বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ 'ব্ল্যাক বক্স'?
Air India Crash: ব্ল্যাক বক্স বিমানের প্রযুক্তিগত এবং শেষ মুহূর্তের কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধরে রাখে। কোনো বিমান দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণে এই যন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ানের কিছুক্ষণ পরেই মেঘানীনগরের কাছে ভেঙে পড়ল যাত্রীবাহী বিমান। এই বিমানে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন, মোট ২৪২ জন। দুর্ঘটনায় মাত্র একজন যাত্রী বেঁচে যান। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার হলে জানা যাবে দুর্ঘটনার আসল কারণ। কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা, তা জানতে এখন নজর কমলা রঙের ওই মেটালিক বক্সের দিকে। যা আসলে 'ব্ল্যাক বক্স' নামে পরিচিত। বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই 'ব্ল্যাক বক্স'?
সব প্লেনেই দু'রকমের ব্ল্যাক বক্স রাখা থাকে। ১৯৫০ সাল থেকে এই বক্স ব্যবহার করার নিয়ম চালু হয়। একটির নাম ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং অপরটি হলো ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। ব্ল্যাক বক্স বিমানের প্রযুক্তিগত এবং শেষ মুহূর্তের কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধরে রাখে। কোনো বিমান দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণে এই যন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়লে এই দুই রেকর্ডিং থেকে জন্য যায় কী ঘটেছিল। দুর্ঘটনার সময়ের একটা চিত্র ভেসে ওঠে তদন্তকারীদের সামনে। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ড থেকে পাওয়া যায় অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের হিসেব। যেমন কোনদিকে যাচ্ছিল বিমান, কত স্পিড ছিল এমন মোট ৮০ রকমের তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতেই আবিষ্কার হয়েছিল ব্ল্যাক বক্স। এটি কমলা রঙের দু'টি মেটালিক বাক্স। আগে মেটালিক স্ট্রিপে রেকর্ড হত বিমানের ভেতরের সব ঘটনা। তখন এটি ছিল লাল রঙের এবং ‘রেড এগ' নামে পরিচিত ছিল। ডিভাইসের ভেতরের দেয়ালগুলি কালো রঙের ছিল, তাই পরবর্তীতে এটি ‘ব্ল্যাক বক্স’ নামে পরিচিতি পায়। উন্নত প্রযুক্তি আসার পর ম্যাগনেটিক ড্রাইভ এবং মেমরি চিপ রাখা হয় ব্ল্যাক বক্সে।
তবে এখনও হদিশ পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনাগ্রস্ত এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের 'ব্ল্যাক বক্সে'র। বিমানে সচরাচর দুটি করে ব্ল্যাক বক্স থাকে। একটি সামনের দিকে, একটি পিছনের দিকে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দুটির একটিরও এখনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয়।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ব্ল্যাক বক্সের হদিশ না পাওয়া যাওয়ায় দুর্ঘটনার আসল কারণ এখনও স্পষ্ট হচ্ছে না।
বিমানের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করতে কাজ চালাচ্ছে বিশেষজ্ঞ দল। দুর্ঘটনার পরই তদন্ত শুরু করেছে ডিজিসিএ এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিবৃতির পর এটা স্পষ্ট যে, তদন্তের চূড়ান্ত ফলাফল পেতে এখনও সময় লাগবে। দুর্ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে থাকার কারণে উদ্ধারকাজ বেশ কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বিমান দুর্ঘটনা বিমানযাত্রার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গত পাঁচ বছরে ভারতে এত বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটিই ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনা।