হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের কাঠগড়ায় সেবি প্রধানরা! কী কী অভিযোগ রয়েছে সেবি প্রধানদের বিরুদ্ধে?
Hindenburg report and SEBI chief relations আদানি গোষ্ঠী যে টাকা অন্যত্র করেছে তাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেবির প্রধানদের অংশীদারিত্ব, উঠছে বিস্ফোরক অভিযোগ
হিন্ডেনবার্গ তাদের এক্স হ্যান্ডলে শনিবারেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, ভারত নিয়ে তারা বড় তথ্য সামনে আনতে চলেছে। সংস্থা সেই তথ্য প্রকাশ করতেই জাতীয় রাজনীতিতে হইচই পড়ে গিয়েছে। এবার হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে অভিযোগ উঠেছে, সেবি (সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) প্রধান মাধবী পুরী বুচ ও তাঁর স্বামী ধবল বুচের বিরুদ্ধে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আগেই অভিযোগ তুলেছিল, গৌতম আদানি শেয়ারদর বাড়িয়ে দেখায়। হিন্ডেনবার্গ তাদের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে, 'আদানি গোষ্ঠী যে টাকা অন্যত্র করেছে তাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেবির প্রধানদের অংশীদারিত্ব রয়েছে।' সংস্থা জানিয়েছে, বৈদেশিক ঠিকানায় গোপন অংশীদারি ছিল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া বা সেবি-র প্রধান মাধবী পুরী বুচ ও তাঁর স্বামী ধবল বুচের। বৈদেশিক এই সংস্থা হল আদানির সেই সংস্থা যার বিরুদ্ধে আগেই আর্থিক কারচুপির অভিযোগে উঠেছিল।
মাধবী ২০১৭ সালে সেবিতে যোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সেবিতে যোগ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর নজর দারি এড়াতে স্বামীর নামে বিদেশি বিনিয়োগ হস্তান্তর করা হয়। যাতে ধবলের নামে কিছু না পাওয়া যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই সময় ধবলের নামে প্রায় ৭.৩০ কোটি টাকা ছিল ফান্ডে। রিপোর্টে দাবি লেখা হয়েছে, ২০১৮ - তে নিজের ই-মেল থেকে স্বামীর নাম করে বিনিয়োগ থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন মাধবী। ২০২০- র মার্চ মাসে সেবির প্রধান হন তিনি। পরে তাঁর স্বামী ব্ল্যাকস্টোন সংস্থায় উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। ব্ল্যাকস্টোন একটি বিনিয়োগকারী সংস্থা। ধবল বুচের যোগদানের পর থেকেই ব্ল্যাকস্টোন সংস্থাটি ভারতের জমি, আবাসন, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট্রের (আরআইআইটি) ক্ষেত্রে লগ্নি করা শুরু করে। মাধবী সেবিতে যোগ দেওয়ার পর ব্ল্যাকস্টোন সংস্থাটিকে নানাভাবে সুবিধে পাইয়ে দিয়েছে বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে।
সংস্থার আরও দাবি, সেবি প্রধানদের বিদেশি বর্মুডা ও মরিশাস ফান্ডেও অংশীদারিত্ব রয়েছে। আবার গৌতম আদানির ভাইয়ের (বিনোদ আদানি) বিদেশে থাকা সংস্থাতেও অংশীদারিত্ব রয়েছে তাঁদের। এই বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৫ সালে।এরপর ২০১৭ তে মাধবীর সেবিতে যোগ দান। ২০২২-এ আবার মাধবী সেই সংস্থার চেয়ারপার্সন হন। দাবি করা হয়েছে, দুই ফান্ডের ভিত্তিতে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির প্রধানেরা বিনিয়োগ করেছিল। উল্লেখ্য, আই পি প্লাস ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আদানি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ এক ডিরেক্টর অনিল আহুজা। এই সংস্থার সূত্র ধরেই আদানি গোষ্ঠীর টাকা ভারতের বাইরে সাইফন করার অভিযোগ উঠেছিল বিনোদ আদানির বিরুদ্ধে। বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
দাবি রয়েছে, ২০১৫ সালের ৫ জুন সিঙ্গাপুর - স্থিত আইপিই প্লাস ফান্ড-১ এ অনেক টাকার লগ্নি করেন বুচ দম্পতি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ধবলের কনসালটেন্সি সংস্থা আগোরা অ্যাডভাইসরি-তে ধবল নিজে ডিরেক্টর। এবং এই সংস্থায় তাঁর স্ত্রী মাধবীর ৯৯% মালিকানা রয়েছে। ২০২২ সালে কনসালটেন্সি বাবদ ২ কোটির টাকারও বেশি আয় হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই মূল্য মাধবীর সেবি থেকে পাওয়া সরকারি মাইনের ৪.৪ গুণ।
অন্যদিকে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরের কারচুপির যে অভিযোগ ছিল, তার তদন্ত করেছিল সেবি। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের ভিত্তিতে ২৪ টি দিক নিয়ে তদন্ত চালিয়েছিল সেবি। এতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল। এখন তথ্য বলছে, যার উপর তদন্ত ভার ছিল তার সাথেই বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতা ব্যবহার করেই হিন্ডেনবার্গকে শোকজের নোটিস পাঠানো হয়েছে।
পদের অপব্যবহার সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বুচ দম্পতির বিরুদ্ধে। তাঁর সাথে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠছেই। এই তথ্য সামনে আসার পর থেকে জাতীয় রাজনীতিতে কম আলোড়ন পড়েনি। এ দিন রাতেই সেবি প্রধান মাধবী পুরী বুচের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন মহুয়া মৈত্র, সুস্মিতা দেব, সাকেত গোখলেরা। বিরোধীরা একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, বুথফেরত সমীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে সেবির কাছে তদন্তের আর্জি জানানো হলেও এর জন্যেই তারা তদন্ত করেনি। অন্যদিকে এই রিপোর্টে ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন, মাধবী পুরী বুচ ও তাঁর স্বামী ধবল বুচ। বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শিল্পপতি আদানির মধুর সম্পর্কের দিকে আঙুল তুলেছে বার বার। গত বছর হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর সেই তোপ আরও মজবুত করা গিয়েছিল। বিজেপিও তখন হিন্ডেনবার্গের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।