চুলের ওজন এক কেজি, দৈর্ঘ্যে ৭ ফুট! যা দেখতে এই গ্রামে আসেন সারা পৃথিবীর পর্যটক
Long Hair Village in China: এই গ্রামে মহিলারা নিজের চুল বাড়াতে বাড়াতে নিয়ে যান ২.১ মিটার বা প্রায় ৬.৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা। ওজন প্রায় এক কেজির কাছাকাছি!
রাজকন্যা এলিয়ে দিচ্ছে দীর্ঘ চুলের গোছা, আর তা ধরে উঠে আসছে প্রেমিক, অমন শক্ত আর লম্বা চুল রূপকথায় সম্ভব বলে যারা ভেবেছি, ভেঙে যাচ্ছে সেইসব ধ্যান ধারণা। আর ভেঙে দিচ্ছেন চিনের এক রহস্যময় গ্রামের মহিলারা। দক্ষিণ চিনের গুয়াংসি প্রদেশের পাহাড়ের গভীরে বাস এই মহিলাদের। পাহাড়ি হুয়াংলুও গ্রামের এই মহিলাদের ঘন কালো চুলের দৈর্ঘ্য দেখলে চোয়াল ঝুলে পড়তে বাধ্য!
ইয়াও সংখ্যালঘু জাতির এই র্যাপুনজেলদের কাছে চুল শুধু সাজের অংশ নয়, জীবনের গর্ব, ঐতিহ্যের অঙ্গও। প্রাচীন এই গ্রামীণ বসতিকে চিনে সকলেই চেনে ‘লম্বা চুলের গ্রাম’ নামেই। গিনেস ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডসে এই গ্রাম ‘বিশ্বের দীর্ঘতম চুলের গ্রাম’ হিসেবে স্বীকৃত। এই গ্রামে মহিলারা নিজের চুল বাড়াতে বাড়াতে নিয়ে যান ২.১ মিটার বা প্রায় ৬.৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা। ওজন প্রায় এক কেজির কাছাকাছি! গ্রামের বয়স্ক মহিলাদেরও চুল এক্কেবারে ঘন কালো এবং স্বাস্থ্যকর। আর এই বিশাল চুলের যত্ন নিতে নিয়মিত চাল ধোয়া জল দিয়ে চুল পরিষ্কার করেন। গেঁজানো চালের জল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। তাই এই জল দিয়ে চুল ধুলে চুল ঝলমলে, নরম, শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর হয়।
আরও পড়ুন- বাঙালির পাত অসম্পূর্ণ পোস্ত ছাড়া! এই শস্যের সঙ্গে জড়িয়ে পলাশির যুদ্ধের ইতিহাসও
হুয়াংলুতে এই লম্বা চুলকে এত পবিত্র মনে করা হয় যে কিছুকাল আগে অবধি স্বামী এবং সন্তান ছাড়া কাউকে এই চুল দেখানোর অনুমতিও পাননি গ্রামের মহিলারা। জনসমক্ষে চুল দেখানোকে নিন্দনীয় মনে করা হত গ্রামের আচার অনুযায়ী। বিষয়টা নিয়ে এতই বাড়াবাড়ি ছিল যে পরিবারের বাইরের কোনও পুরুষ, বা কোনও বিদেশি পর্যটক যদি সেই চুল দেখে ফেলেন তবে ওই মেয়ের বর হিসেবে আর পরিবারের জামাই হিসেবে তিন বছর কাটাতে বাধ্য হতেন তিনি! ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এই সব নিয়মকানুন আইন করে বাতিল করা হয়। এই অঞ্চলে পর্যটনই আয়ের প্রধান উৎসও হয়ে ওঠে। যুক্তিহীন প্রথা বন্ধ হয়ে গেলেও, লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এখনও চুল যত লম্বা হবে সে ততই বেশি ভাগ্যবান হবে।
আরও পড়ুন-এবারের শীতে ফিল্ম ট্যুর! বাংলার এই পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে সিনেমার শুটিং
জীবনে মাত্র একবারই তাদের চুল কাটতে পারেন এই অদ্ভুত গ্রামের মহিলারা। সেটাও নিজেদের ১৭ তম জন্মদিনে। কিন্তু কাটা চুলগুলো বিক্রি করা হয় না মোটেও! কিশোরীর ওই চুল তাঁর ঠাকুমাকে দেওয়া হয় এবং সেটা দিয়ে সুন্দর একখানা টায়রা গোছের জিনিস বানানো হয়। এখানেই শেষ না। চুল কাটার পরেই ওই যুবতীকে প্রেমিকের সন্ধান শুরু করতে হয়। যখন সেই যুবতীর বিয়ের সব কিছু পাকা, বরকে উপহার দেওয়া হয় সেই কেটে ফেলা চুল।
এখানে প্রতিটি হেয়ারস্টাইলের অর্থও পৃথক! ধরা যাক, যদি চুলগুলি মাথার উপরে বৃত্তাকারে মোড়ানো থাকে তবে এর অর্থ হল মহিলা বিবাহিত কিন্তু কোনও সন্তান নেই। আর যদি বিবাহিত এবং সন্তান থাকে সেই মহিলার মাথার সামনে একটি খোঁপা থাকবে! আর যদি কোনও মহিলা চুল ঢেকে মাথার চারপাশে স্কার্ফ পরে থাকেন, তবে বুঝতে হবে তিনি বিয়ে করতে চাইছেন, বিয়ের পর সেই স্বামীই তাঁর এই চুলের সম্পদ দেখতে পারবেন।