৭০ টুকরো স্ত্রী, ৩০০ টুকরো প্রেমিক! প্রেমের এমন নৃশংস পরিণতি বারবার দেখেছে দেশ
Sraddha Walkar Murder Case: সম্পর্কে টানাপোড়েন, সম্পর্ক বাঁচানোর অজুহাতে খুন হতে হয়েছিল একাধিককে। রইল কয়েকটি রক্তাক্ত নিদর্শন...
অন্ধকার! আক্রমণ! খুন! রক্ত! ভয়ংকর এক-একটি ঘটনার কথা বিনোদুনিয়ায় শোরগোল ফেলে রোজ। বর্তমান সময় আর সমাজের প্রেক্ষিতে কখনও বিদেশি 'ডেক্সেট' অথবা বাংলা ভাষার 'পুনর্জন্ম'! করোনা-পরবর্তী সময়ে ওয়েব সিরিজের বাড়বাড়ন্ত ঝড় তোলে বারবার!
কিন্তু সেই কাহিনির প্রভাবই যদি নেমে আসে আপনার-আমার বসবাসের এই সত্য সমাজে? লাভ জিহাদ থেকে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব। প্রেমে বিশ্বাসঘাতকতা থেকে খুন! একের পর এক জল্পনা, বির্তক আর কথকথার জালে দেশ উত্তাল করেছে সিনেমার একের পর এক খুন! রক্তাক্ত হয়েছে ইতিহাস!
এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন নিশ্চিত কোনও ঘটনার কথা বলছি? বায়ুদূষণে বিধ্বস্ত দিল্লি কাঁপিয়ে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রে এখন শ্রদ্ধা ওয়ালকর খুনের ঘটনা।
আরও পড়ুন: ক্রাইম থ্রিলারে ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েই প্রেমিকাকে ৩৫ টুকরো! কী আছে এই ওয়েব সিরিজে
কিন্তু এই ঘটনা তো নামমাত্র! জানেন কি কখনও ৩০০ খণ্ড আবার কখনও গলা কাটা ব্যাগবন্দি মৃতদেহ। একের পর এক খুনের ঘটনা বারবার কাঁপিয়ে দিয়েছে এই দেশকে। সময় গিয়েছে, ফের নতুন কিছু ঘটেছে। কিন্তু আজও ভারতজুড়ে রহস্যের কিছু খুন দিয়ে গিয়েছে চিন্তা, বাড়িয়ে রেখে গিয়েছে এক নিকষ কালো অন্ধকারের দিননামচা। আমরা সেই ঘটনার বিস্তারে যাব, কিন্তু তার আগে দেখে নেওয়া যাক, কেন শিরোনামে শ্রদ্ধা (Shraddha Walker)।
প্রায় ৮ মাস। ২৪৪ দিন পূর্ণ হতে আর মাত্র বাকি ৩ দিন। আর কয়েক মাস পরেই এক বছর পূরণ করে ফেলতেন আফতাব আমিন পুনাওয়ালা (Aftab Ameen Poonawala)! ভারতের আলোচিত এই খুনির ২৪১ দিন ধরে ঘটানো কাণ্ড তাজ্জব করেছে গোয়েন্দাদের। অবাক হয়েছে বিশ্বও।
'খুনি আফতাব'
১৮ মে, ২০২২। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে শিকার করা তথ্যে আফতাব জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই তাঁর সহবাসের সঙ্গিনী শ্রদ্ধার সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল। এদিন সেই অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। তারপরেই খুন হন শ্রদ্ধা।
ভালবাসার 'খণ্ড'যাপন
প্রেমিকাকে মেরে ফেলেছেন যখন বুঝতে পারছেন। ঠিক তখনই নিজেকে পরিবেশকর্মী বলে দাবি করা আফতাব নেন অন্য উপায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বলা হচ্ছে, এরপর দোকানে যান শ্রদ্ধার প্রেমিক আফতাব আমিন। কেনেন ছুরি। সেই সঙ্গে একাধিক প্লাস্টিকের ব্যাগ। সঙ্গে সুগন্ধি, দুর্গন্ধ দূর করার কীটনাশক।
প্রেমিকার 'দেহলুপ্তি'
দক্ষিণ দিল্লির পাহাড়পুরী এলাকার ফ্ল্যাটে পৌঁছেই তড়িঘড়ি ওই ছুরি দিয়ে খণ্ড করে প্রেমিকার দেহ! ৩৫টি টুকরো করে প্লাস্টিকে ভরে নেয় শ্রদ্ধার দেহ-টুকরো। এরপর ঘরে থাকা ফ্রিজে রাখে সেই ব্যাগ। কিন্তু জায়গার অভাব! কেনে নতুন ফ্রিজ। সেখানে জায়গা পায় একদা ভালোবাসার মানুষের নিথর দেহের টুকরো।
জঙ্গলে দেহ...
