হাড়হিম করা সঙ্গীত! কাকার হাড়গোড় দিয়ে মেটাল গিটার তৈরি করলেন ইউটিউবার!

Guitar of Human Bones: ভালো বাজানো যায় তো বটেই, গিটারটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এই গিটার পাঁজরের খাঁচার ভিতর ঢুকে বাজাতে হয়।

বৃত্রাসুর তখন স্বর্গে চরম ঝামেলা করছে। একে মারছে, ওকে খেয়ে নিচ্ছে, একবার তো ইন্দ্রকে আস্ত গিলেই নিয়েছে। বাকিরা 'হাই-অস্ত্র' প্রয়োগ করে হাই তোলালেন অসুরকে। ইন্দ্র বেরিয়ে এলেন। এভাবে তো চলে না। মহাদেব মহা জ্বলায় ফেলেন। যে যা তপস্যা করে, মহাদেব তাতে খুশি হয়ে বর দিয়ে দেন। সেই বরে সকলেই প্রায় অমর হতে চায়, মানুষ, পশু, দেবতা কেউ যেন না মারতে পারে। বৃত্রাসুরও তেমনই চেয়েছে, পেয়েওছে। কোনও সাধারণ অস্ত্রে তাকে মারা যাবে না। ঋষি দধীচির হাড়েই একমাত্র অস্ত্র তৈরি হতে পারে। দধীচির হাড় দিয়ে বজ্র তৈরি না হলে দেবতাদের কপালে ভোগান্তি ছিল। শকুনির বাবাও নিজের আঙুল-হাড় দিয়েই তৈরি পাশায় ছেলেকে জিতিয়েছিলেন। হাড়গোড় বিস্তর কাজে এসেছে পুরাণে, তারপর সবচেয়ে বেশি কাজে এসেছে ডাক্তারি আর তন্ত্রসাধনায়। কিন্তু সঙ্গীতে? মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি হওয়া বাদ্যযন্ত্র কি আছে? আছে, আলবাত আছে। নিজের প্রিয়জনের হাড় দিয়ে আস্ত গিটার তৈরি করা হয়েছে এই গ্রহেই!

ইউটিউবারের নাম প্রিন্স মিডনাইট! মধ্যরাতের রাজপুত্তুরের কার্যকলাপ খানিক অবাক করাই। মানুষের কঙ্কাল দিয়ে গিটার তৈরি করেছেন তিনি। আস্ত একটা গিটার। শো-পিস নয়, রীতিমতো রোজ রেওয়াজ করেন সেটা দিয়েই! প্রকৃত মানব কঙ্কাল থেকে তৈরি এই গিটার দেখে তাজ্জব হয়েছেন মানুষরা। প্রিন্স মিডনাইটের কাকা ফিলিপ ৯০-এর দশকে গ্রিসে প্রয়াত হন। ১৯৯৬ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় নাকি খুব অল্পবয়সেই মারা গিয়েছিলেন ফিলিপ। কাকা যে নিজের হাড় দিয়ে গিটার বানাতে বলে গেছিলেন এমন কিন্তু না। বরং আর পাঁচজন চিন্তাশীল মানুষ যেমন করেন, সেভাবেই মূলত স্থানীয় কলেজে নিজের কঙ্কাল দান করে গেছিলেন।

বছর ২০ পরে, একটি কবরস্থানে কাকার হাড়গোড় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই কবরস্থানে রাখার জন্য পরিবারকে ভাড়া দিতে হয়েছিল। ওই স্কুলটি আসলে ফিলিপের কঙ্কাল আর ব্যবহার করেনি এবং বিশাল এক কাঠের বাক্সে প্রিন্সদের পরিবারকেই ফেরত দেয়। কিন্তু এভাবে হাড়গোড় নিয়ে কী করবেন তাঁরা বুঝতে পারেননি। প্রিন্স মিডনাইট তাঁর কাকার দেহাবশেষের ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং স্টেট অ্যাটর্নির অফিস সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন। গ্রিস থেকে আসা হাড়ভর্তি বাক্স নিয়ে কী করা যায়?

আরও পড়ুন- উটচালকদের গান কীভাবে হয়ে উঠল বাঙালির নিজস্ব টপ্পা

আরও পড়ুন-‘গানের ওপারে’: বিশ্বসঙ্গীত এবং কিছু ট্র্যাজিক ইতিহাস

প্রথমে তো বুঝতেই পারছেন না পরিবারের কেউই! কবর দেবেন, দাহ করবেন, নাকি চিলেকোঠায় তুলে রেখে দেবেন! কিন্তু এসব করে কি কাকাকে শ্রদ্ধা জানানো যায়? তখনই তাঁর মাথায় আসে এই বিচিত্র ভাবনা! প্রিন্স মিডনাইট ঠিক করেন, কাকাকে গিটারে পরিণত করবেন। বিচিত্র তো বটেই, উদ্ভটও এবং চ্যালেঞ্জিংও। মানুষের কঙ্কাল দিয়ে গিটার করা যায় আদৌ? প্রচুর গবেষণা করতে শুরু করেন প্রিন্স মিডনাইট। এমনকী ফ্লোরিডার ডিন গিটারসে দু'জনের সঙ্গে পরামর্শও করেন। তাঁরাই অবশেষে গিটারটি তৈরি করেছিলেন। কাকা ও তাঁর কঙ্কালের নামেই গিটারটির নাম, ফিলিপ স্কেলেকাস্টার।

"সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গিটারটা আদৌ বাজানোর যোগ্য হবে কী না তা নিশ্চিত করা," বলেছিলেন প্রিন্স মিডনাইট। কারণ এ তো আর দধীচির হাড় নয় যে বজ্রকঠিন! সঙ্গীতের যন্ত্র নির্মাণের সবচেয়ে কঠিন অংশই হল যন্ত্রটা সুরে বাজছে কী না তা নিশ্চিত করা। কঙ্কাল গিটারের পারফরম্যান্স সম্পর্কে অবশ্য এখন একদম উচ্ছ্বসিত প্রিন্স মিডনাইট। ভালো বাজানো যায় তো বটেই, গিটারটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এই গিটার পাঁজরের খাঁচার ভিতর ঢুকে বাজাতে হয়।

“আমি বিশ্বাস করি আমার কাকা ফিলিপের কিছু অংশ এখনও এই গিটারে আছে, আক্ষরিকভাবেও এবং রূপক অর্থেও। এক উষ্ণ উপস্থিতি টের পাই। মেটাল গিটার হিসাবে নিজের দ্বিতীয় জন্ম কাটাচ্ছেন কাকা," মনে করেন প্রিন্স মিডনাইট। কাকার মরদেহকে রক্ষাই শুধু নয় কাকার সঙ্গে জড়িত তাঁর স্মৃতিকে বাঁচাতে পেরেও উচ্ছ্বসিত প্রিন্স।

More Articles