পরিচারিকা, স্ত্রী, বিতর্কিত যৌনতা! অভিনেতার নেপথ্যে রয়েছেন অন্য নওয়াজউদ্দিন
Nawazuddin Siddiqui: ২০১০ সালে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী বিয়ে করেন অঞ্জনা কিশোর পাণ্ডেকে। অন্য ধর্মে বিয়ের নিয়ম মেনে অঞ্জনা নিজের নাম বদলে করেন আলিয়া।
ভারতীয় চলচ্চিত্রকে 'নায়ক'-এর ছত্রছায়া থেকে বের করে এনে অভিনেতার সঙ্গে আলাপ করিয়েছেন যারা, তাঁদের মধ্যে একজন নিঃসন্দেহে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। বলিউডি চেহারা, বলিউডি পৃষ্ঠপোষকতার থেকে বাইরে গিয়ে নিজের অভিনয়ের তীক্ষ্ণতায় নওয়াজউদ্দিন ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং ওটিটিতে এক নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছেন। অভিনেতা নওয়াজকে বাদ দিয়ে যদি ব্যক্তি নওয়াজের দিকে তাকানো যায়, অনন্ত 'স্ক্যান্ডাল'-এর ভিড়। সম্প্রতি নিজের পরিচারিকাকে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন অভিনেতা। নওয়াজের পরিচারিকা স্বপ্না রবিন মসিহ সম্প্রতি দাবি করেছেন, নওয়াজের কারণে দুবাইতে আটকা পড়েছেন তিনি, মাইনেও পাননি।
নওয়াজউদ্দিনের স্ত্রী আলিয়ার আইনজীবী রিজওয়ানের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে স্বপ্না রবিন মসিহকে কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চাইতেও দেখা যায়। নওয়াজ নাকি এই পরিচারিকাকে 'ভুলভাবে' নিয়োগ করেছেন। ভিসা ফি বাবদ দুই মাস ধরে তাঁকে নাকি বেতনও দেওয়া হয়নি। এর আগে নিজের স্ত্রী ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা জটিলতার মুখে পড়েছেন নওয়াজ। ভারতের অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতা নওয়াজের জীবন কেন এত বিতর্কিত?
স্ত্রী আলিয়ার সঙ্গে নওয়াজউদ্দিনের সম্পর্কের টানাপোড়েন
২০১০ সালে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী বিয়ে করেন অঞ্জনা কিশোর পাণ্ডেকে। অন্য ধর্মে বিয়ের নিয়ম মেনে অঞ্জনা নিজের নাম বদলে করেন আলিয়া। তবে এটি ছিল নওয়াজের দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে শিবা নামের এক মহিলার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। তারকা হওয়ার আগেই আলিয়াকে চিনতেন নওয়াজ। তবে দু'জনের এই প্রেম-বিবাহ শেষ পর্যন্ত দু'জনের পথ পৃথকই করে দেয়। অস্থির সম্পর্কে টিকতে পারছিলেন না নওয়াজ-আলিয়া। আলিয়া বিবাহবিচ্ছেদের দ্বারস্থ হন।
২০২০ সালের মে মাসে আলিয়া বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। নওয়াজের বিরুদ্ধে গুরুতর সমস্ত অভিযোগ তোলেন আলিয়া, এমনকী নিজের আসল নামটিও ফিরিয়ে নেন। তবে শেষ চেষ্টা করে দেখতে চান দু'জনেই। এই বিয়েকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু ঠিক করেন আলাদা থাকবেন তারা। আলাদা থেকেই নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু সম্পর্ককে ফের জোড়ার চেষ্টা করবেন নওয়াজ আলিয়া।
আরও পড়ুন- মন্নতকেও হারাবে শাহরুখের ম্যানেজারের বাড়ি! কত বেতন পান পূজা দাদলানি?
