ফ্যামিলি ম্যান ৩: অ্যাকশন, আবেগ, বিশাল ক্যানভাস সবই আছে, নেই শুধু আগের ম্যাজিক
Family Man season 3 review: বিশ্বাসঘাতক গুপ্ত শত্রুদের মাঝে একজন প্রকাশ্য ভিলেন রুকমা। গল্পের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় চরিত্র। গল্পে 'ভিলেন' হলেও রুকমা ঘৃণা কুড়োয় না।
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিজন ৩— স্পাই ফ্যামিলি ম্যানের ' সিক্রেট মিশনে' যাওয়া, গিয়ে আক্রমণের মুখোমুখি হওয়া, মেন্টরকে হারানো এবং তারপর প্রতিশোধের চেষ্টা। এই নিয়েই গল্প এগোতে থাকে ফ্যামিলি ম্যানের এই সিজনের। বড়পর্দায় উত্তর-পূর্ব ভারতের অস্থিরতাকে সচরাচর তুলে ধরা হয় না। কিন্তু, রাজ অ্যান্ড ডি কের সিরিজ এবার অশান্ত মণিপুরের গল্প তুলে ধরেছে দর্শকের সামনে।
শ্রীকান্ত তিওয়ারি, TASC-এর সিক্রেট এজেন্ট, সিনিয়রের সঙ্গে যায় উত্তর-পূর্ব ভারতের অস্থিরতা দূর করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু শত্রুপক্ষ খবর পেয়ে, ছক কষে তাঁদের মেরে ফেলার। সেই হামলায় খুবই অদ্ভুত ভাবে বাকিদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হলেও, শ্রীকান্তের উপর গুলি চালানো হয় না। ভয়ানক আক্রমণ থেকে বেঁচে যান কেবল শ্রীকান্ত। তাই, সিদ্ধান্ত নেন মেন্টরের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার। কিন্তু, এই মারাত্মক হামলা থেকে একমাত্র শ্রীকান্ত বেঁচে ফেরায়, মূল সন্দেহভাজন তিনিই।
শ্রীকান্ত তিওয়ারি, আর পাঁচটা পুরোদস্তুর ফ্যামিলি ম্যানের মতোই। তাঁর নিজের প্রাণ গেলে পরোয়া নেই, কিন্তু পরিবারে আঁচ এলে, তা কিছুতেই তিনি মেনে নিতে পারেন না। পিতৃস্থানীয় ব্যক্তির হত্যার প্রতিশোধ নিতে শ্রীকান্ত নিজের পরিবারকে নিয়ে দৌড়তে থাকে। আর এই দৌড়নোর পথে ভাঙতে বসা দাম্পত্য জুড়তে শুরু করে, নিজের সন্তানদের সঙ্গে দূরত্বও কমতে শুরু করে। CIA, NIA-এর মাঝে ফ্যমিলি ম্যানের পরিবারের দৃশ্যগুলি বেশ স্বস্তিদায়ক। অ্যাকশনে ভরপুর সিরিজে ফুরফুরে হাওয়ার মতো 'কমিক রিলিফ' রূপে আসে বন্ধুদের সঙ্গে শ্রীকান্তের কথোপকথনগুলি, বিশেষত 'ফর্জি'-র বিজয় সেথুপথির কেমিও বেশ মজাদার।
আরও পড়ুন- নধরের ভেলা: গতিময়তার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ
ভারতে যে কোনো অংশই অস্থির হয়ে উঠলে, তাতে থাকে প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন, এই গল্প বারবার দেখতে পাই পর্দায়। এবং এক্ষেত্রে ভারত-পাক বৈরিতার গল্প প্রথম স্থান অধিকার করে। কিন্তু এখানে গল্প একটু আলাদা। এই গল্পে আসে চিনের ইন্ধন। কিন্তু শত্রু কেবল বাহ্যিক নেই, রয়েছে অভ্যন্তরীণ শত্রুও। এক নয় একাধিক। যেমন, খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বিশ্বাসঘাতক লুকিয়ে থাকে, ঠিক তেমনই, চর লুকিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার ভেতরেও।
