আজ মেহেন্দি, কাল বিয়ে... কেন এত গোপনীয়তা রাখলেন রণলিয়া জুটি?

অবশেষে গুঞ্জনের অবসান। আগামী কাল, ১৪ এপ্রিল দুপুর ৩টের সময় বিয়ে হতে চলেছে রণবীর কাপুর ও আলিয়া ভাটের– সূত্র নিশ্চিত করছে এই খবর। ভি-ক্যাটের মতোই গেরিলা পদ্ধতি অনুসরণ করে বিয়ে করতে চলেছেন রণবীর-আলিয়া, খবর তেমনই ছিল। ভি–ক্যাট বা মৌনী রায়ের বিয়ের মতোই আচমকা এই বিয়েও সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। সাধারণত বৃহস্পতিবার বিয়ে সম্পন্ন হয় এই ভিআইপি দম্পতিদের, শুক্রবারের পেজ থ্রি-র কথা কিছুটা খেয়াল রেখেই, এক্ষেত্রেও কি তেমন কিছুই ঘটল? ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবির পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায় জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আজ সকালেই, তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-র একটি গানের ভিডিও পোস্ট করে তিনি লিখেছিলেন, ‘রণবীর এবং আলিয়ার জন্য, যে পবিত্র যাত্রা তাঁরা শিগগিরই শুরু করতে চলেছেন, তার প্রতি আমাদের এই নিবেদন।’ তাহলে কি বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিলই গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে টিনসেল টাউনের এই চর্চিত জুটি? এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে নানা খবর।

রণবীর-আলিয়ার বিয়ে নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই বলিপাড়ায় চর্চার শেষ নেই। বিয়ের আগে খুঁটিনাটি খবর জোগাড় করতে গিয়ে রীতিমতো নাকানি-চোবানি খাচ্ছে গোটা মিডিয়া মহল। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ‘রণলিয়া’ জুটির বিয়ের আসর বসার কথা ছিল রণবীরের পৈতৃক বাড়িতে, কিন্তু বিয়ের ভেন্যু হঠাৎ করেই পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন আর পৈতৃক বাড়ি নয়, বরং বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বান্দ্রার যে আবাসনে আলিয়া এবং রণবীর থাকেন– সেখানেই সাজছে তাঁদের বিয়ের আসর, এমনটাই জানা যাচ্ছে। শুধু কি বিয়ের ভেন্যু! কত কিছুই যে হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তন করে ফেলেছেন তারা। আলিয়ার কাকা নিজের মুখে বিয়ের তারিখের কথা মিডিয়াকে জানালেও, পরশুদিন আলিয়ার দাদা রাহুল ভাট মিডিয়াকে জানান, ১৭ তারিখ নাকি কোনও বিয়ে হচ্ছেই না। ১৩ কিংবা ১৪ তারিখে যে অনুষ্ঠানগুলি হওয়ার কথা ছিল, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দিনগুলিতে কোনও অনুষ্ঠান রাখাই হয়নি। যদিও আলিয়ায় দাদুর শারীরিক অবস্থা বুঝে বিয়ের দিনক্ষণ কিছু এগোতে কিম্বা পিছাতে পারে– একথা আগেই বলা হয়েছিল। কিন্তু আলিয়ার দাদা স্পষ্টই জানান, বিয়ের তারিখ মিডিয়াতে ছড়িয়ে পরার কারণেই বিয়ের দিনের পরিবর্তন করা হয়েছে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হতে চলেছে ১৪ এপ্রিল।

ভিকি এবং ক্যাটরিনার বিয়ের সময় যে সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে হয়েছিল, রণবীর-আলিয়া যেন তার থেকেও এক কাঠি উপর দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই দু’শো জন বাউন্সারকে নিয়োগ করা হয়েছে এবং ব্যবস্থা করা হয়েছে নানা রিস্টব্যান্ডের। নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে যদিও এই দু’শো জন বাউন্সার কখন কোথায় থাকবেন, তা কেউ জানে না। বলা হয়েছে, কমলা রঙের ব্যান্ড পড়া মানুষরাই কেবলমাত্র বিয়ের আসরে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ছবি তোলার বিষয়ে নিষেধাঞ্জা জারি করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। ভি-ক্যাট কিম্বা বলিউডের বেশ কিছু হেভিওয়েট বিয়ের মতোই বিয়ের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে চুক্তিপত্রে সই করানো হয়েছে। আলিয়ার রূপটানের শিল্পী থেকে ফোটোগ্রাফার– সবাইকেই সই করতে হয়েছে এই চুক্তিপত্রে। কানাঘুষোয় এও শোনা যাচ্ছে, তাঁরা নাকি নিজেদের বিয়ের সমস্ত ফুটেজ কোনও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করবেন বলেই এত নিরাপত্তার মুখাপেক্ষী হয়েছেন।   

আরও পড়ুন: রণবীর–আলিয়ার বিয়ে, চুপিসারে বিয়ে না কি অনুগামীদের জানিয়ে?

