মাঠের দখল চান নেতারা! বুঝিয়ে দিল মেসি কাণ্ড
Messi Affair in Kolkata: প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সেদিন মেসিকে পুরো ঘিরে রেখেছিলেন নেতামন্ত্রীরা। সেই বেষ্টনী ভেদ করে কোনো ভাবেই মেসি, সুয়ারেজদের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে দেখতে পাওয়া যায়নি। একবারের জন্যেও না।
হায়দরাবাদ, মুম্বাই করে দেখাল। কিন্তু কলকাতা কলঙ্কের নজির গড়ল। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) লিওনেল মেসির কলকাতা আগমন উপলক্ষ্যে ফুটবলের শহরের মুখ পুড়ল গোটা বিশ্বের সামনে। হতাশ দর্শকদের ক্ষোভে ফেটে পড়া, তুমুল বিশৃঙ্খলা, স্টেডিয়ামে অন্তত দু'কোটি টাকার জিনিস তছনছ থেকে শুরু হয়ে ঘটনার রেশ এতদূর ছড়িয়েছে যে মঙ্গলবার দুপুরে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে ইস্তফা দিতে হলো। ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরোনোর পরেও যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সর্বত্র তাণ্ডবের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, কেন অন্য শহরের মতো নির্বিঘ্নে মেসি অভ্যর্থনা সারতে পারল না কলকাতা? এই বিভ্রাটে দায় কার? কোনো একক ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের নাকি সকলের সমষ্টিগত ভুলেই কলকাতার গায়ে কালির দাগ লাগল?
শনিবার গভীর রাতে কলকাতায় আসেন লিওনেল মেসি, রদ্রিগো দি পল, লুই সুয়ারেজ। শনিবার যুবভারতী স্টেডিয়ামে দর্শকদের মুখোমুখি আসবেন তিনি, এমনটা পূর্বনির্ধারিতই ছিল। ন্যূনতম ৩৮৫৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪,৭৫০ টাকা দামে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ঢোকার টিকিট আগেভাগেই সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ভিড়ে ঠাসা যুবভারতীতে মেসির গাড়ি ঢোকে ঠিক সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ। মেসি গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে ধরে শাসক দলের নেতামন্ত্রী এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠজন। স্টেডিয়ামের কোনোপ্রান্ত থেকেই মেসিকে দেখার কোনো সুযোগ ছিল না। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দেখা যায় মেসির গায়ে গায়ে ঘুরছেন তিনি, ওই ভিড়ে ছিলেন শাসক ঘনিষ্ট নানামুখ। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিজনরাও। এই পরিস্থিতিতে মেসি ভিড়ের মধ্যে থেকে হাত দেখান। যথাসম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে কার্যোদ্ধার করতে চাইছিলেন মেসি। কিন্তু নায়কের দেখা না পেয়ে বেঁকে বসেন দর্শকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে মেসি মাত্র ১৭ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে যান মেসি। এখান থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। ক্ষিপ্ত দর্শকরা মাঠে নেমে পড়েন। লোহার গেট ভাঙতে দেখা যায় কাউকে। গ্যালারি থেকে ছোড়া হয় জলের বোতল। দু'দিকের গোলপোস্টের জাল ছিঁড়ে ফেলা হয়। অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় ভিআইপি লাউঞ্জের সোফায়। কেউ কেউ আবার মাঠের সরঞ্জাম বাড়ি নিয়ে যেতে থাকেন। এ ছবি মনে করাচ্ছিল ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর বাংলাদেশের গণভবন লুঠের ঘটনা। গোটা ঘটনায় পুলিশ কেন নীরব দর্শক হয়ে রইল, সে প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে।
আরও পড়ুন
বুড়ো না হলে মেসির জ্বলে ওঠা অধরাই থেকে যেত
শনিবার যুবভারতীর অনুষ্ঠানে সময়ে পৌঁছনোর কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। বিশৃঙ্খলার খবর সামনে আসতেই তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার অফিসাররা পরিকল্পনা বদলে ফেলেন। মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে লেখেন, সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অচলবস্থা দেখা গেল তাতে আমি বিচলিত, স্তম্ভিত। মেসিভক্তদের কাছে ক্ষমাও চান তিনি। কিন্তু এখানে বিতর্ক থামেনি। শনিবার থেকেই সমাজমাধ্যমে ক্রীড়ামন্ত্রীর অপসারণের দাবি ওঠে। মুখম্য়মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলেন বিরোধিরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, যাদের পিঠে কাঁঠাল ভেঙে মেসিকে দেখতে পাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার টাকার টিকিট কাটানো হলো, সেই ফুটবলপ্রেমীদের ভাগ্যে জুটল ৫-৭ মিনিটের জায়ান্ট স্ক্রিনের দর্শন। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠ চলছে আর সেই লুঠে সাহায্য করেছে শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন শতদ্রু দত্ত। কিন্তু কেন তৃণমূল এতটা বেকায়দায় পড়ল?
