তিন মাস ধরে বন্ধ বেতন, অনশনে বাগরাকোট চা বাগানের শ্রমিকরা
Bagrakot Tea Garden: ১৪০০ শ্রমিকের বেতন, পিএফ, গ্র্যাচুয়িটি মিলে প্রায় ২০-২২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে খবর।
তিন মাস ধরে বন্ধ বেতন। অনশনে জলপাইগুড়ির বাগরাকোট চা বাগানের শ্রমিকরা। ১৭ নভেম্বর থেকে কাজ বন্ধ করেন শ্রমিকরা। ১৮ নভেম্বর বেতন মিটিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠিও দেন অ্যাডিশনাল লেবার কমিশনে। ১৪০০ শ্রমিকের বেতন, পিএফ, গ্র্যাচুয়িটি মিলে প্রায় ২০-২২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে খবর। অভিযোগের আঙুল সম্মেলন বেভারেজেস টি অ্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির দিকে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চালানো হচ্ছে এই চা বাগান। ৪০ শতাংশ শ্রমিকের পিএফ নেই। ৬০ শতাংশ শ্রমিকের পিএফ-এর টাকা কাটলেও, ২০২২ থেকে পিএফ-এর টাকা জমা করছে না কোম্পানি। পিএফ কমিশনেও ডেপুটেশন জমা দেন শ্রমিকরা। কিন্তু পিএফ কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
অনশনরত পবন প্রধান বলেন, কাজের কোনো টুলস দেওয়া হয়না, ভাঙা ঘর, জল নেই, হাসপাতাল-ডাক্তার-অ্যাম্বুলেন্স কিছু নেই। একপ্রকার না খেয়ে আছি। দিনে আড়াইশো টাকা আয়, পিএফ কেটে হাতে ২২০ টাকা পাই। সেটাও যদি সময়ে না পাই কী করে চলবে আমাদের?
আরও পড়ুন- “আমাদের নাম কি বাদ পড়বে?”: এসআইআর আতঙ্কে উত্তরবঙ্গের রাজবংশীরা
সরকার মালিকপক্ষকে সুরক্ষাকবচ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও সন্দেহপ্রকাশ করেন তিনি। “আমরা এতদিন ধরে আন্দোলন করছি, কিন্তু কেউ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। আমাদের বিধায়ক (মাল বিধানসভা) অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী একদিনও খোঁজ নিতে আসেননি। মহিলারা অনশনে আছেন, অথচ পুলিশ পেট্রোলিংও নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করেন পবন প্রধান।

অনশনে বাগরাকোট চা বাগানের শ্রমিকরা
আন্দোলনের ১৩ দিন পর, ৩ ডিসেম্বর অ্যাডিশনাল লেবার কমিশন শিলিগুড়ির দাগাপুর শ্রমিক ভবনে এক বৈঠকের ব্যবস্থা করে। সেখানে মালিকপক্ষ কোম্পানির লস হয়েছে, এই কারণ দেখিয়ে মাত্র ১২ দিনের বেতন দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকদের বক্তব্য, আমরা এই কোম্পানিকে অনেক প্রফিট দিয়েছি, এখন লস হয়েছে বললে তো আমরা শুনবো না। তাঁদের দাবি, তাঁদের সম্পূর্ণ বেতন মিটিয়ে দিতে হবে। তারই সঙ্গে পিএফ, গ্র্যাচুয়িটি-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানও চাইছেন তাঁরা।
উত্তরবঙ্গের মেরুদণ্ড হলো চা শিল্প। যার উপর নির্ভর করে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু বাস্তবচিত্র বলছে পরিস্থিতি সংকটজনক। চা শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা প্রায় স্তব্ধ। বন্ধ চা বাগান, চা পাতা তুলে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন শ্রমিকরা। ২০১৪ সালে চা বাগানেই খুন হন সোনালী চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা। তারপর থেকেই এই বাগানটি ধুঁকছিল। পরে ঝুনঝুনওয়ালা-র স্ত্রী-র মালিকানায় বাগানটি ফের চালু হলেও, বর্তমানে সোনালী চা বাগান বন্ধ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই ১২ এপ্রিল শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ঘোষণা করেন যে, তিন মাস বাগান বন্ধ রাখলে কিংবা চা বাগানের শ্রমিকদের বেতন, পিএফ-সহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে মালিকপক্ষের লিজ বাতিল করবে রাজ্য সরকার। তাহলে বাগরাকোট চা বাগানের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাগরাকোট চা বাগানের শ্রমিকদের অভিযোগ কি তবে সঠিক? সরকার কি মালিকপক্ষকে রক্ষা করতে চাইছে?

Whatsapp
