প্রেমের এমন পরিণতি! প্রেমিকাকে খুন করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে তড়িঘড়ি অন্য মহিলাকে বিয়ে...

Valentine's Day Murder: সাহিল তার গাড়িতে রাখা ডেটা কেবল দিয়ে নিকির শ্বাসরোধ করে। নিকির দেহ একটি রেফ্রিজারেটারের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে

প্রেমিকা তথা লিভ ইন পার্টনারকে ৩৫ টুকরো করার ঘটনা দেখেছে দেশ। সেই তদন্ত এখনও ঠিকঠাক দিশা পায়নি। এরই মধ্যে দিল্লি ফের প্রমাণ করেছে, ভালোবাসা নয়, আসলে তীব্র ঘৃণার, চরম আক্রোশের রাজধানী হয়ে উঠেছে এই শহর। প্রায় শ্রদ্ধা ওয়ালকারের হত্যার মতোই এক ঘটনা তাজ্জব করেছে দেশকে। ভালোবাসার দিনে ঘৃণার পতাকা উড়িয়েছে দেশের রাজধানী। নাজাফগড়ের মিত্রান গ্রামের উপকণ্ঠে অবস্থিত এক ধাবায় নিজের লিভ-ইন পার্টনারকে খুন করে তাঁর দেহ রেফ্রিজারেটরের মধ্যে ভরে রাখার বীভৎস ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত সাহিল গেহলট তার লিভ-ইন পার্টনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে নিজের প্রেমিকার দেহ একটি ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে। এখানেই শেষ নয়, এর পরের ঘটনা আরও ধন্দে ফেলেছে তদন্তকারীদের। প্রেমিকাকে খুনের কয়েক ঘণ্টা পরেই অন্য এক মহিলাকে বিয়েও করে সাহিল!

প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী পুলিশ যা জানাচ্ছে, অভিযুক্ত সাহিল গেহলটের বয়স ২৪। দিল্লি পুলিশকে সাহিল জানিয়েছে, পড়াশোনা করার সময়েই প্রেমিকার সঙ্গে তার আলাপ। সেটা সাল ২০১৮। উত্তম নগর এলাকার একটি কোচিং সেন্টারে নিকি যাদবের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় সাহিলের। অভিযুক্ত সাহিল গ্রেটার নয়ডার একটি কলেজে ডি ফার্মা নিয়ে ভর্তি হয় এবং তার বান্ধবীও ওই একই কলেজে বিএ (ইংরেজি অনার্স)-তে ভর্তি হয়েছিল। বেশ কিছুকাল একসঙ্গে কাটানোর পরেই প্রেম এবং আরও কিছু সময় পরেই দু'জনে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মানালি, ঋষিকেশ, হরিদ্বার এবং দেরাদুনের মতো বেশ কিছু জায়গায় ঘুরতেও গিয়েছিলেন সাহিল ও নিকি।

কোভিড লকডাউনের সময়, সাহিল ও নিকি নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসে এবং লকডাউন শেষ হওয়ার পরে, তারা ফের দ্বারকা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। অভিযুক্ত সাহিল তার পরিবারের সদস্যদের কাউকেই নিজের এই সম্পর্কের কথা জানায়নি। সাহিল গেহলট সাফ জানিয়েছেন, তার পরিবার তাকে অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে বিয়ে করার জন্য প্রবল চাপ দিচ্ছিল। বাড়ির কথা রাখতেই ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সাহিলের বাগদান ঠিক করা হয় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এবং বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয় ১০ ফেব্রুয়ারি।

আরও পড়ুন- যৌনাঙ্গে রড, দেহ ৩৫ টুকরো! অপরাধীকে নৃশংসতা শেখায় আসলে কারা?

এদিকে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ও সঙ্গী নিকিকে নিজের এই বাগদান বা বিয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানায়নি সাহিল। তবে ঘটনাচক্রে কোনওভাবে নিকি পুরো বিষয়টিই জানতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই সবটা জানার পরে সাহিলকে সত্যি বলার জন্য চাপ দিতে থাকেন নিকি। দু'জনের মধ্যেই প্রবল তর্ক শুরু হয়। পরে সাহিল তার গাড়িতে রাখা মোবাইল ফোনের ডেটা কেবল দিয়ে নিকির শ্বাসরোধ করে। নিকির দেহ একটি রেফ্রিজারেটারের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে এবং সাহিল নিজের বাড়িতে ফিরে যায়। সেখানে বাড়ির ঠিক করে দেওয়া অন্য একজন মহিলার সঙ্গে ঘটা করে বিয়ে সেরেও ফেলে।

স্পেশাল কমিশনার অব পুলিশ (ক্রাইম) রবীন্দ্র সিং যাদব জানিয়েছেন, ১০ ফেব্রুয়ারি তারা একটি গোপন সূত্রে খবর পান যে, সাহিল গেহলট নামে এক ব্যক্তি তার বান্ধবীকে হত্যা করেছে এবং হত্যার দিনই অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় এই ধরনের কোনও মহিলার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোনও অভিযোগ বা অন্য সূত্র কিছুই মেলেনি। অভিযুক্তের মোবাইল ফোনও বন্ধ। পুলিশের একটি দল মিত্রান গ্রামে পৌঁছয় কিন্তু সেখানে সাহিলের বাড়িতেও তাকে পাওয়া যায় না। পরে গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। অভিযুক্ত সাহিলকে পরে দিল্লির কাইর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সাহিল পুলিশকে জানিয়েছে, ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যেকার রাতে তার বান্ধবীকে খুন করে সে, এর কয়েক ঘণ্টা পরেই অন্য মহিলাকে বিয়ে করে। দিল্লির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দ্বারকা) বিক্রম সিং জানিয়েছেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালে তারা তথ্য পান যে এক মহিলাকে খুন করা হয়েছে এবং তার লাশ গ্রামের উপকণ্ঠে একটি ধাবায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত সাহিল মিত্রান গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে নিকির বাড়ি হরিয়ানার ঝাজ্জারে। বাবা হরিদাস নগর থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ (খুন) এবং ২০১ (অপরাধের প্রমাণ হারিয়ে ফেলা বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া)-এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

More Articles