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর উপর অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর স্ত্রীর উপর নজরদারি চালাচ্ছেন। তবে এই সময় নওয়াজের পাশে ছিলেন আলিয়া। আলিয়া এই অভিযোগ খারিজ করে দেন। আলিয়ার মতে, তারকা হওয়ার খেসারতই দিতে হচ্ছে নওয়াজকে। তবে ভাঙা ফুলদানি জোড়া লাগে না। জোড়া লাগাতে গেলে ভাঙনের দাগ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
চলতি বছরের শুরুতে আবার সম্পর্কে উথালপাথাল শুরু হয় সম্পত্তিকে ঘিরে। জানুয়ারি মাসেই নওয়াজউদ্দিনের মা, মেহরুনিসা সিদ্দিকী সম্পত্তি বিষয়ক এক অভিযোগে আলিয়ার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেন। ভারসোভা পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৫২, ৩২৩, ৫০৪, ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করে। আলিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ডাকা হয় থানায়। যে আলিয়া এককালে বলেছিলেন, স্বামী তারকা হওয়ার খেসারত দিচ্ছেন, সেই আলিয়াই এবার বলেন, স্বামী নওয়াজ তারকা বলেই তিনি নিশ্চিত নন এ জীবনে কখনও ন্যায়বিচার পাবেন কিনা।
চলতি মাসে আলিয়া ফের জানান, আবার বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠাবেন নওয়াজকে। আলিয়া তাঁর সন্তানদেরও বাবার কাছে রাখতে চান না। এখানেই বিস্ফোরক এক অভিযোগ আনেন আলিয়া। নওয়াজউদ্দিনের স্ত্রী জানান, তাঁদের দ্বিতীয় সন্তানকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন নওয়াজ।
“ও আমাকে মানসিকভাবে বিস্তর হয়রানি করেছে। আমি ঠিক করেছি ওকে তালাক দেব এবং আমার বাচ্চাদের হেফাজতের জন্য আইনি লড়াই লড়ব। আমি টাকা চাইনা কিন্তু আমাদের দ্বিতীয় সন্তানকে অস্বীকার করার ওর দাবিতে আমি হতবাক! আমরা লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আমাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে এটা ও কীভাবে বলতে পারে? আমার কাছে চুক্তি রয়েছে যাতে আমাদের স্বামী এবং স্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করা আছে এবং এই সব আমি আদালতে জমা দেব,” জানিয়েছিলেন আলিয়া।
আরও পড়ুন- বিজেপির প্রচারে গিয়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা! দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল অন্তঃসত্ত্বা সুপারস্টারের!
শুধু স্ত্রীর সঙ্গে নিরন্তর অশান্তি নয়, নওয়াজউদ্দিনের প্রাক্তন প্রেমিকাও অভিনেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন। অভিনেত্রী নীহারিকা সিংয়ের অভিযোগ নওয়াজের মধ্যে ভরপুর 'টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি' রয়েছে। নওয়াজের এই প্রবল পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা তাঁকে যৌনভাবেও হিংস্র করে তুলেছে। নীহারিকা আরও জানিয়েছিলেন, জাতপাত নিয়েও প্রবল গোঁড়ামি রয়েছে নওয়াজের।
নওয়াজউদ্দিন নিজেই একবার জানিয়েছিলেন, নিউইয়র্কে একজন পরিচারিকার সঙ্গে এক রাত কাটিয়েছিলেন তিনি। ওই পরিচারিকা তাঁকে তাঁর একটি সিনেমা থেকে চিনতে পেরে যান। তারপরেই সেই মহিলার সঙ্গে রাত্রিযাপন করেন নওয়াজ। "আমি একবার নিউইয়র্ক সিটির সোহো এলাকায় আমার বন্ধুর সঙ্গে একটি ক্যাফেতে গেছিলাম। এক সুন্দরী ওয়েট্রেস আমার দিকে তাকিয়েই ছিল। 'তুমি কি অভিনেতা?' জিজ্ঞেস করেছিল সে। আমি উত্তর দিলাম, 'হ্যাঁ! আপনি আমার কোন সিনেমা দেখেছেন? গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর?' মনে করার চেষ্টা করে সে আমতা আমতা করে বলল, 'না, না, অন্য আরেকটা সিনেমা!' কয়েক মুহূর্ত পরে, সে উত্তর দিল, 'লাঞ্চবক্স!' আমরা কথাবার্তা বলতে থাকি এবং ঠিক করি, নিউইয়র্কে যা ঘটবে সেসব স্মৃতি নিউইয়র্কেই থেকে যাবে,” স্বীকার করেছিলেন নওয়াজ।
তারকাদের, বিশেষ করে মূলধারার সিনেমার তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন ঘিরে আম জনতার কৌতূহল স্বাভাবিক। নওয়াজ নিজের অভিনয়ে তথাকথিত মূলধারা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন ঠিকই কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের নানা আলো আঁধারিতে নওয়াজউদ্দিন এক ছায়ামাখা চরিত্র। সাইনধভ সিনেমা দিয়ে তেলগু চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটতে চলেছে তাঁর। টিকু ওয়েডস শেরু, জোগিরা সারা রা রা এবং হাড্ডির মতো সিনেমাতেও তাঁকে দেখতে পাওয়ার অপেক্ষাতে রয়েছেন ভক্তরা। অভিনেতা নওয়াজ আর ব্যক্তি নওয়াজ কি পৃথক দুই চরিত্র? চলচ্চিত্রই সেই চরিত্রের সকাল, আর ব্যক্তিগত যাপন এলোপাথাড়ি নিকষ আঁধারে!