খেলার ২০২৫: বিশ্বকে শাসন করেছেন হরমনপ্রীতরা
Sports 2025: ভারতের আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ছিলেন কারিগর দীপ্তি শর্মা। তিনি টুর্নামেন্টের সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর ৪/৫ উইকেট নেওয়া কেউ ভুলবে না।
এক একটা বছর শেষ হয়, কিন্তু তার রেখে যাওয়া টুকরো স্মৃতি যুগ যুগ ধরে জাতিকে প্রেরণা যোগায়। ২০২৫ সালটি ভারতীয় খেলাধুলোর জগতে সেই বিরলতম বছর। যেখানে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। ক্রিকেট থেকে হকি, শ্যুটিং, কাবাডি, থেকে বক্সিং, সব জায়গায় এখন ভারতের স্থায়ী পদচিহ্ন আঁকা। তবে সমস্ত বিস্ময়কর মুহূর্তগুলির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয়, আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় ছাপিয়ে গিয়েছে অন্য সমস্ত রেকর্ড। বছরের পর বছর ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল যে পরিশ্রমের বীজ বুনেছিল, তা অবশেষে মহীরুহে পরিণত হলো এই জয়ে। শতকোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই জয়, গোটা দেশ বুঝেছে, 'নারী শক্তি' শুধুমাত্র অলঙ্কার নয়, এক অপরাজেয় সত্য। ভুললে চলবে না, এই বছরেই পুরুষরা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ী হয়েছে।

২০২৫ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর
ভারতের আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ছিলেন কারিগর দীপ্তি শর্মা। তিনি টুর্নামেন্টের সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর ৪/৫ উইকেট নেওয়া কেউ ভুলবে না। ভুলবে না হরমনপ্রীতের সেই ক্যাচ। অন্য দিকে শেফালী বর্মার টুর্নামেন্ট জুড়ে দ্রুত রান দলকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে বিরাট কোহলি-র দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন দিনের ওয়ানডে-তে ৩২০ রান এবং রেকর্ড গড়াটাও ক্যালেন্ডারের পাতায় জ্বলজ্বল করছে।

আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয়
আরও পড়ুন
হারমনপ্রীতরা দূত, স্বপ্নটা দেখেছিলেন ঝুলন-মিতালীরা
ক্রিকেটের এই বিপুল সাফল্যের মাঝেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিল হকি। ১৯২৫ সাল থেকে শুরু হওয়া ভারতীয় হকির শতবর্ষ উদযাপন এই বছর জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। দিল্লির ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে হকি স্টিক হাতে একশো বছরের এই সোনার দৌড়কে ট্রিবিউট দিয়েছে। এই শতবর্ষের প্রাক্কালে পুরুষ হকি দলের এশিয়া কাপ জয় এই উদযাপনেরই অংশ ছিল। চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে তরুণ দলটির লড়াই আমাদের বুড়ঝিয়ে দিয়েছে হকিতে আচ্ছে দিন খুব দূরে নয়।

জুনিয়র পুরুষ হকি বিশ্বকাপে এ ভারতের চতুর্থ পদক। আর্জেন্টিনাকে ৪–২ গোলে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জেতে ভারত।
আবার ২০২৫ সালটি ছিল ভারতের দাবা খেলার অন্যতম স্মরণীয় বছরের মধ্যে একটি। এই বছরে ভারতের মনন ও মেধার এক নতুন প্রতীক হয়ে উঠলেন দিব্যা দেশমুখ। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এফআইডিই (ফিডে) মহিলা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেন তিনি।

হংকংকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের স্কোয়াশ বিশ্বকাপ জয়। এই প্রথমবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়ে দুই এশীয় দেশ। এর আগে ২০২৩ সালে ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারত।

কেনিয়াকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে রোল বল বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ভারতের মহিলা দল
আরও পড়ুন
সংকল্প জয়, প্রতিটি রান ধ্যান, ক্রিকেট ধর্মের সন্ন্যাসিনী জেমাইমা
এই বছর বিশ্বকে তাক লাগিয়ে মাত্র ষোলো বছর বয়সি তানভি শর্মার উত্থান ব্যাডমিন্টনে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। বিডব্লিউএফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালসে সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় হিসেবে তানভি এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। অন্যদিকে, দেশের টেবিল টেনিস তারকা শ্রীজা মহিলাদের এশিয়ান কাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক জিতে তাঁর অসাধারণ সাফল্য ধরে রেখেছেন। আবার লক্ষ্য সেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয় নিশ্চিত করেছেন, সিনিয়র পর্যায়েও তাঁর ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। বিলিয়ার্ডস ও স্নুকার থেকেও এক ঐতিহাসিক সাফল্য অনুপমা রামচন্দ্রনর হাতে। বিশ্ব মহিলা স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে কিউ-স্পোর্টসের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় মহিলা। অন্যদিকে, বক্সিংয়ের মঞ্চে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিখাত জারিন এবং জেসমিন ল্যাম্বোরিয়া এর মতো তারকারা একের পর এক সোনা জিতেছেন। আবার স্কোয়াশে অনাহত সিং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের টপকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং প্রথম স্কোয়াশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এছাড়াও সিমরনপ্রীত কৌর এবং সুরুচি সিংয়ের মতো শ্যুটারও নজির স্থাপন করেছেন। আবার এক রাতে রোল বলে মহিলা এবং পুরুষ দলের বিশ্ব জয়।

প্রথম দৃষ্টিহীন মহিলা ক্রিকেটে বিশ্বসেরা ভারত
২০২৫ সালের সবচেয়ে মানবিক এবং অনুপ্রেরণামূলক দিকটি হলো প্যারালিম্পিকস এবং অন্যান্য ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দল ২২টি পদক জিতে রেকর্ড গড়েছে। প্রথম দৃষ্টিহীন মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের কথা না বললেই নয়। এই টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণেই ভারতীয় দল সম্পূর্ণভাবে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। মহিলা কাবাডি বিশ্বকাপ জয়ের কথাও বলতেই হবে।
আসলে বহু বছরের শ্রমের ফসল ফলেছে এই বছরটায়। ক্রিকেট, হকি, বক্সিং, শ্যুটিং, কাবাডি বা প্যারালিম্পিকস, প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ধারাবাহিকতা দেখা গিয়েছে, তা ধরে রাখা গেলে ভারত আগামীদিনে ক্রীড়াবিশ্ব শাসন করবে।
Whatsapp
