মঙ্গলে কি প্রাণ ছিল? বিজ্ঞানীরা সামনে আনলেন যে তথ্য
NASA Found Signs of Life on Mars: মঙ্গলের কথা মাথায় এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে খটখটে লালচে এক মরুভূমির ছবি। সেই কারণেই আমরা, নীলগ্রহের বাসিন্দারা, একে বলি লাল গ্রহ। আর সেইখানেই কি তবে প্রাণের সন্ধান?
গত বছর অগাস্ট মাসে ‘লিকুইড ওয়াটার ইন দ্য মার্টিয়ান মিড-ক্রাস্ট’ শিরোনামে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয় প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS) নামক বিখ্যাত জার্নালে। হাজার খানেকেরও বেশি মঙ্গলের ভূকম্পন বিশ্লেষণ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন, মঙ্গলপৃষ্ঠের প্রায় দশ থেকে কুড়ি কিমি নীচে রয়েছে বিশাল এক জলভাণ্ডার। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই জলভাণ্ডার দিয়ে একটি মহাসাগর তৈরি করা সম্ভব।
মঙ্গল গ্রহে জলের সন্ধান বিজ্ঞানীরা করে আসছেন বহুদিন ধরেই। জল মিললেই প্রাণ স্পন্দনের হদিশ পাওয়া যাবে, এমন নয়, কিন্তু জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জল। সম্প্রতি, ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল নেচার-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন— নাসার পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের সংগৃহীত ‘চেয়াভা ফলস’ নামক পাথরের নমুনায় জীবনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তীরের মতো আকৃতির দাগযুক্ত প্রায় ৬ বর্গফুটের এই পাথরটি এমন এক জায়গায় (জেজেরো গর্তে) আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে আগে নদী বইতো।
মঙ্গলের কথা মাথায় এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে খটখটে লালচে এক মরুভূমির ছবি। সেই কারণেই আমরা, নীলগ্রহের বাসিন্দারা, একে বলি লাল গ্রহ। আর সেইখানেই কি তবে প্রাণের সন্ধান?
আরও পড়ুন
মেঘ পাতলা করা, সূর্যরশ্মি আটকে দেওয়ার নামে যে বিপুল ক্ষতি করছেন জিও-ইঞ্জিনিয়াররা
বিজ্ঞানীরা রোভারের পাওয়া ওই পাথর থেকে ছোট ছোট নমুনা সংগ্রহ করে গত এক বছর ধরে পর্যালোচনা করেছেন। তাঁরা সেই নমুনার নাম দিয়েছেন ‘স্যাফায়ার ক্যানিয়ন’। প্রাথমিক বিশ্লেষণে তাঁদের দাবি, এই পাথরটি জৈব যৌগে সমৃদ্ধ। কী কী মিলেছে তার মধ্যে? এতে পাওয়া গেছে ভিভিয়ানাইট নামের এক ধরনের লোহার ফসফেট— যা পৃথিবীতে পচনশীল জৈব পদার্থের কাছাকাছি খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া মিলেছে গ্রেইজাইট, যা লোহার সালফাইড— বিশেষ কিছু অণুজীব তৈরি করতে দরকার হয়। সাধারণত পৃথিবীতে এই মিশ্রণকে সম্ভাব্য জীবনের ছাপ হিসেবে ধরা হয়।

Close up view ‘চেয়াভা ফলস’ ( সূত্র: NASA)
শুধু তাই নয়, পাথরের ভেতর দিয়ে যে একসময় জলপ্রবাহ হত, তারও প্রমাণ মিলেছে। চেয়াভা ফলসের গায়ে লম্বালম্বি দাগ দেখা গেছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই দাগগুলির পিছনে প্রাচীন অণুজীব-সম্পর্কিত কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া থাকতে পারে। আগে তাঁদের ধারণা ছিল— প্রাণের চিহ্ন যদি থাকে, তা শুধু প্রাচীন শিলাগুলিতেই মিলবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই চিহ্নগুলো মিশনের সবচেয়ে নবীন শিলায় পাওয়া গেছে। তাই মঙ্গলে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে তাঁরা আরও আশাবাদী।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন, এই দাগ ও খনিজ পদার্থ আসলেই অণুজীবের দ্বারা সৃষ্ট কিনা। কোনো অজ্ঞাত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেও এমনটা হতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত সেই বিকল্প প্রমাণ মঙ্গলের পাথরে মেলেনি।
আরও পড়ুন
ইউরেনাসের একাধিক চাঁদে রয়েছে মহাসাগর, যে-তথ্য পালটে দিচ্ছে সৌরজগতের হিসেবনিকেশ
২০২১ সাল থেকে রোভারটি মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে। এ পর্যন্ত সংগৃহীত এই পাথরটি তার ২৫তম নমুনা। আরও পাঁচটি নমুনা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। নাসার তথ্যানুযায়ী, এই নমুনাগুলি ১০টি টাইটানিয়ামের বাক্সে সংরক্ষিত আছে, আর কিছু নমুনা রোভারের মধ্যেই রক্ষিত রয়েছে। এগুলি পৃথিবীতে এসে পৌঁছালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আরও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে।

পার্সিভারেন্স রোভারের মাস্কট্যমা-জেড যন্ত্রে তোলা চোয়াভা ফলসের ছবি (সূত্র-NASA)
অতএব কোটি কোটি বছর আগে মঙ্গলে সত্যিই প্রাণের স্পন্দন ছিল কিনা, থাকলে কত বছর ধরে ছিল, আর সেখানকার জলবায়ু এ অবস্থায় এল কীভাবে— এসব জানতে আমাদের হয়ত আরও কিছু বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি কোনো সদুত্তর না মেলে, তবে বিজ্ঞানীরা অন্তত এই নমুনাগুলির খনিজ থেকে নতুন নতুন কী ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে, তার রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

Whatsapp
