সবাই জানেন 'আজগুবি' সিনেমা! তাও কেন ভারতবর্ষে চিরকাল জিতে যান শাহরুখ খান?
Pathan Shahrukh Khan: পাঠান দিয়ে বছর শুরু করেছেন শাহরুখ। সামনেই রয়েছে আরও দু'টি সিনেমা, জওয়ান এবং ডানকি৷
তিনি ফিরেছেন। প্রথম দিনেই কাঁপিয়ে দিয়েছেন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী! ৩২ বছর পর কাশ্মীরের সিনেমাহল হাউজফুল! কলকাতায় হল জুড়ে নাচছে মানুষ। ভারতবর্ষ জুড়ে এক পাঠানের উত্থান ঘটছে। বক্স অফিস বলছে, প্রথম পাঁচদিনেই ২০০ কোটির লাভ ছাড়িয়ে যাবে শাহরুখ খানের সিনেমা। ১০০ টিরও বেশি দেশে মুক্তি পেয়েছে কিং খান, দীপিকা আর জন আব্রাহামের 'পাঠান'। হারানো মসনদ ফিরে পাচ্ছেন বাদশা? শাহরুখের এই 'কামব্যাক' কি ব্র্যান্ড এসআরকে-তেও প্রভাব ফেলবে? তর্কাতীতভাবে ভারতের শেষ সুপারস্টার এখনও শাহরুখই। শুধু পর্দায় নয়, পর্দার বাইরেও যিনি ভারতের এক আইকন।
শাহরুখের ম্যাজিক, শাহরুখের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর, শাহরুখের পারিবারিক দায়বদ্ধতা, শাহরুখের অন-স্ক্রিন রোম্যান্স- শাহরুখকে ভালোবাসার এক এক রকম কারণ এক এক রকম মানুষের কাছে। কিন্তু ‘ব্র্যান্ড শাহরুখ খান’ আসলে কী? শাহরুখ কেন নিজের ক্যারিশ্মা ছেড়ে বেরোচ্ছেন না। নিজেকে আবিষ্কার করছেন না কেন 'রাজ, নাম তো শুনা হি হোগা'-র প্রাচীন আশ্রয় থেকে ছাড়িয়ে আনছেন না নিজেকে? শাহরুখের মূলধনই হলো মানুষের ভালোবাসা। দিল্লির মামুলি যুবককে দেশের তারকা করে তুলেছেন মানুষই। মানুষই সমালোচনা করেছেন, মানুষই বয়কটের ডাক দিয়েছেন। তবু শাহরুখ-ম্যানিয়া জিতে গেছে সমস্ত ঘৃণার উর্ধ্বে।
নিজের বুদ্ধিমত্তার জন্য মহিলাদের মধ্যে বিশেষ সংবেদনশীলতার স্থানে রয়েছেন কিং খান। পুরনো দিনের কিছু মানুষ ফৌজির দিন থেকেই শাহরুখকে ঘরের ছেলে ভেবেছেন, ৯০ এর দশকে বেড়ে ওঠা কিশোর কিশোরীরা আজও প্রেমে পড়েন শাহরুখের। স্বদেশ, চক দে ইন্ডিয়া বা ডিয়ার জিন্দগির মতো সিনেমায় নিজেকে নিজেরই খোলস থেকে ছাড়িয়েও এনেছেন তিনি। শাহরুখই একমাত্র সুপারস্টার যিনি খ্যাতির চরম সীমায় উঠে নিজেই নিজের 'ফ্যান'-এর ভূমিকা অভিনয় করেছেন।
আরও পড়ুন- ‘পাঠান’-এর কামাল! মুক্তির দিনই ভারতের সিঙ্গল স্ক্রিনে যে ম্যাজিক করলেন শাহরুখ খান
৭০ এর দশকে বম্বেতে পা রেখে মানুষ রাজেশ খান্নার বাড়ি দর্শন করতে যেতেন। ৮০-র দশক থেকে আজও মানুষ অমিতাভের 'জলসা' দেখতে যান। গত দুই দশকে শাহরুখের 'মন্নত' মুম্বইয়ের সেরা তীর্থ হয়ে উঠেছে। ছেলে আরিয়ানের বিতর্ক হোক বা নিজের ফ্লপ সিনেমা- ব্যক্তি শাহরুখ ঘা খেয়েছেন কিন্তু ব্র্যান্ড শাহরুখের গায়ে আঁচও লাগতে দেননি।
দেশজোড়া ভক্তদের কাছে ব্র্যান্ড এসআরকে মানেই 'অপ্রতিরোধ্য'। 'বেশরম রঙ' গানে গেরুয়া বিতর্ক তুলে দিয়েও ঠেকানো যায়নি শাহরুখ খানকে। প্রথম সপ্তাহেই গান সুপারহিট। শাহরুখ নিজেকে ভাংলেন কিনা, আজগুবি গল্প, লার্জার দ্যান লাইফ চিত্রনাট্য থেকে বেরোলেন কি না এসব চিন্তাকে বাইপাস করে জিতে যায় শাহরুখ ম্যাজিক। ছোটোপর্দা থেকে সুপারস্টার হয়ে ওঠার লড়াই জিতে যায়। পাঠানের প্রি-বুকিংই প্রমাণ করে যাবতীয় নেতিবাচকতা, সমালোচনা, বয়কট এসব শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতেই রয়েছে। পাঠানই দেখিয়েছে বয়কটের ডাক কোনও চলচ্চিত্রকে প্রভাবিত করতে পারে না, শাহরুখকে তো নয়ই। এই বছরের শুরুতেই, ওয়ার্ল্ড অব স্ট্যাটিস্টিক্স প্রকাশিত বিশ্বের ধনী অভিনেতাদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন শাহরুখ খান। তালিকা বলছে, টম ক্রুজের চেয়েও শাহরুখের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বেশি। Duff & Phelps সেলিব্রিটি ব্র্যান্ড রিপোর্ট অনুযায়ী, শাহরুখের 'ব্র্যান্ড ভ্যালু' ২০২১ সালে ছিল ৪৬.৩ মিলিয়ন ডলার।
পাঠান দিয়ে বছর শুরু করেছেন শাহরুখ। সামনেই রয়েছে আরও দু'টি সিনেমা, জওয়ান এবং ডানকি৷ ভক্তরাই বলছেন, পরবর্তী সিনেমার মুক্তির সময় উত্তেজনা এত বেশি থাকবে না। তবে কোনও অংশে তা কমেও যাবে না। বহু বছর ধরে, ডিশ টিভি, হুন্ডাই, লাক্স, বাইজুস, রিলায়েন্স জিও, এলজি টিভি, পেপসি, থামস আপ, ডেনভার, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম সহ আরও ৪০ টি ব্র্যান্ডের মুখ শাহরুখ। দুবাই পর্যটনের মুখও তিনি, পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরও তিনিই। ৫৭ বছর বয়সে বয়স্ক চরিত্র তো দূর, শাহরুখ নিজেকে যা গড়েছেন তাতে নবাগত নায়িকাদেরও নায়ক হয়ে উঠবেন তিনি। শুধু নায়িকাদের নয়, দেশের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে গবেষক, শিল্পপতি- শাহরুখ নায়ক হয়ে উঠেছেন সকলের। মাথার উপর কোনও ছাদ না থাকা চারাগাছ মহীরুহ হয়ে উঠেছে, মহীরুহের নাম শাহরুখ।