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সেদিন মেসিকে পুরো ঘিরে রেখেছিলেন নেতামন্ত্রীরা। সেই বেষ্টনী ভেদ করে কোনো ভাবেই মেসি, সুয়ারেজদের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে দেখতে পাওয়া যায়নি। একবারের জন্যেও না। সদ্য পদত্যাগ করা ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ভিডিওতে দেখা যায় তিনি বারবার মেসির কোমর জড়িয়ে ধরছেন। মেসির নিরাপত্তারক্ষীদের বাধাও মানতে চাইছেন না।
সেদিন মঠে ছিলেন ফুটবলপ্রেমী অন্বীতা চন্দ। অন্বীতা বলেন,
ডি-ওয়ান ব্লক, রম্প২৮-এ বসেছিলাম আমি, অনুষ্ঠানটা দেরি করে শুরু হয়েছিল। যে সময়টা মেসির যুবভারতীতে থাকার কথা, ততটা সময় তিনি দিতে পারেননি। কিন্তু যেটুকু সময় তিনি ছিলেন, আমরা সে সময়টাতেও তাঁকে দেখতেই পেলাম না। পেনাল্টি শ্যুট আউট, মিট অ্যান্ড গ্রিট-সহ যেসব কর্মসূচির কথা আমরা শুনেছিলাম, তাঁর কিছুই দেখতে পাইনি। মেসি যদি শুধু তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে যুবভারতী প্রদক্ষিণ করতেন, তবেও এই চেহারা হতো না যুবভারতীর। কিন্তু নেতামন্ত্রী, নিরাপত্তারক্ষী, শতদ্রু দত্তের দলের লোক, হেভিওয়েটদের বলয় থেকে মেসি একবারের জন্যেও বেরোতে পারেননি। ক্রীড়ামন্ত্রী এক মিনিটও মেসিকে ছাড়েননি। মেসিকে টানাটানি করা হচ্ছিল সেলফি তোলার জন্যে। কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছিল না। আমার বক্তব্য স্ক্রিনেই যদি মেসিকে দেখতে হয়, তাহলে টিভিতেই দেখব। শাহরুখ খানকে দেখব ভেবেছিলাম, তাঁকেও দেখতে পাইনি আমরা। নিরাপত্তার কারণেই শাহরুখ মাঠে ঢোকেননি। ৪,৭০৫ টাকার টিকিট কেটে আমি যদি অনুষ্ঠানটি দেখতেই না পাই, তাহলে রাগব না?
