মুক্তমনা বলেই বাতিল করতে হলো জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান?

Javed Akhtar: জাভেদ আখতার দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে জানিয়ে আসছেন যে তিনি ধর্মাচরণে বিশ্বাসী নন, তিনি নাস্তিক এবং মানবতাবাদী। তাঁর এই অবস্থানই কট্টর সংগঠনগুলির চোখে ‘আল্লা-বিরোধী’ বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।

বাতিল পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমির চারদিনব্যাপী সাহিত্যসভা ও ‘মুশায়রা’। রবিবার এই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসলামি কট্টর সংগঠনগুলির প্রবল চাপে অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে বাধ্য হয় উর্দু অ্যাকাডেমি। ‘হিন্দি সিনেমায় উর্দু’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার প্রধান অতিথি ঘোষণার পরই প্রতিবাদে সরব হয় কলকাতা শাখার জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ ও ওয়াহায়িঁ ফাউন্ডেশন। তাদের অভিযোগ, আখতার আল্লা ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন, নিজেকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দেন। তাই তাঁকে কলকাতায় প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।

এমনকি হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, জাভেদ আখতার অনুষ্ঠানে এলে ২০০৭ সালে তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে যে ধরনের বিক্ষোভ হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হবে আখতারের ক্ষেত্রেও।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ পাকিস্তান নৈকট্য ভারতের জন্যে কেন দুশ্চিন্তার?

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে, এই আশঙ্কায় উর্দু অ্যাকাডেমি অনুষ্ঠান বাতিলের ঘোষণা করে। সম্পাদক নুজরত জৈনাব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অনিবার্য কারণবশত অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হচ্ছে।” তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা এড়িয়ে যান তিনি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে রাজ্য সরকারও কোনওরকম সংঘাত এড়াতে চেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন স্পষ্টতই চাইছে না, ভোটের আগে কট্টর গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক।

নিজেকে সংস্কৃতিবান মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিলেও জাভেদ আখতার দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে জানিয়ে আসছেন যে তিনি ধর্মাচরণে বিশ্বাসী নন, তিনি নাস্তিক এবং মানবতাবাদী। তাঁর এই অবস্থানই কট্টর সংগঠনগুলির চোখে ‘আল্লা-বিরোধী’ বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। 

আসানসোল সিভিল রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বাতী ঘোষ এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পেরেছি যে কবি-গীতিকার ও চিন্তাবিদ জাভেদ আখতারের এক পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল (মতান্তরে স্থগিত) করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত উর্দু আকাদেমি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এই বাতিলের কারণ দুটি মুসলিম সংগঠনের বিরোধিতা। জাভেদ আখতারের প্রোগ্রামের বিরোধিতার কারণ কবি নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেন। আমরা মনে করি মৌলবাদী শক্তির চাপে সরকারের এই মাথা নত করা ধিক্কারযোগ্য। মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা রেখে আমরা বলতে চাই সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশে মুক্তমনা অধ্যাপক, গায়ক, কবি, কমেডিয়ানের অনুষ্ঠানকে বাতিল করতে বাধ্য করেছে হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় আমরা পূর্বেও সরব হয়েছি,সেই একই যুক্তিবোধে প্রাণিত হয়ে মুসলিম সংগঠনের নামে এই মৌলবাদী হস্তক্ষেপের আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা চাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোন ধরণের মৌলবাদকে প্রশ্রয় না দিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতার পতাকা তুলে ধরে কবি জাভেদ আখতারকে যথাযোগ্য মর্যাদায় কলকাতায় এনে প্রোগ্রামটি করার ব্যবস্থা করুক।”

ফলে পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমির বহু পরিকল্পিত আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। এই বিতর্ক আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল বাংলার সংস্কৃতি অঙ্গন কি ক্রমশ ধর্মীয় চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে?

 

More Articles