'জয় বাংলা'-ই অস্ত্র! স্কুলে বাংলা বাধ্যতামূলক করে কতটা এগিয়ে রইলেন মমতা?
Bengali Language Mandatory in Schools: রাজ্য শিক্ষানীতি অনুযায়ী, চাকরি পাওয়ার পর প্রথম পাঁচবছর শিক্ষকদের গ্রামের স্কুলে পড়াতেই হবে।
বিজেপিকে এ রাজ্যে জাঁকিয়ে বসতে দেওয়া যাবে না। তাই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট কাটতে হলে উগ্র হিন্দুত্বকে যেমন কোণঠাসা করতে হবে, বাংলার গরিমাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ততোধিক। গো-বলয়ের সংস্কৃতি যে বাংলার ঐতিহ্য নয়, হিন্দি যে কোনওভাবেই রাষ্ট্রভাষা নয়, বাংলার রাম আর গেরুয়া রাম যে আলাদা- এই বোঝাবুঝির খেলাতে বাংলার নিজস্বতাকে তুলে ধরতে হবেই। অস্ত্র বাংলা ভাষা! বাঙালিদের সংবেদনশীল মন জয়ে মোক্ষম অস্ত্র দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক বিরোধীরাও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা অন্তত করবেন না প্রকাশ্যে। বাংলার স্কুলে বাংলা পড়াতেই হবে, ঠিক হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে। মনে রাখতে হবে, জাতীয় শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে সারা দেশেই বিশেষত বাম বিরোধীরা লড়াই করে এসেছেন সবথেকে বেশি। কেন্দ্রের শিক্ষানীতির পাল্টা এবার রাজ্যের বিধানসভাতে পাশ হলো রাজ্য শিক্ষানীতি। প্রায় এক বছরের উপর, বিশেষজ্ঞ কমিটি রাজ্যের নিজস্ব শিক্ষানীতি বিষয়ে কাজ করে এসেছে। কেন্দ্রের হিন্দিমুখী শিক্ষা থেকে সোজা মাতৃভাষা বাধ্যতামূলক করার পথে এগোল রাজ্য। শুধু অবশ্য বাংলা বাধ্যতামূলক প্রসঙ্গই না, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে এই রাজ্যের আলাদা শিক্ষানীতি নানাক্ষেত্রেই আলাদা।
বিধানসভায় সপ্তাহখানেক আগেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি রাজ্য সরকার মেনে নেয়নি তো বটেই, বরং রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছে। সব যে বদলে গিয়েছে এমন নয়। স্নাতকস্তরে এতদিন পড়ুয়ারা তিন বছর পড়াশোনা করতেন। তারপর দুই বছরের স্নাতকোত্তর পাঠ চলত। উচ্চশিক্ষার এই ক্ষেত্রে এবার বদল এসেছে, চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম চালু হতে চলেছে। তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স রেখে দিলে নাকি সমস্যায় পড়তে হতো পড়ুয়াদের। তাই এই বদলকে মেনে নিয়েছে রাজ্য।
আরও পড়ুন- শুধুই কি ঘৃণা? মাছে-ভাতে বাঙালিকে যেভাবে রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি করে তুললেন পরেশ
তবে স্কুলশিক্ষাতে কেন্দ্রের থেকে দূরেই হেঁটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের এই শিক্ষানীতি। জাতীয় শিক্ষানীতিতে কেন্দ্র বলেছিল, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়ারা নিজেদের ইচ্ছেমতো বিষয় নির্বাচন করতে পারবেন। রাজ্য বলছে, মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকে কোনও বদল হবে না। জীবনের এই দুই 'বড়' পরীক্ষা দিতেই হবে ছাত্রছাত্রীদের। তবে মাধ্যমিক স্তরেই আলাদা করে বিষয় বাছতে পারবেন না তারা। প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি, পঞ্চম থেকে অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ নিয়মই বহাল থাকছে রাজ্যে।
আস্তে আস্তে সেমেস্টার ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে রাজ্য। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এই ব্যবস্থাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বলছে, আগামী ৩ বছরে ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণি থেকে সেমেস্টার চালু হবে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতেও তা জারি হবে। রাজ্য সরকার আরেকটি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই শিক্ষানীতিতে যোগ করেছে তাতে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য শিক্ষানীতি অনুযায়ী, চাকরি পাওয়ার পর প্রথম পাঁচবছর শিক্ষকদের গ্রামের স্কুলে পড়াতেই হবে।
তবে জাতীয় শিক্ষানীতির চাপিয়ে দেওয়া ভাষাকে কোণঠাসা করে রাজ্য শিক্ষানীতির সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি হচ্ছে বাংলা ভাষা। স্কুলে বাংলা ভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক। প্রথম ভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা ও ইংরেজি নিতেই হবে। এখানে হিন্দি কোনওভাবেই প্রথম ও দ্বিতীয় ভাষা না। তৃতীয় ভাষা হিসেবে যে অঞ্চলে যে ভাষার কার্যকরিতা বেশি সেই অঞ্চলে সেই ভাষাই পড়া যাবে। সেই ভাষা হিন্দিও হতে পারে, সাঁওতালিও হতে পারে। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলিতেও বাংলা ভাষা পড়াতেই হবে। বাংলা পক্ষ এই রাজ্যে এমন দাবিতে বহুকাল ধরেই লড়েছে। বাঙালির আবেগকে সঠিক সময়ে ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই বাংলা ভাষার মই বেয়ে ২০২৪ লোকসভা ভোটে কতটা উচ্চতা ছুঁতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস সেটিই বড় প্রশ্ন।