ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের জন্য হোটেলে রাত কাটানো থেকে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক! বিতর্ক পিছু ছাড়েনি 'বাদশা'-র

Shahrukh Khan: বলিউডের বাদশা সিনেমার জগতে প্রবেশ করার আগে থেকেই জীবনে চড়াই-উতরাই দেখে অভ্যস্ত হয়েছেন।

২০১১ সালে ৮ এবং ৯ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুর আইটিসি রয়্যাল গার্ডেনিয়াতে আইপিএল-এর নিলাম আয়োজিত হয়েছিল। সব দলের মতো কলকাতা নাইট রাইডার্সের সমর্থকরা উৎসাহ নিয়ে নিলামে নজর রেখেছিল। ২০১১ সাল এবং পরবর্তী সময়ে তাদের দলে কোন কোন খেলোয়াড় থাকতে পারে, তাই নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে নানা জল্পনা চলছিল। সবাইকে চমকে দিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স সেই বছরের নিলামে সবথেকে বেশি টাকা খরচ করে গৌতম গম্ভীরকে নিজেদের দলে নিয়েছিল। একইসঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে নেওয়ার জন্য তারা কোনও ইচ্ছাপ্রকাশ করেনি। এই ঘটনায় বহু সমর্থক হতচকিত হয়ে পড়েছিল। তাদের মনে হয়েছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নাইট রাইডার্সের অভিন্ন অঙ্গ। সৌরভকে দলে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের হলেও বহু সমর্থক এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছিল খোদ শাহরুখ খানকে। তাদের মনে হয়েছিল, দলের মালিক হওয়ার স্বার্থে বলিউডের বাদশার এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল।

৫৬ বছর বয়সি শাহরুখ খান বলিউডে তিরিশ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। এই তিরিশ বছরে প্রতিভা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য ভক্ত, পুরস্কার। যদিও বারবার বিতর্ক তাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। সিনেমায় সাহসী দৃশ্যে অভিনয় থেকে বলিউডের অপর এক অভিনেতার সঙ্গে বাদানুবাদ, সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের ফিসফাস থেকে আইপিএল দলে সেই শহরের পরিচিত খেলোয়াড়কে জায়গা না দেওয়া এবং মাদক কাণ্ডে নিজের ছেলের নাম জড়িয়ে যাওয়া- কিছু বিতর্কের আগুন খুব অল্প সময়ের মধ্যে শান্ত হয়েছে, আবার কিছু বিতর্কের আগুন দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বলিউডের বাদশা বলিউডের কল্যাণেই নিজের জীবনের বেশ কিছু কঠিন সময়ের সম্মুখীন হয়েছেন।

১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া 'মায়া মেমসাহেব' সিনেমায় শাহরুখ খান এবং দীপা সাহি একটি সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগেই সেন্সর বোর্ডের নির্দেশে সেই দৃশ্যটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি জনপ্রিয় পত্রিকা একটি চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করে। সেই পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে সিনেমার শুটিং চলাকালীন সিনেমার পরিচালক শাহরুখ এবং দীপাকে একটি হোটেলে একসঙ্গে রাত কাটাতে বলেছিলেন। তাদের মধ্যের জড়তা দূর করার চেষ্টা করতেই পরিচালক এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে, সিনেমার পরিচালক কেতন মেহতা দীপার স্বামী ছিলেন। এই খবর প্রকাশ হতেই বিতর্ক শুরু হয়।

Movie Scene

'মায়া মেমসাহেব'-এর বিতর্কিত দৃশ্য

আরও পড়ুন: ‘তুমি নেশাগ্রস্ত, তাই ঝামেলা করেছ’, কেন শাহরুখ খানকে বলেছিলেন বিগ বি?

যদিও আসল বিতর্ক তখনও শুরু হয়নি। শাহরুখ খান এই খবর জানতে পেরে মানসিকভাবে বিচলিত হয়েছিলেন। সেই সময়ে একটি অনুষ্ঠানে কিথ ডিকোস্টা নামে ওই পত্রিকার একজন সাংবাদিকের সঙ্গে শাহরুখ খানের দেখা হয়। কোনও এক অজানা কারণে শাহরুখ খানের মনে হয়েছিল যে, কিথ আসলে সেই বিতর্কিত খবর প্রকাশ করেছেন। যদিও তা সত্য ঘটনা ছিল না। শাহরুখ খান সত্যতা যাচাই না করেই কিথকে প্রথমে অনুষ্ঠানে অপমান করেন এবং পরে তাঁর বাড়ি পৌঁছে যান। কিথের বাড়ি পৌঁছে তিনি গালিগালাজ শুরু করলে সাংবাদিক পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ শাহরুখ খানকে গ্রেফতার করে বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শাহরুখের এক বন্ধু তাঁর জামিন করায়। পরবর্তীকালে যদিও শাহরুখ খান জানতে পেরেছিলেন যে, সেই সাংবাদিক নির্দোষ ছিলেন। তখন তিনি সেই সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।

