রাজেশ খান্নার কারণে হাতি মেরে সাথীর সেটে মার খেতেন গাড়িচালক, প্রতিদিন! কেন?
Rajesh Khanna Haathi Mere Saathi: রাজেশ খান্না হচ্ছেন বিখ্যাত নায়ক। তিনি দেরি করলেও তাঁকে চটানো যাবে না। সকাল ৯ টার শিফট থাকলে আসতেন দুপুর ১২টায়।
নামে প্রেম, অথচ ভারতীয় সিনেমায় জটিল, তির্যক সব চরিত্রকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি যে বলিউডে নয়া এক 'খলনায়ক ঘরানা'র জন্ম হয়। খলনায়ক চরিত্রে প্রেম চোপড়া ছিলেন দুর্ধর্ষ! দীর্ঘ ৬০ বছরের অভিনয় জীবনে ৩৮০ টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন প্রেম। প্রেম চোপড়া মানেই বাঁকানো ভ্রূ, একপেশে হাসি এবং দর্শকদের মধ্যে খলনায়কের প্রতি বিরাগকে নিখুঁত ফুটিয়ে তোলা। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে ততটাই মৃদুভাষী ছিলেন প্রেম। বরং জানলে অবাক হতে হয়, তৎকালীন 'নায়ক'দের কারণেই চরম ভুক্তভোগী হতে হয়েছে মানুষদের। ৮৭ বছর বয়সী এই অভিনেতা সেকালের তাবড় সব নায়ক অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র এবং রাকেশ রোশনের সঙ্গে কাজ করেছেন। এই কাজ করতে গিয়েই একবার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ঘটেছিল তাঁর। সেকালের 'হিরো' রাজেশ খান্নার কারণে সেটের মধ্যেই মারধর করা হতো এক গাড়ি চালককে, নিয়মিত! রাজেশ খান্নার চোখের সামনেই।
লেহরেঁর একটি সাক্ষাত্কারে, প্রেম চোপড়া জানিয়েছেন রাজেশ খান্না তখন সিনেমার মধ্যগগনে। সিনেমার পর্দায় তিনি 'হিরো' হলেও একটি ভীষণ বাজে দোষ ছিল তাঁর। সিনেমার সেটে হামেশাই দেরি করে আসতেন তিনি। এবং তাঁর এই নিত্য দেরি হওয়ার রাগ গিয়ে পড়ত অন্য মানুষের উপর। বলা ভালো, রাজেশ খান্নার জন্য নির্ধারিত গাড়ি চালকের উপর। রাজেশ খান্না কাজের ক্ষেত্রে ছিলেন এক্কেবারে খাঁটি। তাঁর একটিমাত্র এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল তিনি দেরি করে আসতেন। কিন্তু রাজেশ খান্না হচ্ছেন বিখ্যাত নায়ক। তিনি দেরি করলেও তাঁকে চটানো যাবে না। সকাল ৯ টার শিফট থাকলে আসতেন দুপুর ১২টায়।
আরও পড়ুন- সনিয়ার কন্যাদান করেন হরিবংশ রাই বচ্চন! কীভাবে নষ্ট হল অমিতাভ-রাজীব গান্ধীর বন্ধুত্ব?
তখন মাদ্রাজে হাতি মেরে সাথী নামের চলচ্চিত্রের শ্যুটিং চলছে। ছবিটির প্রযোজক চিন্নাপ্পা থেভার ছিলেন কঠোর মানুষ। ৯ টায় শিফট হলে সেটে আসার জন্য তিনি গাড়ি পাঠিয়ে দিতেন সকাল ৬ টায়। রাজেশ খান্নাকে নিতে যেতে ভোর ৬টায় গাড়ি চালককে পাঠাতেন তিনি। কিন্তু ৬ টায় পাঠালেই বা কী? হিরো তো আসবেন না! রাজেশ খান্না আসতেন ওই বেলা ১১ বা ১২টা নাগাদ। বড় মাপের নায়ক বলেই চিন্নাপ্পা থেভার একজন বিশেষ গাড়ি চালকেইক নিয়োগ করেছিলেন। যে মুহূর্তে রাজেশ খান্না সেটে ঢুকতেন, গাড়ি থেকে তিনি পা নামানো মাত্রই চিন্নাপ্পা থেভার গাড়ি চালককে ধরে মারতেন এবং সঙ্গে চলত অকথ্য গালি। অথচ গাড়িচালক প্রতিদিন ঠিক সময়েই গিয়েই হাঁক দিতেন রাজেশ খান্নাকে। অথচ হিরো সেটে দেরি করে আসার সমস্ত ক্ষোভ-বিরক্তি গিয়ে পড়ত বেচারা চালকের উপরে।
চিন্নাপ্পা থেভার মারতে মারতে চিৎকার করে বলতেন, "টাকা পাস না নাকি? রোজ রোজ এত দেরি করিস কেন?” রাজেশ খান্নার সামনে এই ঘটনা রোজ ঘটতে থাকে। শেষমেশ একদিন তিনি বুঝতে পারেন তাঁর দোষের ভাগীদার হচ্ছেন নিরীহ এক চালক। তারপর থেকেই নিয়মিত হয়ে যান তিনি। সেই সময় হাতি মেরে সাথী সিনেমাটি ব্যাপক হিট হয়।
আরও পড়ুন- নক্ষত্রের অবসর নেই, খুচরো জনতার খড়কুটো আজীবন শাহরুখই
রাজেশ খান্না এবং প্রেম চোপড়া কাটি পতং, প্রেম নগর এবং ডোলি দো রাস্তে-র মতো ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু হাতি মেরে সাথী সিনেমাটি রাজে খান্নার ক্ষেত্রে ছিল বড় এক পাওয়া! এই সিনেমাটি কীভাবে তৈরি হলো সে প্রসঙ্গে জাভেদ আখতার একবার জানিয়েছিলেন, একদিন রাজেশ খান্না সেলিমসাহেবের কাছে গিয়ে বলেন মিস্টার থেভার তাঁকে বিশাল অর্থমূল্যের সিনেমায় সই করতে বলেছেন। এই টাকাটা পেলে তিনি তাঁর বাংলো আশীর্বাদের জন্য পুরো টাকাটাই মিটিয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু সিনেমাটি 'দেইভা চেয়াল' নামের সিনেমার রিমেক এবং সেই সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট মোটেই ভালো না। রাজেশ খান্না বলেন, সেলিম জাভেদের জুটি যদি এই স্ক্রিপ্ট ঠিকঠাক দাঁড় করাতে পারেন, তবে তাঁর লাভ তো বটেই সেলিম জাভেদেরও টাকা ও খ্যাতির ত্রুটি রাখবেন না। "আমি এত ভয়ানক স্ক্রিপ্টে কাজ করতে পারব না এবং আমি সিনেমাটাও ছেড়ে দিতে পারব না কারণ আমার টাকার প্রয়োজন!” বলেছিলেন রাজেশ।
১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া হাতি মেরে সাথী ছিল সে বছরের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী ভারতীয় চলচ্চিত্র। ভারতে এর মোট আয় ছিল ৩৫ মিলিয়ন। শুধু ভারতে নয়, এই ছবিটি সোভিয়েত ইউনিয়নেও ছিল ব্লকবাস্টার! ১৯৭৪ সালে হাতি মেরে সাথীর ৩৪.৮ মিলিয়ন টিকিট বিক্রি হয়েছিল সেই দেশে।