ছড়িয়ে লাট নাকি আবার হিট? ডানকি দেখার আগে যে যে ঘটনা জানতেই হবে...

SRK Dunki Movie Release : অনেকেই বাড়ির ছাদে ট্যাঙ্ক বানান কেটলি আকারের, কেউ ফুটবল আকারের। কিন্তু এরোপ্লেন? কেন? কারণ খুঁজতে খুঁজতেই ডানকির জন্ম।

বছরের শুরুতে পাঠান, তারপর জওয়ান, এবং হ্যাট্রিকের তিন নম্বরটি ডানকি। হ্যাঁ, পাঠান বা জওয়ানের মতো বিপুল প্রচার কিন্তু হয়নি। শাহরুখের স্ক্রিন কাঁপানো অ্যাকশন এতে নেই। আছে ভারতের এক অংশের বাসিন্দাদের বাস্তব কিছু সমস্যা। তাপসী পান্নু, বোমান ইরানি এবং ভিকি কৌশলকে সঙ্গে নিয়ে বড়দিনের আগেই ফ্যানদের 'বড়দিন' উপহার দিয়েছেন শাহরুখ। ভালো জীবনের অন্বেষণে অভিবাসী মানুষদের সংগ্রামের গল্প। এই গল্প কি মানুষ নেবে? মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে ইতিমধ্যেই। কেউ কেউ বলছেন 'ডিজাস্টার', কেউ কেউ আবার বলছেন পাঠানের চেয়ে ঢের ভালো! এসআরকে-র ডানকি কি তাহলে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারল সত্যিই? দেখবেন কি দেখবেন না এই চিন্তায় পড়ার আগে কিছু তথ্য অবশ্যই জানা দরকার।

কিছুকাল আগেই রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে রাজকুমার হিরানি, শাহরুখ খান এবং তাপসী পান্নু ডানকির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন। এই কথোপকথনের সময়ই পরিচালক জানান হঠাৎ এমন বিষয় নিয়ে সিনেমা কেন? শাহরুখ একটি ছবি দেখান যেখানে বাড়ির ছাদে একটি এরোপ্লেন বানিয়ে বসানো আছে। রাজকুমার হিরানি জানান, ওই বাড়িটি জলন্ধরে। বাড়ির উপরে, ছাদে সিমেন্টের তৈরি এক বিশাল বিমান রয়েছে। এটি শুধু এই বাড়ি নয়; জলন্ধরে বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে যার ছাদে বিমান রয়েছে। রাজকুমার এই ঘটনা দেখে অবাক হয়ে যান। অনেকেই বাড়ির ছাদে ট্যাঙ্ক বানান কেটলি আকারের, কেউ ফুটবল আকারের। কিন্তু এরোপ্লেন? কেন? কারণ খুঁজতে খুঁজতেই ডানকির জন্ম।

হিরানি জানাচ্ছেন, জলন্ধরের এই অদ্ভুত বিমানের নেপথ্যের অদ্ভুত কাহিনি। এ এক ঐতিহ্যের অংশ। এই অঞ্চলে কোনও বাড়ির কেউ যখন বিদেশে যায়, মানে লন্ডন, কানাডা বা আমেরিকার মতো কোনও জায়গায় যায়, তখন তারা এই বিমান যাত্রা চিহ্নিত করার জন্য বাড়ির ছাদে একটি বিমান তৈরি করে রাখেন। বিমানের নীচে সাধারণত জলের ট্যাঙ্কটি বসানো হয়। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অধিকাংশই বিদেশ যেতে মুখিয়ে থাকেন। তারা মনে করেন, বিদেশের জীবনই ভালো। কিন্তু ভিসার সমস্যায় অবৈধভাবে দেশ পার করে চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এইখানেই জন্ম ডানকি রুটের। ডানকির গল্পের প্রাণ এই ঘটনাগুলিই।

ডানকি ফ্লাইট মূলত একটি অবৈধ অভিবাসন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় বস্তুত পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়া যায়। ডানকি অবশ্যই বেআইনি। তবু অনেক অনেক মানুষ নিজেদের দেশ থেকে এভাবেই সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের মানুষরাও এই পদ্ধতিতে যাতায়াত করেন।

আরও পড়ুন- বড়দিনে শাহরুখের হ্যাটট্রিক! কিং খানের ‘ডানকি’ আসলে কী নিয়ে জানেন?

 

কিন্তু ডানকি পদ্ধতি আসলে ঠিক কী? কীভাবে ভারতীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশে ঢোকার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে? ডানকি ফ্লাইট পদ্ধতিতে অভিবাসীরা নিজেদের পছন্দসই গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে অন্যান্য দেশে থেমে সেই দেশগুলির একটি সার্কিট রুটের মাধ্যমে কাঙ্খিত দেশে ঢুকে পড়েন। ডানকি শব্দটি পাঞ্জাবি একটি অভিব্যক্তি মূলত, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়াকে বোঝানো হয় এই শব্দটি দিয়ে।

সহজ কথায়, ডানকি ফ্লাইট কোনও দেশে প্রবেশের জন্য একাধিক দেশে স্টপেজ ব্যবহার করে। অভিবাসন নীতির ফাঁকফোঁকরকে কাজে লাগিয়েই মানুষ অবৈধভাবে অন্যত্র যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভারত থেকে আসা ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে প্রবেশের উপায় হিসেবে সেনজেন-জোন দেশের ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে পারেন। একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির মাধ্যমে তারা যাতায়াত করতে পারেন।

ডানকি ফ্লাইট-এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি পঞ্জাবে। বিদেশে স্থায়ী হতে চাওয়া মানুষদের কাছে এই ডানকি ফ্লাইটের গুরুত্ব তুমুল। প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশেও এর জনপ্রিয়তা আছে। মজার বিষয় হলো, এই অঞ্চল থেকে বিশাল পরিমাণে মানুষ বিদেশে চলে যাওয়াতে গুজরাতেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে ডানকি ফ্লাইট।

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ডানকি ফ্লাইট পদ্ধতি ব্যবহার করা সহজ নয়, উল্টে বিপজ্জনক। অনেক মানুষই হামেশাই ডারিয়েন গ্যাপ ব্যবহার করে যাতায়াত করতে চায়। এই ডারিয়েন গ্যাপ কলম্বিয়াকে পানামার সঙ্গে সংযুক্ত করে। এখানে বিভিন্ন চক্রের উপস্থিতি, খাবার ছাড়া কয়েকদিন ধরে ট্রেকিং করা, বিষাক্ত সাপের সঙ্গে লড়াই এবং প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকিও প্রবল।

More Articles