খরচ হয়নি এক টাকাও! ১৬ বছর ধরে আদিম মানুষের মতো গুহায় বসবাস এই ব্যক্তির, কিন্তু কেন?

Man living in cave 16 years : আদিম মানুষরা যেরকম গুহাবাসী ছিল, প্রকৃত অর্থে সেভাবেই নিজের জীবন কাটাচ্ছেন এই মানুষটি

নিজের একটা ঝাঁ চকচকে বাড়ির স্বপ্ন সবারই রয়েছে। নতুন আসবাবপত্র, একটু ভালো খাবার, নিজের একটা জায়গা – অত্যন্ত স্বাভাবিক এই ইচ্ছা। কিন্তু সেসব স্বপ্ন তো আর থাকলে হয় না, পূরণ করতে হয়। আর পূরণ তো এত সহজে হওয়ার নয়! তার জন্য দরকার টাকা। বাড়ি না কিনতে পারলে ভাড়া হিসেবেই থাকতে হয় অনেককে। সেইসঙ্গে আছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মানব সভ্যতা, নাগরিক জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে জড়িয়ে রয়েছে টাকা। সেজন্যই আমরা উপার্জন করি। এই নগর সভ্যতা, টাকা, চাকরি এসব থেকে অনেক দূরে চলে যাই, মাঝে মাঝে এমন ইচ্ছে করে না আপনার?

আমেরিকার ড্যানিয়েল শেল্লাবার্গারেরও (Daniel Shellabarger) তেমনই ইচ্ছে মনের ভেতর দানা বাঁধছিল। কিন্তু আমরা, মানে সাধারণ মানুষরা নিজেদের সেই গণ্ডি থেকে বেরোতে পারি না। চাকরি করতে হয়, উপার্জনের টাকায় সংসার সামলাতে হয়, বাড়িভাড়াও দিতে হয়। হাজার একটা দুশ্চিন্তার মধ্যেই জীবন কাটাতে হয়। কিন্তু ড্যানিয়েল ঠিক করলেন, এসব তিনি ধর্তব্যের মধ্যেই আনবেন না। কিছুতেই থাকবেন না আর এই নগর সভ্যতায়। আর তার জন্য করলেন অদ্ভুত একটি জিনিস!

আচ্ছা, আপনাকে যদি বলা হয়, সমস্ত কিছু ছেড়ে একটা নির্জন স্থানে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে, বোনের মধ্যে কাটাতে, পারবেন? অনেকেই হয়তো একটা সময়ের পর পিছিয়ে আসবেন। কিন্তু ড্যানিয়েল সেই কাজটাই করে দেখিয়েছেন। এক-দু’বছর নয়, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি নগর সভ্যতার থেকে অনেকটা দূরে কাটাচ্ছেন। তাও যে সে জায়গায় নয়, গুহার মধ্যে! হ্যাঁ, আদিম মানুষরা যেরকম গুহাবাসী ছিল, প্রকৃত অর্থে সেভাবেই নিজের জীবন কাটাচ্ছেন ড্যানিয়েল শেল্লাবার্গার।

ব্যক্তিগত জীবনে বেশ ভালো জায়গায় চাকরি করতেন ড্যানিয়েল। সন্সথার যথেষ্ট উঁচু পদে কাজ করতেন, সম্মানও ছিল। কিন্তু নগর সভ্যতা যেন তাঁর গলা টিপে ধরত। চারিদিকে যেন টাকার ইঁদুর দৌড় চলছে। খালি আলো, চিৎকার, আওয়াজ… এখানে জীবন কোথায়? একটা সময় এই নাগরিক জীবন নিয়ে ‘অবসাদগ্রস্ত’ও হয়ে গিয়েছিলেন ড্যানিয়েল। বারবার এত বেশি টাকার বাড়ি ভাড়া দিতেও বিরক্ত লাগছিল তাঁর। তারপর ঠিক করলেন, আর নয়। এখান থেকে বেরোতে হবে।

তখন নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়। বাড়িতে বাবা-মা ছিলেন। সেসব কাটিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন তিনি। পকেটে যে কটা টাকা ছিল, সব একটা টেলিফোন বুথের মধ্যে রেখে দিলেন। কেউ না কেউ তো এসে এগুলো নিয়ে যাবে! তারপরই একেবারে ভ্যানিশ। আমেরিকার উটাহের রুক্ষ শুষ্ক পাথুরে অঞ্চলকেই নিজের বাড়ি বানিয়ে নিলেন ড্যানিয়েল শেল্লাবার্গার। এখানে নাগরিক জীবনের আলো নেই, টাকা নেই, কিচ্ছু নেই। তারপর কেটে গিয়েছে ১৬ টি বছর। নিজের বাবা-মাকে দেখতে একবারই ফিরেছিলেন শহরে। আর যাননি। দিব্যি বেঁচে রয়েছেন ড্যানিয়েল। তাও এক পয়সাও খরচ না করে!

কী করে এই পরিবেশে টিকে আছেন? হেসে ফেলেন ড্যানিয়েল। তাঁর মতে, টিকতে চাইলে যে কোনও পরিবেশেই টেঁকা যায়। আর তিনি তো এটাই চেয়েছিলেন! রাস্তার ধারে পড়ে থাকা খাবার, গাছের ফল মূল খেয়েই জীবন কেটে যাচ্ছে। আর ঘুম? তার জন্য তো পাহাড়ের গুহা রয়েইছে! একটা কার্ডবোর্ড বিছিয়ে শুয়ে পড়লেই হল। এভাবেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন তিনি। এক ঝলকে চোখের সামনে ভেসে আসবে ক্রিস ম্যাকক্যান্ডলেসের কথা। আমেরিকার যে যুবক একসময় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল স্রেফ অ্যাডভেঞ্চারের জন্য। নগর সভ্যতা থেকে দূরে, জীবনটাকে দেখার জন্য। সেখানেই মারা যান তিনি। ড্যানিয়েলও এখন বহাল তবিয়তে আছেন। দূরে আছেন, আদিম মানুষের মতো আছেন, কিন্তু বেঁচে আছেন। সেটাই তো সবচেয়ে বড় কথা, তাই না!

More Articles