ডিজিটাল ডেটা রুলস ২০২৫: গোপনীয়তা রক্ষা নাকি সংবাদমাধ্যমে বাড়তি চাপ?
Digital Personal Data Protection Rules 2025: DIGIPUB মনে করছে, সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রতিটি তথ্য ব্যবহারে ‘সম্মতি’ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা সাংবাদিকতার স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করবে।
ভারত সরকার সম্প্রতি নতুন এক বিধিমালা ঘোষণা করেছে— ‘ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন রুলস, ২০২৫’। নাম থেকেই বোঝা যায়, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্যই এই নিয়ম তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত ডেটা নিরাপদ রাখা নিঃসন্দেহে জরুরি। সরকার বলছে, এই আইন পুরোপুরি কার্যকর হতে সময় দেওয়া হবে ১৮ মাস, যাতে সব সংস্থা নিজেদের প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানিয়ে নিতে পারে। তবে এই নিয়ম নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করছে দেশের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম।
DIGIPUB News India Foundation এবং Editors’ Guild of India হলো দেশের দুই অন্যতম স্বাধীন মিডিয়া সংগঠন। তারা নতুন ডেটা সুরক্ষা বিধিমালা নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের মতে, ‘ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন রুলস, ২০২৫’ সাংবাদিকতার উপর এমন এক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল, লোকেশন ইত্যাদি) সংগ্রহ করার আগে ব্যবহারকারীর স্পষ্ট সম্মতি নিতে বাধ্য। নাগরিক চাইলে তার তথ্য সম্পূর্ণ মুছে ফেলারও অধিকার পাবে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার এই পদক্ষেপের সঙ্গে আপত্তি নেই কারও। সমস্যা দেখা দিচ্ছে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেই।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকই হেনস্থার শিকার হলে বিচার চেয়ে প্রশ্ন তুলবে কে?
DIGIPUB মনে করছে, সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রতিটি তথ্য ব্যবহারে ‘সম্মতি’ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা সাংবাদিকতার স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করবে। অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো উৎস-গোপনীয়তা। অনেক সময় তথ্যদাতা নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান, কারণ তিনি ভয় পান, তাঁর দেওয়া তথ্যের পরিণতি তাঁর বিপক্ষে যেতে পারে। এখন যদি তথ্য প্রদানের আগেই তাঁকে সম্মতি দিতে বলা হয়, তবে অনেকে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে যাবেন। ফলে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে খবর প্রকাশ আরও কঠিন হয়ে উঠবে। এটি শুধু সাংবাদিকদের নয়, সাধারণ মানুষের জানার অধিকারকেও সীমিত করবে।
DIGIPUB আরও বলছে, নতুন ডেটা নিয়ম RTI (Right to Information) আইনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। প্রশাসন অনেক তথ্যকে ‘সংবেদনশীল’ বলে চিহ্নিত করে রাখতে পারে, ফলে জনস্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এডিটরস গ্লিড (Editors Guild) ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (Electronics and Information Technology) মন্ত্রককে চিঠি লিখে দাবি করেছে, সৎ বিশ্বাসে সাংবাদিকতার কাজ (bona fide journalistic activity) যেন এই নিয়মের আওতামুক্ত না থাকে। কারণ আইনগত জটিলতা এড়াতে সাংবাদিকরা অনেক সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে রিপোর্টিংয়ের গতি, গুণমান ও গভীরতার উপর।
আরও পড়ুন
গৌরী লঙ্কেশ হত্যায় অভিযুক্তদের মালা পরিয়ে বরণ! বিচার পাবেন দেশের নির্ভীক সাংবাদিক?
DIGIPUB অভিযোগ করেছে, আইন তৈরির সময় মিডিয়া সংগঠনগুলোর মতামত যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। সরকার কোনো স্পষ্ট গাইডলাইন বা FAQ প্রকাশ করেনি, যার অভাবে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। তাদের মতে, গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদমাধ্যম কেবল খবর পরিবেশনই করে না; বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর একটি কার্যকর নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসেবে কাজ করে। যদি সেই শক্তির হাতেই আইনি শৃঙ্খল পরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনস্বার্থে তথ্যপ্রবাহ মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়বে।
প্রসঙ্গত, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, উৎস-গোপনীয়তা ও জনস্বার্থে তথ্যপ্রবাহ একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য ততটাই জরুরি। মিডিয়া সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, সাংবাদিকতার জন্য স্পষ্ট ছাড় না থাকলে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কাজ কঠিন হয়ে যাবে।

Whatsapp