প্রত্যেকদিন গভীররাতে সেই দেহ-টুকরো ভর্তি এক একটি ব্যাগ মেহেরলি জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসতে থাকেন আফতাব। জানা যায়, এই অবস্থায় দাঁড়িয়েও ওই ফ্ল্যাটে যৌনতায় মত্ত হন তিনি।
'শ্রদ্ধা'-রত আফতাব
তখনও করোনা আসেনি। ২৮ বছরের সুদর্শন আফতাবের সঙ্গে পরিচয় হল ২৬-এর শ্রদ্ধার। ক্রমশ গাঢ় হল সম্পর্ক। একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন অল্প সময়েই।
পারিবারিক বিবাদ
হিন্দু-মুসলমান। দুই ধর্মের সম্পর্ক মানেনি কোনও পরিবার। তবুও ভালোবাসার টানে একসঙ্গে ঘর বাঁধেন দু'জনে। মুম্বই থেকে চলে আসেন দিল্লি। একই ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন শ্রদ্ধা আর আফতাব।
কিন্তু পরিণতি! ভালবাসা এবং তার চরম পরিণতির এই ভয়ানক ফলাফলের উদাহরণ তো রয়েছেই। এর সঙ্গেই সম্পর্কে টানাপোড়েন, সম্পর্ক বাঁচানোর অজুহাতে খুন হতে হয়েছিল একাধিককে। রইল কয়েকটি রক্তাক্ত নিদর্শন...
অনুপমা-খুনে ৭০ টুকরো
২০১০ সাল। ফেব্রুয়ারি মাস। দেহরাদুনের কনকনে ঠান্ডায় সেদিন উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছিল একটি ঘটনা। ১১ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে হাড়হিম করা ঘটনা ঘটান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ গুলাতি (Rajesh Gulati)। সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয় অশান্তি। স্ত্রী অনুপমাকে দেওয়ালে ধাক্কা দেন রাজেশ। জ্ঞান হারান অনুপমা। মুহূর্তেই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতে স্ত্রীর দেহকে ৭০ টুকরো করে ফেলেন রাজেশ। ৩৭ বছরের স্ত্রীকে খুন করে তাঁর দেহের টুকরো শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেন। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে দেশজুড়ে।
আফতাব খুন করেছেন শ্রদ্ধাকে। প্রশ্ন উঠছে লাভ জিহাদ আবার হিন্দু-মুসলমান কাণ্ড নিয়েও। কিন্তু কয়েকমাস আগেই এক হিন্দু প্রেমিকার হাতে খুন হয়েছিলেন মুসলমান যুবক! লভ জিহাদ বলছি না! তবে এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে দেশজুড়ে।
গলাকাটা-ফিরোজ
অগাস্ট, ২০২২। শনিবারের এক সন্ধ্যায় ৪ বছর প্রেমের পর বিয়ে করতে অস্বীকার করেন প্রেমিক ফিরোজ (Firoz)। আর সেই সূত্রেই শুরু হয় চরম অশান্তি। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের (Ghaziabad Murder) ফ্ল্যাটে ফিরোজকে খুন করেন প্রেমিকা প্রীতি! গলা কেটে খুন করা হয় ওই যুবককে। পরে দেহ লোপাটে তৎপর হয়ে ওঠেন খুনি! কয়েকটি টুকরো করে ফেলা হয় দেহ। ব্যাগে ভরে পাচারের চেষ্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে ধরে ফেলে পুলিশ। সেই ঘটনায় অপেশাদার খুনির নিজের ফাঁদেই সুবিধা হয়েছিল পুলিশের।
