এবার BrainGPT! মানুষের মনে কী চলছে তা ফুটে উঠবে স্ক্রিনে? কীভাবে সম্ভব?
BrainGPT Mind Reader : ব্যবহারকারীদের একটি টুপি পরতে হবে যা ইলেক্ট্রোয়েন্সফালোগ্রামের (EEG) মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করবে।
সামনের মানুষটি আপনার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে, আপনার প্রশংসায় সহস্রমুখ। অথচ মনে কী চলছে কী করে বুঝবেন? হয়তো প্রবল তিরস্কারের মুখে পড়েছেন। কিন্তু সত্যিই কি ততটা ঘৃণা আছে অন্য ব্যক্তিটির মনে? মানুষের মন পড়া যায় না, পড়া গেলে সত্যিই কত ভুল বোঝা থেকে মুক্তি পেত মানুষ। তবে পড়া যায় না মানে পড়া যাবে না এমনও না। 'মাইন্ড রিডিং' হয়তো সত্যিই বাস্তব হতে চলেছে। সিডনির টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির গ্রাফেনএক্স-ইউটিএস মানবকেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেন্দ্রের গবেষকরা সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন। মানুষ মনে মনে কী ভাবছে, মাথায় কী চলছে সেই চিন্তাগুলি একটি স্ক্রিনে শব্দে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে।
ইউটিএস স্কুল অফ কম্পিউটার সায়েন্সের বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং গ্রাফেনএক্স-ইউটিএস হাই সেন্টারের পরিচালক চিং-টেন লিন বলছেন, এই গবেষণাটি মূল ইইজি তরঙ্গকে সরাসরি ভাষায় অনুবাদ করে। ব্রেইন-টু-টেক্সট অনুবাদ প্রক্রিয়া হয় মূলত এনকোডিং কৌশলেই। নিউরাল ডিকোডিংয়ের এক উদ্ভাবনী পদ্ধতি এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। বড় ভাষার মডেলগুলির পাশাপাশি নিউরোসায়েন্স এবং এআই-তেও এই বিষয়গুলি নিয়ে কাজ চলছে ব্যাপক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের গবেষকদের এক সম্মেলনে বাছাই করা এক গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদের নীরবে একটি বই বা বইয়ের অংশ পড়তে দেওয়া হয়। যখন পাঠকরা চুপচাপ কোনও শব্দ উচ্চারণ না করেই এই লেখাগুলি পড়েন তখন ডিওয়েভ নামে একটি এআই মডেল শুধুমাত্র পাঠকদের মস্তিষ্কের তরঙ্গগুলিকে ইনপুট হিসাবে ব্যবহার করে। সেই তরঙ্গগুলিকে অনুমান করে শব্দ হিসেবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলে এই মেশিন।
মস্তিষ্কের সংকেতকে ভাষায় অনুবাদ করতে পারা প্রথম প্রযুক্তি অবশ্য নয় এটি। তবে এটিই এখনও পর্যন্ত একমাত্র প্রযুক্তি যার জন্য ব্রেন ইমপ্লান্ট বা ফুল-অন এমআরআই মেশিনের প্রয়োজন নেই। এর আগে এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত ইনপুট যেমন আই-ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যার প্রয়োজন হতো। গবেষকরা বলছেন, নতুন প্রযুক্তি অতিরিক্ত কোনও কিছু ছাড়াই ব্যবহার করা যেতে পারে।
এখানে কেবল ব্যবহারকারীদের একটি টুপি পরতে হবে যা ইলেক্ট্রোয়েন্সফালোগ্রামের (EEG) মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করবে। এটি আই-ট্র্যাকারের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহারিক এবং সুবিধাজনক। BLEU অ্যালগরিদম ব্যবহার করে নির্ভুলতা মাপা হয়। অর্থাৎ আসলে যা পড়া/ভাবা হচ্ছে তার সঙ্গে অনূদিত হওয়া পাঠ্যের মিল কতটা৷
দেখা গেছে, নিরুচ্চারিত পাঠে এই প্রযুক্তিটি বিশেষ্যকে সেভাবে ধরতে পারে না কিন্তু ক্রিয়াপদ শ্নাক্ত হচ্ছে সহজেই। শব্দার্থগতভাবে অনুরূপ শব্দগুলি মস্তিষ্কে একই রকম তরঙ্গ তৈরি করে। কিন্তু গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এই প্রযুক্তি আরও নির্ভুল হয়ে উঠতে পারে। ভাষা এবং চিন্তনের প্রক্রিয়াকে আরও অনুপুঙ্খ করে তুলতে পারে। ২৯ জন অংশগ্রহণকারীর উপর পরীক্ষা চালানোর কারণে গবেষকদের ইতিমধ্যেই কিছুটা সুবিধা হয়েছে। অন্যান্য অনেক ডিকোডিং প্রযুক্তি পরীক্ষার চেয়ে উচ্চ মাত্রার কাজ সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ মাইন্ড রিডিং অসম্ভব না। তা নিখুঁত হতে খানিক সময় লাগবে ঠিকই, তবে মানুষের মনে আর মুখে একই কথা কিনা- জানতে বেশিদিন নেই আর।

Whatsapp
