মাত্র ৯ টি আসন পেত বিজেপি! যে সমঝোতা হলে বাংলাছাড়া হতো গেরুয়া দল
TMC Lok Sabha Election Results: তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে রাজ্যে আসন সমঝোতা করলে বিজেপির ভোটের ভাগ এবং আসন সংখ্যা আরও কমতে পারত।
পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ১৮ টি আসন। পাঁচ বছর পর, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বঙ্গে আসন হারিয়েছে ৬ টি, পেয়েছে ১২টি আসন। এবার দেশ জুড়েই ইন্ডিয়া জোটের ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশংসনীয়। তবে এই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের শরিক হলেও অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে রাজি হয়নি তৃণমূল। সিপিএম এবং কংগ্রেস নিজেদের মধ্যে জোট করলেও তৃণমূল একলা চলো নীতিই নেয়। জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়লে বিজেপির আসন সংখ্যা কমত আরও। সেক্ষেত্রে ক'টি আসন পেত গেরুয়া দল?
এই বছরের জানুয়ারিতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোট বিশেষ করে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না নিতে পারায় রাজ্যে একা লড়ার পথেই এগোন। ইন্ডিয়া জোট সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলকে একসঙ্গে আনার চেষ্টা করলেও আঞ্চলিক স্তরে কোনও ঐক্যই দেখা যায়নি। জেডি-ইউ প্রধান নীতীশ কুমারও ওই সময়েই জোট ছেড়ে এনডিএ-র সঙ্গেই রাজনৈতিক সমঝোতা করে নেন। কেরলে কংগ্রেস আর নামেরা আলাদা লড়ে। রাজস্থানে, বাংলায় বাম ও কংগ্রেস একসঙ্গে লড়ে।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সত্যিই মহিলাদের ‘ভিক্ষা’? কী বললেন মহম্মদ সেলিম?
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক সংখ্যক আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে আবারও। রাজ্যে কংগ্রেস ১২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং বামেরা ৩০টিতে। কিন্তু জোট করেও বাম ও কংগ্রেস মাত্র ১০.৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তৃণমূল একাই মোট ভোটের প্রায় ৪৫.৭৬ শতাংশ পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৩৮.৭৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৪০.৬৪ শতাংশ পেয়েছিল বিজেপি, এবার সামান্য হ্রাস পেয়েছে ভোট।
পশ্চিমবঙ্গে যে ১২টি আসনে বিজেপি জিতেছে সেগুলো হলো, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, রানাঘাট, বনগাঁ, তমলুক, কাঁথি, পুরুলিয়া এবং বিষ্ণুপুর।
তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে রাজ্যে আসন সমঝোতা করলে বিজেপির ভোটের ভাগ এবং আসন সংখ্যা আরও কমতে পারত। বিজেপি যে ১২টি লোকসভা আসন জিতেছে তার মধ্যে অন্তত তিনটিতে, বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়া ভোটের সংখ্যা, তৃণমূল ও কংগ্রেসের প্রার্থীরা একযোগে যা পেয়েছেন তার থেকে কম। এই তিনটি আসন হলো, মালদহ উত্তর, পুরুলিয়া এবং রায়গঞ্জ।
রায়গঞ্জে, বিজেপির কার্তিক চন্দ্র পাল ৫,৬০,৮৯৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ওই আসনে তৃণমূলের কল্যাণী কৃষ্ণ পেয়েছেন ৪,৯২,৭০০ টি ভোট এবং কংগ্রেসের আলী ইমরান রামজ ২,৬৩,২৭৩ ভোট পেয়েছেন। দুই পিছিয়ে থাকা দল যদি একযোগে লড়ত তাহলে তাদের মোট ভোট বিজেপির থেকে ১,৯৫,০৭৬ ভোট বেশি হতো।
মালদহ উত্তরে, বিজেপির খগেন মুর্মু ৫,২৭,০২৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন, তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ৪,৪৯,৩১৫ টি ভোট এবং কংগ্রেসের মোস্তাক আলম ৩,৮৪,৭৬৪ টি ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল এবং কংগ্রেস একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে গেরুয়া দল ৩,০৭,০৫৬ ভোটের ব্যবধানে হেরে যেত।
আরও পড়ুন- বহিরাগতর কাছে শোচনীয় পরাজয়! অধীর আর দিলীপকে হারাল তাঁদের দলই?
পুরুলিয়ায় বিজেপির জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ৫,৭৮,৪৮৯ ভোটে জিতেছেন। তৃণমূলের শান্তিরাম মাহাতো ৫,৬১,৪১০ টি ভোট পেয়েছেন এবং কংগ্রেসের নেপাল চন্দ্র মাহাতো ১,২৯,১৫৭ টি ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল এবং কংগ্রেস একসঙ্গে চাইলে ১,১২,০৭৮ ভোটের ব্যবধানে বিজেপিকে হারাতেই পারত।
এছাড়া আরও তিনটি নির্বাচনী এলাকা আছে যেখানে কংগ্রেস এবং তৃণমূল বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়েছে এবং যেখানে বিজেপির ভোট সংখ্যা তৃণমূল ও কংগ্রেসের মিলত ভোটের চেয়ে বেশি ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল বড় ব্যবধানে জয়। দার্জিলিংয়ে, বিজেপির রাজু বিস্তা ৬,৭৯,৩৩১টি ভোট পেয়েছেন। তৃণমূলের গোপাল লামা এবং কংগ্রেসের মুনিশ তামাংয়ের মিলিত ভোটের চেয়ে ৯৫,০০০ ভোট বেশি। কিন্তু অন্য দু'টি আসনে ব্যবধান ছিল খুবই কম, কারণ প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে ১০ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন।
বনগাঁয়, বিজেপির শান্তনু ঠাকুর পেয়েছেন ৭,১৯,৫০৫টি ভোট। তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাস এবং কংগ্রেসের প্রদীপকুমার বিশ্বাসের মিলিত ভোটের চেয়ে ৮,৫০০ ভোট বেশি। কাঁথিতে বিজেপির সৌমেন্দু অধিকারী পেয়েছেন ৭,৬৩,১৯৫ টি ভোট। তৃণমূলের উত্তম বারিক এবং কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে প্রায় ১৬,০০০ ভোট বেশি।