পরকীয়ায় ৩০০ টুকরো
মে, ২০০৮। মুম্বইয়ের একটি টেলিভিশনে কর্মরত ২৬ বছরের যুবক নীরজ গ্রোভারের খুন তোলপাড় করে বিশ্ব। অভিনেত্রী মারিয়া সুসেইরাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নীরজের (Neeraj Grover)। বিবাহিত সুসেইরাজের (Maria Susairaj) স্বামী লেফট্যানেন্ট জেরমি ম্যাথিউ, ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পান দু'জনকে। সঙ্গে সঙ্গেই খুন করা হয় নীরজকে। সদ্য ঘটা শ্রদ্ধা-খুনের মতোই, নতুন ব্যাগ কিনে নীরজের দেহ টুকরো করে ভরা হয় তাতে। প্রমাণ লোপাটে সুগন্ধি ব্যবহার করে ম্যাথিউ। স্ত্রীর সঙ্গে মিলে ওই দেহ প্রায় ৩০০ টুকরো করেন অপরাধী। দেহ লোপাটের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই পুলিশের জালে পড়েন ম্যাথিউ এবং তার স্ত্রী।
এছাড়াও যে খুনের ঘটনা ভয় ধরায় আজও
শিনা বোরা। এপ্রিল, ২০১২। নিজের মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় (Indrani Mukherjee Peter Mukherjee) এবং তাঁর প্রেমিক পিটারের যোগসাজশে খুন হন শিনা। বহুদিন চেপে রাখার পরে প্রকাশ্যে আসে এই খবর। মায়ের চক্রান্তে নৃশংস এই খুন ফের প্রশ্ন তোলে।
অরুণ কুমার টিক্কু (Arun Kumar Tikku Murder)। দিল্লির বিখ্যাত এই ব্যবসায়ীকে খুন করা হয় অভিনব কায়দায়। মডেল সিমরান সুদ (Simran Sood) এবং তাঁর স্বামী বিজয় পালান্দে, কয়েকজনের সাহায্যে খুন করেন ব্যবসায়ীকে। নিজেদের মধুচক্র (Sex Trap) এবং কালো টাকার করবার জেনে যাওয়ায় একই কায়দায় এই জুটি খুন করে প্রযোজক করণকুমার কক্করকে (Karan Kumar Kakkar)। দুই ক্ষেত্রেই ছিল যৌনতার হাতছানি। আর সেখান থেকেই বন্ধুত্বের সূত্রে খুন! সিমরান নিজের স্বামীকে ভাই বলে পরিচয় দিতেন। স্বামী ভাই হয়ে বোন অর্থাৎ স্ত্রীকে দিয়ে চালাতেন মধুচক্র।
নিঠারি হত্যাকাণ্ড (Nithari Murder Case)। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাস তোলপাড় হয় এই ঘটনায়। পরিচারক সুরেন্দ্র কলি এবং মালিক মনিন্দর সিং মিলে একের পর এক নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং নৃশংস খুন করে। কমপক্ষে ১৫ জনকে খুন করা হয়। দেহ লোপাট করতে নানা ফন্দি আঁটেন দুই অভিযুক্ত।
এছাড়া একাধিক খুনের ঘটনা। নৃশংসতার নিদর্শন দেখেছে দেশ। প্রতি মুহূর্তে শিউরে উঠছে বিশ্ব। এত আইন, শাসন এবং শাস্তির পরেও আজও বিবর্তিত হয় ভয়ানক মৃত্যুর ইতিহাস। যা আফতাবের কাজে ফের তুলে দিল প্রশ্ন।