বর্জ্য প্লাস্টিক দিয়ে অভিনব রাস্তা! কোন বিশেষত্ব লুকিয়ে রয়েছে বাংলার প্রথম নীল রাস্তায়?

Road With Plastic Waste : রাজ্যে প্রথম নীল রঙের রাস্তা!পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি নীলাভ রাস্তা আসলে কতটা আলাদা পিচ কিংবা মাটির রাস্তার চেয়ে?

কালো পিচ অথবা লাল মাটি নয়, বাংলার এই এলাকায় রাস্তা তৈরি হল নীল রঙের। বিষয়টা শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের রায়না দু নম্বর ব্লকে পুনর্ব্যবহার অযোগ্য প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়েছে নীল সাদা রাস্তা। টেকসই হলে আগামী দিনে জেলার অন্যান্য জায়গাতেও নীল সাদা রাস্তা তৈরি করবে রাজ্য সরকার, এমনটাই জানিয়েছে প্রশাসন। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই এমন একটা পদক্ষেপ আদতে পরিস্থিতির মধ্যে বেশ খানিকটা চমক এনেছে তা বলাই বাহুল্য। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিদেশ নয়, এমনকী দিল্লি অথবা মুম্বাইয়ের মতো বড় শহর নয়, খোদ বাংলার মাটিতে নীল রঙের পিচের রাস্তা, স্বাভাবিকভাবেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

পূর্ব বর্ধমানের রায়না-২ ব্লকে তৈরি হয়েছে এমন রাস্তা। জেলা প্রশাসনের দাবি, ভারতে প্রথমবার এমন রাস্তা তৈরি হল। একলক্ষ্মী টোল থেকে রাউতারা ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত এই রাস্তা তৈরি হয়েছে পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে। প্লাস্টিকের সামগ্রী দিয়ে বাংলায় এর আগেও রাস্তা তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে এই রাস্তার বিশেষত্ব হল পিচের উপর ওই নীল রঙের কোটিং। দাবি করা হয়েছে, এই নীল রঙের মোড়ক রাস্তাটিকে আরও টেকসই করে তুলবে। পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে তার উপর নীল রংয়ের কোট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই রাস্তা। এই কারণে গরমে প্রচণ্ড উত্তাপে রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি, বর্ষায় এই রাস্তায় জল জমার সম্ভাবনাও প্রায় নেই।

আরও পড়ুন - দর্শক মনে প্রাণে চেয়েছিল শাহরুখ মরুক! সাইকোপ্যাথ খুনিই ছিল বাজিগরের ‘হিরো’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে যে, এই অভিনব রাস্তাটি তৈরি করতে মোট ২২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে রাজ্য অর্থ কমিশন থেকে ১৪ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে এবং পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন মূলত দুটি বিষয়ের কথা মাথায় রেখেই এমন অভিনব রাস্তা তৈরির দিকে এগিয়েছে সরকার। একদিকে দেশজুড়ে প্লাস্টিক দূরীকরণে উদ্যোগে সামিল হতে পাশে থাকবে এমন ইকো ফ্রেন্ডলী রাস্তা, অন্যদিকে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এর আওতায় রাস্তার নির্মিত পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে কম খরচে টেকসই রাস্তা নির্মাণ করাও সম্ভব এক্ষেত্রে। পাশাপাশি, নীল রংয়ের রাস্তায় সৌন্দর্যায়নের বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে।

এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী বলছে?

রাস্তা তৈরির সময় গরম পিচে যদি ১০ শতাংশ অবধি ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিক দেওয়া হয়, এর কোনও বিক্রিয়া হয় না। উপরন্তু গরম পিচে ১০ শতাংশ প্লাষ্টিক মিশিয়ে দিলে রাস্তাটি তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে। এর ফলে রোদে পিচের রস্তে খালি পায়ে হাঁটতে গেলে জে অসুবিধা হয় তা হয় না প্লাস্টিক মিশ্রিত রাস্তায়। রাস্তাটি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ঠান্ডা থাকে, খালি পায়ে সহজেই হাঁটা যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত রোদ্দুরে এবং বৃষ্টিতে এই রাস্তা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে তা দীর্ঘদিন টেকসই ও মজবুত থাকে। বর্তমানে তৈরি হওয়ার সাম্প্রতিক রাস্তাটি রাজ্যের মধ্যে প্রথম এই আধুনিক প্রযুক্তির বাস্তবায়ন বলে জানা গিয়েছে। রাস্তাটি যেহেতু নীল রঙের দেখতে, তাই একে ‘নীল রাস্তা’ও বলা হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে ওই রাস্তা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে বলে সাধারণত গরমের দেশ গুলিতে এই অভিনব রাস্তার চল ছিল। দুবাইয়ে এই বিশেষ প্রযুক্তি দেখা গিয়েছে আগেই। তবে রাজ্যে এই প্রথম। আগামী দিনে এই রাস্তার ভবিষ্যতেই ঠিক করে দেবে রাজ্যের তথা দেশের আরও অন্যান্য জায়গায় নীল রাস্তার প্রয়োজন কতখানি।

More Articles