যদিও নামজাদা ব্যক্তিদের নিজেদের বিয়ের নানা ফুটেজ কোনও সংস্থাকে বিক্রি করার ট্রেন্ড যে আগে ছিল না, এমনটা নয়। প্রিয়াঙ্কা এবং নিক জোনাসও নাকি তাঁদের খ্রিস্টান মতে বিয়ের সমস্ত ছবি এবং পুরো ভিডিওই চ্যারিটির জন্য ইউএস-এর কোনও একটি সংস্থার কাছে বিক্রি করেছিলেন। এই ট্রেন্ড থেকে বাদ পড়েনি ‘কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব’ দলের অধিকারী অভিনেত্রী প্রীতি জিন্টার বিয়েও। কিন্তু এই সবকিছুকে পিছনে ফেলে গতবছর নজর কেড়েছিল ভি-ক্যাটের বিয়ে। মাঝখানে শোনা গিয়েছিল, তাঁরা নাকি নিজেদের বিয়ের সমস্ত ছবি এবং ভিডিও ভারতের বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘আমাজন প্রাইম’-কে আশি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছেন এবং আরও বলা হয়েছিল, বিয়ের আগের অনুষ্ঠানগুলিতে তাঁদের নাকি নিজেস্ব কোনও টাকাই খরচ করতে হয়নি। সংগীতের দিন শিল্পীদের খরচ থেকে শুরু করে বিয়ের ফোটোগ্রাফার– সবকিছুর খরচ এবং দায়িত্ব নিয়েছিল ‘আমাজন প্রাইম’-ই। কিন্তু এই খবর নেটমাধ্যমে বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পরার কিছুদিনের মধ্যেই ‘আমাজন প্রাইম’ গোটা বিষয়টাকেই নিছক এক গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে বলে, এমন কিছুতে কেন কোনও টাকা তাঁরা ইনভেস্ট করবেন, যার সমস্তকিছুই নেটমাধ্যমে ইতিমধ্যেই রয়েছে? এমন কোনও কথা নাকি কখনও হয়ইনি।

ভি-ক্যাটের বিয়ের আগে বলিপাড়ার বিরুষ্কা এবং দীপবীর- এই দু’টি বিয়ে সকলের নজর কেড়েছিল। বলা হয়, বলিউডের বিয়েতে এই লুকোচুরির ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল অনুস্কার হাত ধরেই। ইতালির টাস্কানিতে একটি বাংলোয় সাত পাকে ঘুরেছিলেন বিরাট এবং অনুস্কা। বলিউডের এই নজরকাড়া বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল কেবলমাত্র কিছু আত্মীয় এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে। অতিথিদের কোনওরকমের ছবি বা ভিডিও তুলতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং নিজেদের লোকেশন কোথাও শেয়ার করতেও বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরে আর কোনও লুকোচুরি তাঁরা রাখেননি। রিসেপশন লুক থেকে হানিমুনে সুইজারল্যান্ডের ছবি– সবই তাঁরা শেয়ার করেছিলেন স্যোশাল মিডিয়াতে।  

 এরপর  দীপিকা পাডুকোন এবং রণবীর সিং-এর বিয়েতেও  সেই লুকোচুরি এবং কড়া নিরাপত্তার একই গল্প চোখে পড়ে। বিয়েতে নিমন্ত্রিত আত্মীয়দের হাতে রিস্টব্যান্ড, মুঠোফোনের ক্যামেরাতে স্টিকার আটকানো, কিউআর কোড স্ক্যান করে ই-কার্ডে নিমন্ত্রিত অতিথিদের প্রবেশ করতে দেওয়া, কোনওকিছুই বাদ পড়েনি বিয়ের নিরাপত্তার খাতিরে। যদিও ক্যামেরা ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিষয়ে দীপিকা পরে বলেন, তিনি চেয়েছিলেন, সবাই যেন তাঁর বিয়েতে সম্পূর্ণভাবে যোগদান করেন এবং আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তে তাঁর কোনও অতিথিই নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেননি, বরং সকলে খুব আনন্দ সহকারে বিয়ের সকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

২০০৭ সালে জুনিয়র বিগ বি বা অভিষেক বচ্চনের বিয়েতেও নিরাপত্তার অভাব ছিল না। যদিও সেই বিয়ে হয়েছিল স্বয়ং বচ্চনসাহেবের বাসগৃহেই। অভিষেক এবং ঐশ্বর্যর বিয়েতে কঠোর নিরাপত্তার কিছু কারণও ছিল। বিয়ের কিছুদিন আগেই জাহ্নবী কাপুর নামে একজন মহিলা নিজের শিরা কেটে আত্মহত্যার করার চেষ্টা করেন এবং দাবি করতে থাকেন, তাকে নাকি আভিষেক বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও বিয়ের কিছুদিন আগে থেকেই ভক্তরা মিষ্টির প্যাকেট হাতে জড়ো হতে থাকেন বচ্চন প্যালেসের সামনে এবং দাবি করেন, তাঁরা নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করতে চান। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হলেও এত লুকোচুরি কিন্তু ছিল না। বিয়ের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মিডিয়ার উপস্থিতিও দেখা গিয়েছিল। তুলনায় কম পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল একদা মিস ওয়ার্ল্ডের।

 কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের বিয়ে এবং বিয়ে নিয়ে নানা জল্পনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিয়ে নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কোনও পরিবারপক্ষই। মিডিয়া অথবা পাপারাৎজি কোনও সময়েই কিন্তু কম ছিল না। গোটা বিশ্ব ঠিক যেমনভাবে প্রয়োজনীয়তায় নয়, ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছে– ঠিক সেইভাবেই বলিউডের তারকারাও বিয়ের ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন। এখন দেখার, রণবীর আর আলিয়া তাঁদের বিয়ের ফুটেজ কোনও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আদৌ বিক্রি করেন কি না।     

 

More Articles