এই বিশ্বাসঘাতক গুপ্ত শত্রুদের মাঝে একজন প্রকাশ্য ভিলেন রুকমা। গল্পের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় চরিত্র। গল্পে 'ভিলেন' হলেও রুকমা ঘৃণা কুড়োয় না। এই হার্ডকোর ভিলেনের 'কোর' ভালবাসায় পরিপূর্ণ। এই ভিলেন, নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসেছে একটি মেয়েকে।"ফ্যমিলি ম্যান নয় রুকমা", কিন্তু ফ্যমিলি শুরু করার কথা বলে, প্রেমিকার কথা শুনে। প্রেমিকা মারা গেলেও, তার ছেলেকে আগলে রাখতে শেখে রুকমা। এক গুলিতে সকলকে উড়িয়ে দেওয়া ভিলেন, একটি নিষ্পাপ অসহায় বাচ্চা ছেলের কাছে কিন্তু নিরাপদ আশ্রয়। আবার আরেক 'ফ্যমিলি ওম্যান নয়'(মীরা এসটন), এমন মেয়েও তার কাছে যেন পরিবারেরই একজন হয় ওঠে।

এই গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র 'ফ্যামিলি'। সিরিজে কারোর ভাঙতে বসা দাম্পত্যজীবন নতুন 'আঠা' খুঁজে পায়। তো কারোর ভাবী দাম্পত্যজীবন হারায়। কারোর জীবনে অপ্রত্যাশিত পুত্রের আগমন, তো কারোর জীবন থেকে পিতৃস্থানীয়ের বিদায়। গল্পের মধ্যে সকল ছোট ছোট ঘটনাই 'ফ্যামিলি'কে কেন্দ্র করে। ফ্যামিলি ম্যানের সিরিজে যে চরিত্ররা দাবি করে তারা 'ফ্যামিলি ম্যান' নয়, তাদের মধ্যেও যে দুর্দান্ত ফ্যমিলি ম্যান লুকিয়ে রয়েছে, সেই সন্ধানের গল্পই এটি।
অভিনয়ে সকলেই নিজ নিজ চরিত্রের সঙ্গে 'জাস্টিস' করেছেন। মনোজ বাজপেয়ী, প্রিয়মণি, শরীব হাশমি, নিমরিত কৌরের সঙ্গে বিশেষ নজর কাড়ে জয়দীপ আহলাওয়াতের অভিনয়। অভিনয়ে প্রশ্ন না থাকলেও, প্রশ্ন থেকে যায় গল্পের বুননে। গল্প বলার ধরনটি যেন বড় আলগা। বহু সুতোই ছেড়ে রাখা, যেগুলি জোড়ার চেষ্টাও ভীষণ ক্লিশে। গল্পে একাধিক সাবপ্লট জুড়তে গিয়ে, প্লটের খেই হারিয়ে গেছে। দর্শককে ধরে রাখার মতো টান টান উত্তেজনা থেকেও যেন নেই। মন্থর গতিতে চলে এই সিরিজ। সিরিজের ভিত্তি অ্যাকশন, বলেই যেন কয়েক জায়গায় জোর করেই ভায়োলেন্স আনা হয়েছে। সার্জিকাল স্ট্রাইকের চেষ্টা ভীষণ ক্লিশে। পরের দৃশ্য কী হতে চলেছে, টা যেন অনেকসময়ই অনুমেয়। ফলে তা যেন, দীর্ঘ ৪ বছরের অপেক্ষার পর ফ্যামিলি ম্যান সিরিজের এই তৃতীয় ভাগটি আর্থিকভাবে গোটা দলকে লাভ দিলেও দর্শকের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ।
Whatsapp