অন্বীতার বক্তব্য, যুবভারতীর দর্শকরা ভাবছিলেন মেসি আবার ফিরে আসবেন। তিনি বলেন,
মানুষ যখন বুঝতে পারে ডাগআউট দিয়ে মেসি বেরিয়ে গিয়েছেন, তখন তাঁর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়। শুরু হয় গালিগালাজ, ভাঙচুর। ৬৫ হাজার উন্মত্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে ঠিক সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েনই ছিল না। পুলিশ বরং ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভিআইপি সিকিওরিটি নিয়ে
পেশায় আলোকচিত্রী তীর্থেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৩০) বলেন, সেদিন অন্য শহরে বিয়েবাড়ির ছবি তোলার কাজে থাকার কথা। তীর্থেন্দু সেই কাজে যাননি, অন্য একজনকে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত ঈশ্বরকে একবার দেখবেন বলে। বলাই বাহুল্য কিছুই দেখতে পাননি তীর্থেন্দু। তাঁর কথায়,
আমরা গতকাল যেভাবে অপমানিত লাঞ্চিত হয়েছি মনে হলো আমাদের ঘাড় ধরে মাটিতে ফেলে বোঝানো হলো, আমাদের আসলে মেসিকে সামনে থেকে দেখার অধিকারটুকুও নেই কারণ আমরা প্রভাবশালী কেউ নই, আমরা নির্দিষ্ট কারো ছেলে বা বন্ধু নই। আমরা খুব সাধারণ, খুব সামান্য কিছু টাকা রোজগার করা মানুষ আমরা। মেসি কোনোদিন আমাদের ঠকায়নি এই জীবনে, কালও ঠকাননি, যারা মেসি কে ঘিরে ধরে থাকলেন তাঁরা কেউ জানবেন না কতটা ক্ষতি হলো আমাদের।
আরেক ফুটবলপ্রেমী প্রতীক মিত্র (৪৫) বলেন,
মারাদোনাকে ২০০৮ সালে সামনে থেকে দেখেছি। অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম মাঠে। এ টু গ্যালারিতে বসেছিলাম আমরা। যে জায়গা থেকে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করে, উনি সেই রাস্তা দিয়ে বন্ধ গাড়ি থেকে ঢোকেন। মেসিকে দেখতে হচ্ছিল মোবাইল ক্যামেরা জুম করে। আমরা জানতাম মেসি আছে। কিন্তু ওটুকুই। শুধু কালো মাথা দেখে ফিরতে হয়েছে। মাঠে ২০ টাকার বোতল ২০০ টাকা দামে কিনে ঢুকতে হয়েছে। তাঁরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে বোতল ছুঁড়ে মারছিল মাঠে। GOAT লেখা ব্যানারটি লোকে ভাঙছিল চোখের সামনে। খুব খারাপ লাগছিল। কলকাতার নাম গোটা বিশ্বের কাছে খারাপ হয়ে গেল।
সাধারণ দর্শক তো বটেই মেসিকে দেখতে পারেননি প্রেসবক্সে বসা সাংবাদিকরাও। তরুণ ক্রীড়া সাংবাদিক অগ্নিহোত্রী দত্ত (২৩) বলেন,
যাকে ঘিরে এত অভিযোগ সেই শতদ্রু দত্ত কিন্তু মাইকে বারবার অ্যানাউন্স করছিলেন জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি। সকলেই ব্য়স্ত ছিল ছবি তোলায়।
আরও পড়ুন
টাকার লোভ আর ক্ষমতার দেমাক,মেসি আসায় যে নর্দমার ঢাকনা খুলে গেল
এত বড় অনুষ্ঠান, বহুদিন আগে থেকেই তার প্রচার হয়েছে ফলে কর্মসূচি সম্পর্কে পুলিশের কাছে সব তথ্যই থাকা উচিত। মেসি বা শাহরুখ খান আসবে জেনেও পুলিশ কেন মকড্রিল করল না? পুলিশ সূত্রে খবর, সেদিন মাঠে ছ-জন ডিআইডজি, আটজন এসপি পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন। সেই সঙ্গে ২০০০ পুলিশকর্মী ছিলেন। কিন্তু মাঠের ভেতরে নিরাপত্তারক্ষীরাই দায়িত্বে থাকবে এমনটাই আগে থেকে স্থির ছিল। পুলিশের বক্তব্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতেই লাঠি চালানো হয়নি। কিন্তু এ কথা মানতেই হবে, এতবড় বিশৃঙ্খলা হবে তা ঠাওর করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় মুখ পুড়তেই পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামে রাজ্য পুলিশ। মেসিদের বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে। শনিবারই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সাংবাদিক বৈঠক থেকে বলেন,
উদ্যোক্তা দর্শকদের টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। টাকা ফেরতের ব্যাপারটা আমরা দেখব।
কিন্তু টাকা কী ভাবে ফেরত পাবেন প্রতারিত দর্শকরা, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। সোমবার সিসি়টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পাঁচজন দর্শককে গ্রেফতারও করা হয়। তাদের নাম বাসুদেব দাস, সঞ্জয় দাস, অভিজিৎ দাস, শুভ্রপ্রতিম দে, গৌরব বসু। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা, মারধরের মামলা রুজু করা হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় বিধাননগর এসিজেএম আদালত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া অরূপ বিশ্বাসের পদত্যাগ পত্র
