পহেলগাঁওয়ের জবাব দিতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা! যে যে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সেনাবাহিনী

Indian Army: সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কীভাবে হামলা করা হবে আর কী পদ্ধতিতে তা সম্পূর্ণ ঠিক করবে সেনাই।

পহেলগাঁও হামলার পর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তান সমর্থিত এই আক্রমণের জবাব দিতে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলসহ, পাকিস্তানিদের ভারত ছাড়তে বলার মতো একাদিক কড়া সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। মঙ্গলবার দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্র। এই বৈঠকে আরও কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বৈঠকের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর 'সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা' রয়েছে। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কীভাবে আক্রমণ হবে, কাদের নিশানা করা হবে এবং কোন সময় করা হবে, সেই সম্পর্কে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সেনা।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উচ্চ-পর্যায়ের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বায়ুসেনা প্রধান এয়ার মার্শাল এপি সিং এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ ত্রিপাঠী। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা আছে তাঁর। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মোক্ষম জবাব দেওয়ার জাতীয় সংকল্প নিয়েছে কেন্দ্র। তাই সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কীভাবে হামলা করা হবে আর কী পদ্ধতিতে তা সম্পূর্ণ ঠিক করবে সেনাই। বিশ্লেষকদের বক্তব্য, অত্যন্ত গোপনে হামলা চালানো হবে যে খবর থাকবে না অন্যদের কাছে। ফলে বড় ধরনের প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনাও  এড়ানো যাচ্ছে না। 

পহেলগাঁওয়ে এই হামলার নেপথ্যে থাকা সন্ত্রাসীদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের শায়েস্তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পহেলগাঁওয়ে নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর হামলার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।

আরও পড়ুন- গভীর জঙ্গলে ইঁদুর-বিলাই খেলা! পহেলগাঁও জঙ্গিদের যেভাবে ধাওয়া করছে সেনা

২২ এপ্রিলের হামলার পর নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘমেয়াদি ভিসা এবং কূটনৈতিক ও আনুষ্ঠানিক ভিসা ব্যতীত সমস্ত পাকিস্তানিদের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এই সিদ্ধান্তের পরে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২৫ এপ্রিল সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিশ্চিত করতে বলেছিলেন, দেশ ছাড়ার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা পার করার পর কোনও পাকিস্তানি নাগরিক যেন ভারতে থাকে না। পরে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবও সমস্ত রাজ্যের মুখ্য সচিবদের সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্স করে তাদের নিশ্চিত করতে বলেন, যে সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভারত ত্যাগ করতে হবে।

অন্যদিকে, কাশ্মীরে গোয়েন্দাদের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিরক্ষা সূত্র জানাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর টানা পঞ্চম রাত্রি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কুপওয়ারা এবং বারামুলা জেলার উল্টোদিকের এলাকায়, আখনুর সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও সেই উস্কানির পরিমিত অথচ কার্যকরী জবাব দিয়েছে।

এছাড়াও মঙ্গলবার, স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন যাতে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স, আসাম রাইফেলস এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের ডিরেক্টর জেনারেলরা এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স এবং সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং সীমান্তে সর্বোচ্চ নজরদারি বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

More Articles