ঘরে ঘরে হাসি ফোটানো মানুষটির কণ্ঠ আজ স্তব্ধ; চিরবিদায় সতীশ শাহ
Satish Shah death: ২০০৪ সালে 'সারাভাই ভার্সেস সারাভাই' ধারাবাহিকের ইন্দ্রবদন সারাভাই চরিত্র দর্শকদের মনে এখনও জ্বলজ্বল করে। উচ্ছ্বাসে ভরা তাঁর অভিনয়, নিঃশব্দ তির্যক দৃষ্টিতে সামাজিক বাস্তবতাকে ছুঁয়ে যেত।
সুদীর্ঘ চার দশকের কর্মজীবন, একাধিক ছবি- একাধিক চরিত্র! যার কৌতূকে মশগুল হত আট থেকে আশি, সেই সতীশ শাহ আজ নিশ্চুপ। চিরনিদ্রায়। কিডনির সমস্যায় মাত্র ৭৪ এই ইতি টানল সতীশের জীবন। পড়ে রইল তাঁর চরিত্রেরা। নব্বইয়ের দশকে যাদের বেড়ে ওঠা, সেইসব আজকের মধ্যবয়স্ক গৃহস্থের 'ঘরের লোক' হয়ে উঠেছিলেন সতীশ। ফলে তাঁর মৃত্যু যেন আসমুদ্র হিমাচল ভারতীয়ের কাছে এক 'personal loss', অপূরণীয় ক্ষতি।
চলচ্চিত্রে সতীশের প্রথম পদার্পন, ১৯৭৮ সালে, ‘অরবিন্দ দেশাই কি আজীব দাস্তান’ এর হাত ধরে। ১৯৮৪ সালে, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’(১৯৮৩) ছবির মাধ্যমে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন সতীশ শাহ। তারপর একের পর এক ছবিতে তাঁর চরিত্রগুলির মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করতে থাকেন। এখনও সিনেপ্রেমীদের মনে গেঁথে রয়েছে নব্বইয়ের দশকের সেই চরিত্রগুলি। সূরজ বরজাত্যা থেকে ফারহা খান, রাকেশ রোশন— বলিউডের প্রায় সব তাবড় পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি।
সলমন খানের প্রথম ছবি ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’র সময় থেকে শুরু করে ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’— একাধিক ছবিতে উল্লেখযোগ্য চরিত্রে পর্দায় আসেন। এ ছাড়াও ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ ছবিতে হৃতিক রোশনের বাড়িওয়ালার চরিত্রে, ‘ম্যায় হুঁ না’ ছবিতে অধ্যাপকের চরিত্রে, সর্বত্রই নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন তিনি। ‘কাল হো না হো’ (২০০৩), ‘ওম শান্তি ওম’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’,-তেও তিনি তাঁর নিজস্বগুণে চরিত্রদের ফুটিয়ে তুলেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি সহঅভিনেতা হিসেবে ছিলেন অনন্য। তাঁর চরিত্রগুলির উপস্থিতিই ছবির আবহ পাল্টে দিতে পারত।
আরও পড়ুন - বিদায় দি মারিয়া! যে রূপকথা স্বপ্ন দেখাবে ফুটবলের হাজার প্রজন্মকে
১৯৮৪ সালে, ‘ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি’ দিয়ে ছোটপর্দায় যাত্রা শুরু। এরপর একের পর এক টেলিভিশন সিরিজ। সর্বত্রই তিনি অভিনয়গুণে চরিত্রদের কালজয়ী করে তুলেছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালে 'সারাভাই ভার্সেস সারাভাই' ধারাবাহিকের ইন্দ্রবদন সারাভাই চরিত্র দর্শকদের মনে এখনও জ্বলজ্বল করে। উচ্ছ্বাসে ভরা তাঁর অভিনয়, নিঃশব্দ তির্যক দৃষ্টিতে সামাজিক বাস্তবতাকে ছুঁয়ে যেত। সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখ, সেই রসিক ভঙ্গি এখনও দর্শকদের মন উৎফুল্ল করে দেয়।
'সারাভাই ভার্সেস সারাভাই' ধারাবাহিকে সতীশের সেই বিখ্যাত সংলাপ “ম্যায় মরদ হু”, রাতারাতি তাঁকে এক অনন্য পরিচিতি এনে দেয় , আজ তাঁর বিদায় লগ্নেও সেই একই সংলাপে মুখরিত চারিদিক। ২৫ জুন, ১৯৫১, মুম্বইতে বেড়ে ওঠা ছেলেটা হয়তো কখনও ভাবেনি আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী এত সিনেপ্রেমিদের মনে এতটা জয়াগা করে নিতে পারবে। বুঝেছিলেন পরে। কৃতজ্ঞ ছিলেন তাঁর ফ্যানেদের প্রতি। তাঁর ব্যবহারে, তাঁর কথাবার্তায় সে কথা প্রকাশ পেয়েছে বহুবার।
তিনি যে একজন তুখোড় অভিনেতা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার চেয়েও বেশি ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। এবং একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী। তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরের কোনো ঘটনাই তেমনভাবে পেজ থ্রি’র গসিপে কোনোদিন জায়গা পায়নি। ফলে একটা বৃহৎ সংখ্যক দশক সতীশকে আমৃত্যু চিনে এসেছেন স্রেফ একজন দক্ষ কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই। তবে এর বিপরীত মেরুতে, লাইমলাইটের অন্তরালে ‘জীবনসঙ্গী হিসেবে সতীশ’ মানুষটা ঠিক কেমন সে বিষয়টি বহু মানুষেরই অজানা।
সতীশ শাহের স্ত্রী মধু শাহ বহুদিন ধরেই অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত। স্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তাড়া করত সতীশকে। সেজন্যই আরও কিছুদিন বাঁচতে চেয়েছিলেন সতীশ। কিডনির সমস্যা তাঁর আগে থেকেই ছিল। ডায়ালিসিস চলছিল। চলতি বছরে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টও করান তিনি। তবে শেষ রক্ষা হলো কই…..সঙ্গী হারালেন মধু। সঙ্গীহারা হলেন সতীশও।

Whatsapp
