শাহরুখের নিজস্ব স্বর্গ 'মন্নত'-এর অন্দর কেমন?
Shah Rukh Khan: ভাই কিশোর ভানু সঞ্জনা ট্রাস্টের কাছ থেকে যখন বাড়িটি কেনেন কিং খান, তখন এর নাম ছিল ‘ভিলা ভিয়েনা’। কেনার পর নাম বদলে প্রথমে ‘জন্নত’ ও পরে ‘মন্নত’ নাম রাখা হয়।
বিষয় যখন খোদ কিং খান, তখন অতি সাধারণ খবরও ভাইরাল। স্টারদের নিয়ে বরাবরই কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের। নিতান্ত সাদামাটা জীবন থেকে তারা উঁকি দিতে চায় আপাত রঙিন জীবনের অন্তরালে। এবং সেই রঙিন জীবন যদি হয় তাদেরই ভেতর থেকে উঠে আসা কোনও এক সাধারণ মানুষের অর্জন, তবে তা নিয়ে আবেগ স্বাভাবিকভাবে একটু বেশিই হয়। শাহরুখের জীবন, চলাফেরা, সম্পত্তি, বাংলো– তাই মানুষের চর্চার কেন্দ্রে থেকেছে বরাবরই। এখন সামাজিক মাধ্যমের কারণে তারকাদের সঙ্গে সরাসরি ভাব আদানপ্রদানেরও সুযোগ হয়েছে ভক্তদের।
হালে শাহরুখের ‘পাঠান’-এর একটি ছবি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভক্তদের মধ্যে। শেষ ‘জিরো’-র পর বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করছেন ভক্তেরা। তারপর 'পাঠান' এবং রাজকুমার হিরানির সঙ্গে ‘ডানকি’ নামের একটি সিনেমার ঘোষণা করেছেন শাহরুখ। এতে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছে নেটদুনিয়ায়। একের পর এক ঢেউয়ের চূড়ায় কিং খান তাঁর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। এরই মাঝে ভাইরাল হয় শাহরুখের নেমপ্লেট পরিবর্তনের ছবি।
আরও পড়ুন- খেলা দেখতে এসে রানি মজলেন প্রেমে! বিশ্বের প্রাচীনতম সেই ক্লাব আছে কলকাতাতেই
শাহরুখের বাংলোর নাম যে ‘মন্নত’ একথা বোধ করি সকলেই জানেন। মন্নতের নেমপ্লেট বহুবার পাল্টেছে। কিন্তু যেটি সবথেকে পরিচিত, সেটি কালো ও সোনালি। সেই নেমপ্লেট বদলে গিয়ে ফ্লুরোসেন্ট রেডিয়াম নেমপ্লেট এসেছে। মূলত ভক্তদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত কিং খানের। সন্ধে থেকেই একরকম জ্বলজ্বল করতে শুরু করে এই প্লেটটি। তাতে ছবি তোলা, সেলফি তোলার সুবিধাই হবে ভক্তদের। কেউ কেউ ২০০১ থেকে কতখানি বদলে গিয়েছে মন্নাতের নেমপ্লেটগুলি, সেই স্মৃতিচারণ করেছেন, কেউ নতুন নেমপ্লেটের আঙ্গিকে ভীষণ খুশি, আবার কেউ পুরনো লেখার সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। কেউ লিখেছেন, “ভাগ্যিস পুরনোগুলোর সঙ্গে ছবি তুলে রেখেছিলাম, এই নেমপ্লেটে সেই আভিজাত্যটাই নেই!” আবার কেউ লিখেছেন, “শাহরুখ একের পর এক অসামান্য নেমপ্লেট লাগান, এটি আগেরটিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।”
আরও পড়ুন: ‘আমি না থাকলে মান্নত থাকত না’, কেন বলেছিলেন সলমন?
