এসএসসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ঘোষণাকে কেন মৃত্যু পরোয়ানা বলছেন শিক্ষকরা?

SSC Recruitment Mamata Banerjee: যোগ্য চাকরিহারাদের দাবি ছিল, তাঁরা যেহেতু যোগ্য, তাঁরা যেহেতু কোনও কারচুপি না করেই নিজের মেধার জোরে চাকরি পেয়েছিলেন। তাই তাঁরা আর পরীক্ষায় বসবেন না।

একবার চাকরি পেতে পরীক্ষা দিয়েছেন সকলেই। অধিকাংশ যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে কিছু সংখ্যক অযোগ্য প্রার্থী মিশে থাকায় আদালতের নির্দেশে আস্ত প্যানেলই বাতিল হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর চাকরি করে, একটি রায়ে চাকরি হারিয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মীরা নিজেদের দাবি আদায়ে লড়ে যাচ্ছেন। পুলিশের লাঠি খাচ্ছেন, রক্তাক্ত হচ্ছেন! বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই জানেন এই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় একমাত্র রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারের হাতেই ছিল এই ঘটনা সামাল দিতে, বিক্ষোভ সামাল দিতে বিশেষ কোনও বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা। আর সরকার অবশেষে যে বন্দোবস্ত করেছে, তাকে নিজেদের 'মৃত্যু পরোয়ানা' বলেই মনে করছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন করে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। বলা বাহুল্য, নতুন করে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি, তারপরেও সেই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ হবে কিনা, হলেও সেই নিয়োগ সৎ হবে কিনা এই প্রশ্ন এখনও থেকেই যাচ্ছে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় পায়ের তলা থেকে নড়বড়ে জমিটুকুও যেন হারিয়ে ফেললেন যোগ্য চাকরিহারারা।

তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সরকার চাকরিহারা মানুষদের পক্ষে আইনি লড়াই চালাচ্ছে ঠিকই, তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও মেনে চলতে হচ্ছে। তাই আদালতের নির্দেশ মতোই নতুন করে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। শিক্ষকরা বলছেন, এই নতুন করে পরীক্ষা দিতে বলা মৃত্যুরই শামিল। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি বহাল রেখেছে যোগ্য প্রার্থীদের। এবং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন স্কুলে ক্লাসও করাতে হবে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে পড়িয়ে, নিজেদের জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত সামলে কীভাবে আবারও পরীক্ষা দেবেন, উত্তীর্ণ হবেন তা নিয়ে সংশয়ে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রশ্ন, সাত বছর এক জায়গায় চাকরি করার, ফের সেই একই চাকরির জন্য ‘যোগ্যতা’ কেনই বা প্রমাণ করতে হবে তাঁদের? আর সেই জন্য প্রস্তুতিও কি এত কম সময়ে নেওয়া সম্ভব হবে?

আরও পড়ুন- “কারও চাকরি যাবে না”: এসএসসি-র চাকরিহারাদের উদ্দেশে যা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

যোগ্য চাকরিহারাদের দাবি ছিল, তাঁরা যেহেতু যোগ্য, তাঁরা যেহেতু কোনও কারচুপি না করেই নিজের মেধার জোরে চাকরি পেয়েছিলেন। তাই তাঁরা আর পরীক্ষায় বসবেন না। কীভাবে তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে তা দেখার দায়িত্ব নিক সরকার। কিন্তু সরকার যে এই নিয়ে পদক্ষেপ করতে অপারগ তা মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই স্পষ্ট করে দেন। তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩০ মে নতুন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতের কাছে রাজ্য সরকার যে আবেদন করেছে তারও তদ্বির করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। মমতা বলেছেন, ‘‘আমরা যাঁরা সরকার চালাই, আইন মেনে চলতে হয়। আইনের বাইরে গিয়ে যদি কিছু করি, অন্য বার্তা যেতে পারে। সঠিক সময়ে রিভিউ পিটিশন দিয়েছি। সেখানে কারও চাকরি যাওয়ার কথা বলিনি। রিভিউ আলোচনার সুযোগ আসেনি। কারণ, গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। আমরা তত ক্ষণ অপেক্ষা করলে, আগের অর্ডার না-মানলে যদি সুপ্রিম কোর্ট বলে, নির্দেশ মানোনি, সবটাই বাতিল! এটা আমরা চাই না।’’

বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আমরা সবটাই রেডি করে রাখছি। যদি রিভিউয়ে বলে যে পরীক্ষা দিতে হবে না, লিস্ট বাতিল করা হল না, তখন সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনব।’’ তবে যদি পুনর্বিবেচনার আবেদনে আদালত কোনও ইতিবাচক নির্দেশ না দিলে আবারও পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেতে হবে।

মমতা বলেছেন, ‘‘৩১ মে বিজ্ঞপ্তি জারির শেষ সময়। বিজ্ঞাপন দিতে হবে ৩০ মে। রিভিউয়ের সুযোগ সব সময় খোলা রয়েছে। যত ক্ষণ রিভিউ না-হচ্ছে, বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া চালানো হবে। যাঁরা অনলাইনে আবেদন করতে চান, তাঁরা তা করতে পারবেন ১৬ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। যদি রিভিউ হতে সময় লাগে, তাই হাতে সময় রাখা হয়েছে।’’

উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই অনলাইনে আবেদনের শেষ দিন। রিভিউ পিটিশনের সময় রেখে ১৫ নভেম্বর প্যানেল প্রকাশ হবে। রিভিউ পিটিশনে কিছু না হলে নভেম্বরের মধ্যেই কাউন্সেলিং হবে সরকার জানিয়েছে। ২৪ হাজার ২০৩টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শিক্ষকদের কাজ চালাতে বলেছে, তাই সেই আদেশও মেনে চলতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নবম-দশমে ১১ হাজার ৫১৭টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ, আর একাদশ-দ্বাদশে ৯ হাজার ৯১২টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, "যাঁদের চাকরি বাতিল, তাঁদের জন্য আমরা অন্য ব্যবস্থা করব।" মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর হতাশ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা মনে করছেন, আদালতেও তাঁরা বিচার পাননি, সরকারও তাঁদের পাশে রইল না। গোটা বিষয়টায় সরকারের সদিচ্ছার অভাবের অভিযোগই তুলছেন তাঁরা।

More Articles