ওষুধ"। এভাবেই বিনয়ের এক পংক্তিরা যে দুনিয়ার কথা বলে তা একজন চণ্ডালের চোখ দিয়ে দেখা দুনিয়া। 'ফিরে এসো, চাকা'-র চমকে দেওয়া সব উপমার আধুনিক কবিটি চণ্ডাল হয়ে উঠেছেন এখানে। চণ্ডাল বিনয় উপমাকে শুধু কবিতা নয়, জীবনের পক্ষেও বিপজ্জনক মনে করেছেন। নিজের চণ্ডালত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন উপমাহীনতা দিয়ে। 'বিনয় মজুমদারের ডায়েরি'-র '২৫ শে শ্রাবণ, ১৩৯৪ বঙ্গাব্দ, কলিকাতা'য় বিনয় লিখছেন, "আমি বিনয় চণ্ডাল"। দ্বিধাহীন ভাবে তার রুমমেট যাকে 'রাজা সত্যব্রত' বলে অভিহিত করেছেন, তাকে জানাচ্ছেন যে মানুষের শরীরের রঙের চেয়ে গোলাপের রঙ ভালো হতে পারে না। শুনেই রুমমেট বলছেন, 'থু থু'। ঠিক পরের দিনের ডায়েরির এন্ট্রিতে বিনয় লিখছেন, "বিনা উপমাতে আমি দ্রুত বেগে লিখে যাই সময়ও বাঁচে"। আর উপমার মারাত্মক দিক হিসাবে চিহ্নিত করছেন, উপমা এতটাই শক্তিশালী যে উপমার ক্ষমতার দাপটে মূল বস্তুটিই একসময় হারিয়ে যায়। কোকিলের স্বরের সঙ্গে প্রেমিকার গলার তুলনা তাই বিনয় করতে চান না। ওই স্বর কোকিলের ফুসফুস, কণ্ঠনালী, আলজিভ সবকিছুর ফলাফল। প্রেমিকার স্বর কোকিলের মতো হলে প্রেমিকার ফুসফুস, কণ্ঠনালী, জিভ সবকিছু কোকিলের মতোই হতে হবে এবং প্রেমিকা আস্তে আস্তে কোকিল হয়ে যাবে। সেখানে শুধু উপমাই থাকবে; হারিয়ে যাবে প্রেম, হারিয়ে যাবে জীবন। চণ্ডাল জীবনের টেস্টিমনি গাঁথার সময় বিনয় তাই উপমাহীন, সহজ, দ্বিধামুক্ত। তাই চণ্ডাল বিনয় খুবই বিপজ্জনক। তাঁর এই পর্বের কবিতায় দলিত নন্দনতত্ত্ব খোঁজার চেষ্টা না করে, প্রলাপ বলে উপেক্ষা করার দীর্ঘকালীন অনবরত চেষ্টা নিঃসন্দেহে ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যবাদ।