ফের অসংবেদনশীলতার অভিযোগ! যেভাবে বিশেষভাবে সক্ষমদের বিনোদনের খোরাক বানাচ্ছে ফ্লিপকার্ট
Flipkart : ফ্লিপকার্ট সহজ একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল- কম খরচে টাটকা শাকসবজি। কিন্তু যেভাবে এই বার্তাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো তা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
দেশের অন্যতম অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম ফ্লিপকার্ট। সম্প্রতি কোম্পানিটি একটি নতুন বিজ্ঞাপন এনেছে। বিজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়েছে থ্রি ইডিয়টস ছবির একটি জনপ্রিয় দৃশ্যের সাথে কিছুটা মিল রেখে। দৃশ্যের পুনর্নির্মাণ একটি সৃজনশীলতার কাজ। তা এই বিজ্ঞাপনেও করা যেতে পারত। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে উপহাস করাই বিজ্ঞাপনটির মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞাপনটি যেন এই ধারণাটিকে আরও স্পষ্ট করে যে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সংগ্রাম বিনোদনের খোরাক।
বিজ্ঞাপনে থ্রি ইডিয়টস-এর র্যাঞ্চো (আমির খান) এবং ফারহান (আর মাধবন), প্রথমবার রাজু (শরমন জোশী)-র বাড়িতে যাওয়ার দৃশ্য পুনর্নির্মাণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, অমরদীপ ঝা রাজুর মায়ের ভূমিকায় আবারও অভিনয় করছেন। তিনি শাকসবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এই সবের মাঝেই একটি ফ্লিপকার্ট লিফলেট ঘরে ঢুকে পড়ে। লিফলেটে লেখা থাকে মাত্র ৯ টাকাতেই টাটকা শাক-সবজি পাওয়া যাবে। অভিনেতা মুকুন্দ ভাট, যিনি রাজুর পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি লিফলেটটিতে তাঁর স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞাপনে চরিত্রটির দুর্বলতার জায়গা থেকে হাস্যরস তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বিজ্ঞাপন ইউটিউবে ২.৫ কোটিরও বেশি মানুষ দেখেছেন।
ব্র্যান্ডিং এজেন্সি স্ক্রোল মন্ত্রার প্রতিষ্ঠাতা নেহা বাজাজ দ্য প্রিন্ট-কে বলেছেন, "এগুলিতে জনসাধারণের দৃষ্টিকোণের উপর বিশাল প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে, যেখানে আমাদের জনসংখ্যার বেশিরভাগই তরুণরা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলার সময় আমাদের সংবেদনশীল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ইচ্ছাকৃত হোক বা না হোক, এই ধরনের চিত্রায়ন ক্ষতিকারক"। তাঁর মতে, যখন বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিশেষভাবে সক্ষমদের মূল চরিত্র বানিয়ে বিজ্ঞাপন করে তখন তারা সৃজনশীলতার আড়ালে অসংবেদনশীলতাকেই স্বাভাবিক করে তোলে।
২০১৬ সালে, ফ্লিপকার্টের একটি বিজ্ঞাপনে শিশুদের গোর্খা হিসেবে দেখানো হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই গোর্খা সম্প্রদায়ের মানুষেরা ক্ষুব্ধ হন। তখন ফিল্পকার্টের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছিল। ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুজন দ্বাররক্ষী এক দম্পতিকে অনলাইনে অর্ডার না করার জন্য সতর্ক করার চেষ্টা করছেন। কারণ তাঁরা অনলাইন পোর্টালগুলিকে বিশ্বাস করতে পারেন না। দুই দ্বাররক্ষীর মধ্যে যিনি গোর্খা তিনি ভাদগাঁওলে টুপি এবং 'খুকরি' ব্যাজ, যা নেপালিদের পরিচয়ের প্রতীক তা পরেছিলেন।
এই নিয়ে গোর্খা ছাত্র সংগঠন (GYASA) দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল। জানানো হয়, "ফ্লিপকার্টের বিজ্ঞাপন গোর্খা সম্প্রদায়কে হাসির পাত্র বানিয়েছে এবং স্টিরিওটাইপ করেছে"। পরে ফ্লিপকার্ট বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেয় এবং কোম্পানিটি ক্ষমাও চায়। কিন্তু একটি খোলা চিঠিতে কোম্পানিটি গোর্খা সম্প্রদায়কে "যোগাযোগের রসবোধ উপভোগ করার" আহ্বান জানায়।
উল্লেখ্য, গত মাসেই , সুপ্রিম কোর্ট কৌতুকাভিনেতা সময় রায়না এবং আরও চারজন ইনফ্লুয়েন্সারেরকে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে অবমাননাকর রসিকতা করার অভিযোগে জনস্বার্থ মামলায় তলব করে। স্বাধীনতার অপব্যবহার করে মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা বিষয়টি আদালত কর্তৃক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ফ্লিপকার্টের এই বিজ্ঞাপনের কমেন্টে অনেকেই এটিকে "খারাপ রুচি" বলেছেন। অনেকে আবার এটিকে "আইকনিক" এবং "লিজেন্ডারি" বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে ফ্লিপকার্টের মতো জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ডের থেকে সংবেদনশীলতার অভাব হতাশাজনক। ফ্লিপকার্ট সহজ একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল- কম খরচে টাটকা শাকসবজি। কিন্তু যেভাবে এই বার্তাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো তা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। হাস্যরস এবং অসংবেদনশীলতার মধ্যে পার্থক্য আছে।