গভীর জঙ্গলে ইঁদুর-বিলাই খেলা! পহেলগাঁও জঙ্গিদের যেভাবে ধাওয়া করছে সেনা
Kashmir Terrorists: সাধারণত এমন ধাওয়া খাওয়া জঙ্গিদের কিন্তু কিছু সাধারণ জিনিসের প্রয়োজন হয়ই — খাবার, জল, সাহায্য — এবং তখনই তাদের কোনও না কোনও গ্রামে দেখা যায়। কিন্তু জঙ্গিদের এই দলটি ভিন্ন।
পহেলগাঁওয়ের বৈসরন তৃণভূমিতে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার প্রায় একসপ্তাহ অতিক্রান্ত হতে চলল। তাৎক্ষণিক আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে কূটনৈতিক স্তরে চলছে এই হামলা মোকাবিলার পরিকল্পনা। এক স্থানীয় সহ ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুতে দেশজুড়েই ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। হামলার পর থেকেই টিআরএফ জঙ্গিদের, যারা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, সন্ধানে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। চার সন্ত্রাসী এখনও পলাতক। দক্ষিণ কাশ্মীরের ঘন বনের মধ্য দিয়ে তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, নিরাপত্তারক্ষীদের দল একবার নয়, দু'বার নয় কমপক্ষে চারবার এই হামলাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে প্রতিবারই হাত ফস্কে গেছে জঙ্গিরা। জানা যাচ্ছে, একবার গহিন জঙ্গলের মধ্যে গুলি বিনিময়ও হয়েছে। কিন্তু তাতেও ফলাফল শূন্য। পহেলগাঁওয়ের হত্যাকারীরা কাশ্মীর উপত্যকার জঙ্গলেই উধাও হয়ে যায়।
ওই প্রতিবেদনেই আরও জানা যাচ্ছে, স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবর, গোয়েন্দা তথ্য এবং অবিরাম টহলদারির মাধ্যমেই সন্ত্রাসীদের খোঁজ চলছে। কিন্তু এই ঘন জঙ্গলে কাউকে ধাওয়া করা বেশ কঠিন। সমতলে জঙ্গিদের নিশানা করা আর জঙ্গলে ধাওয়া করা ভীষণই আলাদা। জঙ্গলে স্বাভাবিকভাবেই দৃশ্যমানতা কমে যায়, বন্দুকের আওয়াজ গাছে গাছে প্রতিধ্বনিত হয়ে যায় এবং এবড়োখেবড়ো ভূখণ্ডে সময়ও লেগে যায় প্রচুর।
আরও পড়ুন- পুলিশের নজর এড়িয়েই বৈসরনে পর্যটকরা! নিরাপত্তার যে যে গাফিলতি স্বীকার কেন্দ্রের
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এটা খানিকটা 'বিড়াল এবং ইঁদুরের খেলা’। "কখনও কখনও জঙ্গিরা আমাদের খুব কাছেই আছে। কখনও কখনও আমরা তাদের দেখতেও পাচ্ছি। কিন্তু আমরা সেখানে নিশানা করে এগোতে না এগোতেই তারা সরে যাচ্ছে। জায়গাটা ঘন জঙ্গল। নিজের থেকে পাঁচ ফুট দূরে একজন মানুষকেও ভালো করে দেখা যায় না," বলছেন কর্মকর্তারা।
হাপাত নড় গ্রামের কাছেই প্রথম জঙ্গিদের দেখা যায়। সেনাবাহিনী ছুটে আসে কিন্তু গাছ ও পাথুরে খাদের মধ্যে দিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে, আবার কুলগামের জঙ্গলে দেখা যায় ওই জঙ্গিদের। কিছুক্ষণ গুলিগোলাও চলে। তারপর সব চুপচাপ! আবার ওদের দেখা যায় ত্রাল পাহাড়ের কাছে। আবার দেখা যায় কোকেরনাগের চারপাশে। সেনা আর জঙ্গিদের এই ধরপাকড় চলতেই থাকে কিন্তু সফল হয় না।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই সন্ত্রাসীরা অত্যন্ত সতর্ক। সাধারণত এমন ধাওয়া খাওয়া জঙ্গিদের কিন্তু কিছু রোজের সাধারণ জিনিসের প্রয়োজন হয়ই — খাবার, জল, সাহায্য — এবং তখনই তাদের কোনও না কোনও গ্রামে দেখা যায়। কিন্তু এই দলটি ভিন্ন। এদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না চিরাচরিত পদ্ধতিতে।
হয়তো এক রাতে, খাবারের জন্য কোনও একটি বাড়িতে চড়াও হয় এবং কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই সেখান থেকে সরে যায়। টহলদারি দলের কাছে যতক্ষণে খবর পৌঁছয়, ততক্ষণে হামলাকারীরা সেই জায়গা থেকে চলে যায়। কোন ছাপ ছেড়ে যায় না, কোনও সাক্ষীও পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন- ভারতের আক্রমণ আসন্ন, তৈরি পাক বাহিনী? যা জানাচ্ছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী
এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানও কঠিন। কিশতওয়ার রেঞ্জ অন্যান্য সময় বরফে চাপা পড়ে থাকে। কিন্তু এই বছর তা খোলা রয়েছে। বরফবিহীন অবস্থায়, এই জায়গাটি হচ্ছে জম্মুর ঘন জঙ্গলের দিকে দক্ষিণ অংশের একটি লুকনো পথ। এখানে নজরদারি চালানো কঠিন ভৌগোলিক কারণেই। ফলে অনুপ্রবেশকারীদের কাছে জায়গাটি পছন্দের৷
আপাতত সেনাবাহিনীর লক্ষ্য প্রবল চাপ তৈরি করা যার মুখে আক্রমণকারীরা হয়তো ভেঙে পড়বে। সেই কোনও একটি ভুল, কোনও একটি বার্তা, কোনও একটি অসতর্ক পদক্ষেপের অপেক্ষা করছে সেনা। নিহত পর্যটকদের কাছ থেকে দু'টি চুরি করা মোবাইল ফোনই এর মূল চাবিকাঠি হতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যে কোনও সংকেত, কোনও আন্তঃসীমান্ত বার্তার জন্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
কিন্তু সেই 'ভুল' না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ কাশ্মীরের গহিন বনেই হামলাকারীদের আশ্রয় হবে। সেনা আর জঙ্গিদের এই ইঁদুর-বিলাই খেলাও চলতেই থাকবে।