২০০৮ সালে বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের পার্টিতে শাহরুখ খান এবং সলমন খানের মধ্যে বাদানুবাদ হয়েছিল। অনেকের মতে, পরিস্থিতি হাতাহাতি অবধি গড়াতে পারত। এই ঝামেলার কারণ সম্পর্কে বহু মতামত শোনা যায়। কারও মতে শাহরুখ খানের একটি ফ্লপ টেলিভিশন শো নিয়ে সলমন খান বিদ্রুপ করায় ঝগড়া শুরু হয়েছিল। কারও মতে, সাধারণ বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক চলতে চলতে শাহরুখ খান সলমনের প্রাক্তন প্রেমিকার কথা বলেন। সেই সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য সলমনকে দায়ী করেন। এই কারণে বাদানুবাদ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে একটি পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠানে শাহরুখ এবং সলমন বলেন যে, তাঁদের মধ্যে ঝামেলা খুব সামান্য বিষয় নিয়ে হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে জীবনে কে বেশি খুশি, সেই নিয়ে তর্ক হতে হতে দু'জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। শাহরুখ এবং সলমন বিষয়টি 'ছোট' বললেও, তাঁদের ভক্তদের কাছে ২০০৮ সালে এই বিষয়টা মোটেই সাধারণ অথবা ছোট বলে মনে হয়নি। শাহরুখ এবং সলমন সেই সময়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। পরবর্তীকালে একটি অনুষ্ঠানে তাঁদের সম্পর্কের বরফ গলেছিল। গত বেশ কিছু বছরে তাঁদের একসঙ্গে সিনেমা এবং রিয়‍্যালিটি শো-তে দেখা গিয়েছে।

Controversial pictures of Shahrukh Khan

যে জন আছে মাঝখানে...

শাহরুখ খানের সম্পর্কে বলা হয় যে, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব মজবুত। এই সম্পর্কে সম্ভবত চিড় ধরার উপক্রম হয়েছিল, যার জন্য, তাঁর নাম প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। বলিউডে ফিসফিস শোনা যায় যে, শাহরুখ খান সম্ভবত প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি প্রিয়াঙ্কাকে করণ জোহরের জন্মদিনের পার্টিতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। যদিও এই সম্পর্কের কথা শাহরুখ কোনও দিন স্বীকার করেননি। তবুও বহু মানুষ বলে যে, আসলে তাঁর স্ত্রী-র কথা মেনে তিনি সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। গৌরীর কথা শুনেই পরবর্তীকালে তিনি প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কোনও সিনেমায় অভিনয় করেননি। এই বিতর্ক পুনরায় বেড়ে ওঠে, যখন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া 'ডার্টি লন্ড্রি' নামে একটি শো-তে গিয়ে একটি জ্যাকেট দেখিয়ে বলেন যে, সেই জ্যাকেট আসলে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের জ্যাকেট। বহু মানুষ এই ঘটনার পরে দাবি করেছিল যে, সেই একই চামড়ার জ্যাকেট শাহরুখ খানকে পরতে দেখা গিয়েছে। এই শো দেখার পরে এক ভক্ত হঠাৎ একটি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, প্রিয়াঙ্কা শাহরুখের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সম্ভবত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সেই পোস্টে ভুলবশত লাইক করে ফেলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে আনলাইক করেও দিয়েছিলেন। সেই কথাও ওই ভক্ত অপর একটি পোস্ট করে জানিয়েছিলেন।

শাহরুখ খানের জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে বড় এবং সাম্প্রতিক বিতর্ক তাঁর নিজের কোনও কাজ থেকেই হয়নি। ২০২১ সালে তাঁর ছেলে আরিয়ান খানকে বেআইনি মাদক নেওয়ার অপরাধে একটি প্রমোদতরী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ছেলের গ্রেফতারি থেকে জেল হেফাজতের মতো ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিচলিত হয়েছিলেন। তাঁকে ঘরে-বাইরে, সংবাদমাধ্যম থেকে হাজার ভক্ত, সমালোচকদের সামলাতে হয়েছিল। তাঁর ছেলের গ্রেফতার হওয়ার পিছনে ছিল মাদক, এবং এর জন্য বহু মানুষ শাহরুখ খানকে দায়ী করেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত আরিয়ান খানকে জেল হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

বলিউডের বাদশা সিনেমার জগতে প্রবেশ করার আগে থেকেই জীবনে চড়াই-উতরাই দেখে অভ্যস্ত হয়েছেন। বলিউড তাঁকে যেমন অনেক কিছু দিয়েছে, সেইরকম তাঁর থেকে অনেক কিছু নিয়ে নিয়েছে। এই সবকিছু সঙ্গে নিয়েই তাঁকে এগিয়ে যেতে হয়। তিনি জানেন যে, ঘরের ভেতরে তিনি শাহরুখ হতে পারেন, কিন্তু তাঁর ভক্তদের কাছে তিনি এসআরকে, বলিউডের বাদশা। তাঁর জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই। তাকে তবু চলতে হবে, কারণ, 'পিকচার আভি বাকি হ‍্যায়'।

More Articles