চাকরি থাকবে তো? কপালে ভাঁজ ভারতের আইটি জগতের, কীসের বিপদের ইঙ্গিত সমীক্ষায়
Layoff job is IT industry : কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। উৎসব, আনন্দ, আলোর রোশনাইয়ের মধ্যেও মনে হচ্ছে বারবার, চাকরিটা থাকবে তো?
শীতের আমেজ আর উৎসবের দিন চলেই এল প্রায়। ক্যাফে, রেস্তোরাঁ থেকে বহুজাতিক আইটি সংস্থা – প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গা সাজিয়ে নিয়েছে নতুন করে। সব জায়গায় নতুন উৎসবের গন্ধ। কিন্তু অফিসের কিউবিকলে কান পাতলেই শোনা যাবে দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ। ছোট বয়সেই কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। উৎসব, আনন্দ, আলোর রোশনাইয়ের মধ্যেও মনে হচ্ছে বারবার, চাকরিটা থাকবে তো?
নভেম্বর থেকেই বিশ্ব জুড়ে প্রথম সারির আইটি প্রতিষ্ঠানগুলি কর্মী ছাঁটাই শুরু করে দিয়েছে। প্রথমে টুইটার, তারপর অ্যামাজন, মেটা সহ আরও বেশকিছু প্রথম সারির আইটি কোম্পানিগুলি এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দিনের দিন চাকরি যাচ্ছে মানুষের। আমেরিকার এমন পরিস্থিতির ছাপ পড়েছে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও। ছাঁটাইয়ের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেশের আইটি কর্মীরা যে যথেষ্ট চিন্তিত, কাজেও যে তার ছাপ পড়ছে, সাম্প্রতিক সমীক্ষাই তার প্রমাণ। জব পোর্টাল ইনডিডের সেই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্তত ৬৫ শতাংশ কর্মী এই মুহূর্তে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে তাঁদের চাকরিও চলে যেতে পারে।
সমীক্ষা বলছে, বিগত দু-এক মাস ধরেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ আরও সহজ করে বললে, ১০ জনের মধ্যে ছ’জন ভারতীয় আইটি কর্মীই এই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বিশেষ করে যারা নতুন নতুন কাজে ঢুকেছেন তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। কিন্তু কেন এমন প্রবণতা? এর ফলে কী হচ্ছে? সাম্প্রতিক সময় কর্মী ছাঁটাই নিয়ে নেট দুনিয়া উত্তাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একের পো এক আইটি ফার্ম নিজেদের বাজেট বাঁচানোর জন্য ছাঁটাই অভিযান শুরু করেছে। সেই অভিযান ২০২৩-এও চলতে পারে। অ্যামাজনের মতো বেশকিছু জায়গা নতুন করে কর্মী নিয়োগ করতে চাইছে না এখনই। কারণ, এই মুহূর্তে আমেরিকার অর্থনীতি ভালো নয়। ক্রিসমাস, বর্ষবরণের বাজারে আগে যে পরিমাণ মুনাফা হতো, এই বছর তার পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে।
ঠিক এই কারণেই অ্যামাজন নিজের দুটো উদ্যোগ ভারতে বন্ধ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কর্মী যে ছাঁটাই হবে না, সেই নিশ্চয়তা এখনও দিতে পারেনি মার্কেট। আর সেই ব্যাপারটির প্রভাবই বাজারে এসে পড়ছে। ইনডিডের ওই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সিংহভাগ কর্মীদের কাজ করার মন নেই। বদলে রয়েছে দুশ্চিন্তা। ফলে পুরোপুরি কাজে মন বসাতে পারছেন না তাঁরা। সমীক্ষা আরও বলছে, ৫৭ শতাংশ আইটি প্রফেশনাল নিজেদের কাজে আগের মতো উৎসাহ পাচ্ছেন না। অর্ধেকেরও বেশি কর্মী অন্য চাকরির সন্ধানে ঘুরছেন।
তাহলে কর্মীরা কী চান? নিউ নর্মাল পরবর্তী পৃথিবীতে এই প্রশ্নটিই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কর্মী থেকে বিজনেস গুরু – প্রত্যেকের উত্তর একটাই। মানসিক স্বাস্থ্য। যারা অন্য চাকরি খুঁজছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৩ শতাংশ এমন কাজের সন্ধান করছেন যেখানে আনন্দ পাওয়া যাবে। মনের সুখে কাজ করা যাবে। ১৯ শতাংশের লক্ষ্য ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের একটা ব্যালেন্স।
ইনডিডের সেলস হেড শশী কুমার জানাচ্ছেন, ২০২৩ সালে সমস্ত কর্মীর মূল লক্ষ্য একটাই। একটা সুস্থির, সুন্দর মানসিক পরিস্থিতি। নিজেদের মানসিক সাস্থ্য ঠিক রেখে কাজ করলে সেই কাজও ভালো হয়। প্রোডাক্টিভিটিও বাড়ে। এই জায়গাতেই ব্যাঘাত ঘটছে। চাকরি চলে যাওয়ার চিন্তায় মানসিক স্বাস্থ্য বিগড়ে যাচ্ছে। ফলে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে কাজের জগতেরই। তবে ২০২৩ সালে হয়তো পরিস্থিতি বদল হবে, আশা রাখছে তথ্যপ্রযুক্তি জগত।