আসলে ফ্যানবেসের কারণ অভিনয়জীবন হলেও, তা কেন্দ্র নয়। অভিনয়ের তারকা পর্দায় থাকেন, সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু অভিনেতার ব্যক্তিজীবন বাস্তবের মাটিতে। তাই ভক্তির ঝড়ের কেন্দ্রে থাকে তাঁদের যাপন। ফলে অন্ধ ভক্তির ব্যাপারটা কে কেমন অভিনয় করছেন, শুধু তার ওপর নির্ভর করে না। আবার এই বাস্তব যাপন, ভক্তদের সঙ্গে আদানপ্রদান পাল্টা সিনেমায় প্রভাব ফেলে। পরস্পরকে লিখে চলার এই বুননের মাঝে জড়িয়ে যায় ব্যক্তিগত ও জনতার বৃত্ত। যেমন, জন্মদিনে বা বিশেষ দিনে বাংলোর মাথায় চড়ে ভক্তদের হাত দেখানো এমনই এক আইকনিক ইমেজ হয়ে ওঠে, যাকে পাল্টা ব্যবহার করে ‘ওম শান্তি ওম’-এর মূল চরিত্রটির স্টারডম বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়। ‘ফ্যান’ সিনেমায় আমরা দেখতে পাই, শাহরুখ-অভিনীত তারকা চরিত্রের বাড়ির শুটিং হয়েছে মন্নাতেই। এভাবেই তারকার বাসস্থানের অনুষঙ্গ বারবার ব্যবহৃত হয়ে বাস্তব থেকে কল্পনার জগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে। চরিত্র হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন- ‘তুমি নেশাগ্রস্ত, তাই ঝামেলা করেছ’, কেন শাহরুখ খানকে বলেছিলেন বিগ বি?
আজ যেমন নেমপ্লেটে লেখা, ‘মন্নত, ল্যান্ডস্ এন্ড’, চিরকাল এমন ছিল না। এই বাংলো বাড়িটি অনেকটাই পুরনো। ১৯২০-র আশপাশে নির্মিত হয় বর্তমানে এই গ্রেড থ্রি হেরিটেজ বাংলো। তৎকালীন ইতালির আধুনিক ঘরানার স্থাপত্যের মধ্যে মিশে গিয়েছে নিও-ক্লাসিকাল রীতির বৈশিষ্ট্য।
বিরাট বিরাট শোওয়ার ঘর বাদেও মন্নতে রয়েছে একটি বক্সিং রিং, একটি টেনিস কোর্ট এবং একটি বিশালাকৃতির পুল। ভাই কিশোর ভানু সঞ্জনা ট্রাস্টের কাছ থেকে যখন বাড়িটি কেনেন কিং খান, তখন এর নাম ছিল ‘ভিলা ভিয়েনা’। কেনার পর নাম বদলে প্রথমে ‘জন্নত’ ও পরে ‘মন্নত’ নাম রাখা হয়। পশ্চিম ব্যান্ডস্ট্যান্ড বান্দ্রা অঞ্চলে একটি সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টের দাম যেখানে ৪৩,০০০ টাকা প্রতি স্কোয়ার ফুট, সেখানে সেই হিসেব ধরে মন্নাতের ২৬,৩২৮.৫২ স্কোয়ার ফুটের দাম দাঁড়ায় ১১৩.২১ কোটি। সেলিব্রিটিদের জন্য এ অত্যন্ত স্বাভাবিক অঙ্ক। কিন্তু তার সঙ্গে ঐতিহ্য ও এলাকা বিশেষের মূল্য জুড়লে তাই বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ কোটিতে। হ্যাঁ, কিং খানের বাংলোর মূল্য ২০০ কোটি টাকা। ভারতের শহরাঞ্চলে গড়ে ঘর হয় ৫০৪ স্বোয়ার ফুট জায়গার উপরে, বা মাথাপিছু বরাদ্দ থাকে ১১৭ স্কোয়ার ফুট। সেই হিসেব অনুযায়ী, মন্নতে ২২৫ জন লোক স্বচ্ছন্দে বাস করতে পারে।
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে সলমন খান বলেন, এককালে তিনিও ওই বাংলো কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবা সেলিম খান তাঁকে বাধা দেন। বলেন, “এত বড় বাড়ি নিয়ে কী করবে?” সলমনেরও সেই প্রশ্নই। এত বড় একটা বাড়িতে শাহরুখ করেটা কী! শুধু আকারেই বড় নয়, মন্নতে প্রচুর দামি আসবাব রয়েছে, রয়েছে আর্ট পিসও। যার মধ্যে সুভাষ আছওয়াতের আঁকা ‘রিক্লানিং ক্লাউন’ রয়েছে, রয়েছে মানুষপ্রমাণ রাধা-কৃষ্ণের মার্বেলমূর্তি। গৌরী নিজে একজন আর্কিটেক্ট, কাইফ ফারুকির সঙ্গে তিনি নিজেই মন্নতের অন্দর সাজিয়ে তুলেছেন। সবকিছু মিলিয়ে দুরন্ত শ্বাসরোধী শহরের মধ্যে শাহরুখ যেন নিজস্ব এক টুকরো স্বর্গই বানিয়ে ফেলছেন।