লেখালিখিতে হামেশাই ChatGPT ব্যবহার? যে বিপদ অজান্তেই বাড়াচ্ছেন আপনি
ChatGPT: গবেষকরা বলেছেন, যেসব শিশুদের মস্তিষ্ক এখনও বিকশিত হচ্ছে তাঁদের উপর ChatGPT-র প্রভাব নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা।
চ্যাটজিপিটি মানুষের ঠিক কী কী উপকার আর কী কী অপকার করবে এই নিয়ে দিস্তে দিস্তে লেখালিখি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। তবে, নেহাত মজার ছলে হোক বা প্রয়োজনে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার হু-হু করে বাড়ছে সব স্তরের মানুষের মধ্যেই। আর এর ক্ষতিকর প্রভাবও শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যবহারের সঙ্গে তাল রেখেই। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রবন্ধ লেখার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট ChatGPT-এর উপর নির্ভর করার ফলে মানুষের নিজস্ব জ্ঞান ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা কমছে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি মিডিয়া ল্যাবের গবেষকরা মস্তিষ্কের উপর ChatGPT-এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষকরা তিনটি দলকে একটি প্রবন্ধ লিখতে বলেন। একটি দল ChatGPT-এর উপর নির্ভর করে প্রবন্ধ লেখে, একটি দল সার্চ ইঞ্জিনের উপর নির্ভর করে এবং একটি দলের কাছে এমন কোনও প্রযুক্তির বিকল্পই ছিল না।
এরপর গবেষকরা এই প্রবন্ধ লেখকদের মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ করেন ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি ব্যবহার করে। সাধারণত মস্তিকের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপ করার একটি পরিচিত পদ্ধতি এটি।
আরও পড়ুন- প্রায় প্রতিদিনের সঙ্গী AI? হিসেব করতে, গভীরে ভাবতে ভুলে যাচ্ছেন না তো?
গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে, যাঁরা প্রবন্ধ লিখতে ChatGPT-র উপর নির্ভর করেছিল তাঁদের মস্তিষ্কের সংযোগ ছিল ‘সবচেয়ে দুর্বল’ এবং তাঁরা নিজেদের প্রবন্ধ সম্পর্কে খুব একটা কিছু মনেও রাখতে পারেননি। বোঝাই যাচ্ছে, ঘন ঘন চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে জ্ঞানের পতন সম্পর্কে সম্ভাব্য উদ্বেগ মোটেও উড়িয়ে দেওয়ার নয়।
"চার মাস ধরে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরা ধারাবাহিকভাবে স্নায়বিক, ভাষাগত এবং আচরণগত স্তরে কম সক্ষম থাকতে পেরেছে। এই ফলাফলগুলি চ্যাটজিপিটি নির্ভরতার দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাগত প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ জাগিয়ে তোলে এবং শেখার ক্ষেত্রে AI-এর ভূমিকা সম্পর্কে আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেয়," বলছেন গবেষকরা।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, যাঁরা প্রবন্ধ লেখার জন্য এমন কোনও প্রযুক্তিগত সম্পদ ব্যবহার করেননি তাঁদের চিন্তা ও জ্ঞানের সংযোগ ‘সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সর্বাধিক বিস্তৃত’।
গবেষক কোসমিনা বলেছেন, যেসব শিশুদের মস্তিষ্ক এখনও বিকশিত হচ্ছে তাঁদের উপর ChatGPT-র প্রভাব নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন তিনি। "আমি ভয় পাচ্ছি যে ৬-৮ মাসের মধ্যে, এমন কিছু নীতিনির্ধারক আসবেন যাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন, 'চলুন GPT কিন্ডারগার্টেন করি’। আমি মনে করি এটি চূড়ান্ত খারাপ এবং ক্ষতিকারক হবে। বিকাশমান মস্তিষ্কের উপরের সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে," বলছেন কোসমিনা।
আরও পড়ুন- জনপ্রিয়তায় ছেদ! ইটালি-সহ একাধিক দেশে কেন নিষিদ্ধ চ্যাটজিপিটি?
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের সদস্যরা সহ অন্যরা, শিশুদের মস্তিষ্কের উপর ChatGPT-র প্রভাব নিয়ে এতটা চিন্তিত নন। ট্রাম্প গত এপ্রিল মাসেই আমেরিকার স্কুলগুলিতে AI-এর প্রচারের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।
সেই আদেশে বলা আছে, "এই প্রযুক্তিগত বিপ্লবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের নেতা হিসেবে নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের দেশের যুবসমাজকে পরবর্তী প্রজন্মের AI প্রযুক্তি ব্যবহার এবং তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং বোধগম্যতা গড়ে তোলার সুযোগ প্রদান করতে হবে। AI দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং উন্নতি করার প্রয়োজনীয় মৌলিক জ্ঞান এবং দক্ষতা দিয়ে গড়ে তুলব।"
কোসমিনা বলছেন, তাঁর দল এখন আরেকটি গবেষণা করছে। সেখানে যাঁরা AI ব্যবহার করেন না তাঁদের সঙ্গে AI ব্যবহারকারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রোগ্রামারদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের তুলনা করা হয়েছে। "ফলাফল আরও খারাপ," টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন কোসমিনা।

Whatsapp