এই অনুষ্ঠানের মুখ্য আয়োজক শতদ্রু দত্ত নিজের পরিচয় দিতেন স্পোর্টস কন্ট্রাকটার হিসেবে। রিষড়ার বাসিন্দা, অর্থনীতির ছাত্র, একসময়ের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠজন বলে ক্রীড়ামহলে পরিচিত তিনি। কলকাতায় পেলে, কাফু, রোনাল্ডিনহো, বেবেতো, মারাদোনাদের এনেছে তাঁর সংস্থা। তাঁর সূত্রে কলকাতায় এসেছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে। মেসিকে এ শহরে আনবেন বলে গত কয়েক মাস উঠেপড়ে লেগেছিলেন শতদ্রু। বাজার থেকে টাকা তোলা, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চুক্তিতে সই করা চলছিল। রাজনৈতিক মহল এবং তিনি একে অন্যেকে কাছে টানতে শুরু করেছিলেন। গত কয়েক বছরে নেতামন্ত্রীদের নানা স্মারক উপহার হিসেবে দিয়েছেন শতদ্রু বিনিময়ে পেয়েছেন অলিখিত রক্ষাকবচ। মেসি চলে যাওয়ার পর কলকাতায় রোনাল্ডোকে আনার সংকল্পের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন শতদ্রু নিজেই। কিন্ত শনিবারের ঘটনার পর, শতদ্রুর পরিকল্পনার যে ভবিষ্যত নেই তা বলাই চলে। রবিবার বিধাননগর আদালত তাঁর ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
শনিবারের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে ক্রীড়াবৃত্তে রাজনীতির লোকেদের অনৈতিক অনুপ্রবেশের ছবিটা পরিষ্কার করে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শতদ্রুর যেমন তৃণমূলকে দরকার ছিল ঠিক তেমনই ৬৫ হাজার দর্শক, শাহরুখ খান, লিওনেল মেসির সঙ্গে এক মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, এই দৃশ্য় তৈরির লোভেই পা বাড়িয়েছিল তৃণমূল। নাকানিচোবানি খেতে হবে তা দলের ওপরতলার কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। শনিবারই যুবভারতী কেলেঙ্কারির অব্যবহিত পরেই তার তদন্তের জন্য প্রাক্তন বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। মঙ্গলবার সেই কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করার কথা জানায়। এই ঘটনা সামনে আসার পরই অরূপ বিশ্বাস ক্রীড়ামন্ত্রী পদ থেকে অব্যহতি চান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অনুরোধ মেনে নেন। অরূপের লেখা নোটটি সমাজমাধ্যমে আনেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। রাজ্যপালকে ইস্তফা জমা না দিয়ে কেন মুখ্যমন্ত্রীকে নোট পাঠানো, কেন ইস্তফার নোটে মুখ্যমন্ত্রীকে দিদি বলে সম্বোধন, প্রশ্ন তুলে দিয়েছে অরূপ চিঠিটি। অরূপের আর্জি মেনে নেয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও। একই সঙ্গে রাজ্যপুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি রাজীব কুমার এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমারকে শো কজ় করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ (যিনি বিচারপতি রায়ের নেতৃত্বাধীন কমিটিরও সদস্য)। পাশাপাশি, বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, তদন্ত যত দিন চলবে, তত দিন নিলম্বিত (সাসপেন্ড) থাকবেন তিনি। ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার সিংহকেও শো কজ় করা হয়।
ঘটনার ধারাবিবরণী একটা কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে, ৬৫ হাজার প্রতারিত ফুটবলপ্রেমী যখন শতদ্রু দত্তর সঙ্গে তৃণমূলকেও একহাত নিচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া যখন বেনজির ভাবে তৃণমূলের দলতন্ত্রকে একহাত নিচ্ছে, কার্যত নিজে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সেই কারণে একের পর এক পদক্ষেপ নজরে আসছে। ফুটবলকে ঘিরে তাণ্ডব কলকাতা প্রথম দেখছে না। ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি ইডেনে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। ১৯৮০ সালের ডার্বি ম্যাচে ইডেনে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু রাজনীতির ক্লেদ মাঠে জমেনি। কিন্তু যুবভারতী বিপর্যয় দেখিয়ে দিয়েছে প্রভাবশালী নেতারা মাঠের দখল নিতে ঠিক কতটা মরিয়া। এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমাপ্রার্থনা করে কার্যোদ্ধার হবে না বিলক্ষণ জানেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অন্দরে তাই এখন দমচাপা পরিস্থিতি।

Whatsapp
