সোনম ওয়াংচুক গ্রেফতার জাতীয় নিরাপত্তা আইনে! কী এই আইন?

Sonam Wangchuk Arrested Under National Security Act: বিচ্ছিন্নতাবাদী, দুবৃত্তদের বিরুদ্ধে অতীতে বারবার ব্যবহৃত এই আইন সরকারকে শান্তিভঙ্গকারী বলে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার দেয়।

লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে সুরক্ষা দাবির আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুককে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) লেহ পুলিশ কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) গ্রেফতার করেছে। তাঁর স্ত্রীর দাবি, তাঁকে যোধপুরের একটি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বুধবারের সহিংস প্রতিবাদে পুলিশ গুলি চালালে লাদাখে চারজন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়। এই অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সোনমের সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করে। তাঁকে গ্রেফতার করে। এনএসএ ভারতের সবচেয়ে কঠোর আইনগুলির একটি।

অতীতে বিচ্ছিন্নতাবাদী, দুর্বৃত্ত, উগ্র মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত এই আইন সরকার রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করেছে। শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই এই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভারতে এই আইনপ্রয়োগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ঔপনিবেশিক সময় থেকে শুরু হয়েছে প্রতিরক্ষামূলক গ্রেফতারি আইনের ব্যবহার। স্বাধীনতার পর সংসদে ১৯৫০ সালে এই আইন পাস করা হয়, তারপর ১৯৭১ সালে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ আইন আনা হয় (মিসা), যা জরুরি অবস্থায় অপব্যবহারের জন্য কুখ্যাত। মিসা ১৯৭৮ সালে বাতিল হয়, এবং দু'বছর পর জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু হয়।

আরও পড়ুন- কেন লাদাখে ছয় বছরের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হঠাৎ হিংসার রূপ নিল?

১৯৮০ সালের এনএসএ কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিকে এই আইনে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করার ক্ষমতা দেয়, যাতে তারা ভারতের প্রতিরক্ষা, বিদেশী সম্পর্ক, নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, অত্যাবশ্যক সরবরাহের ক্ষতি করতে না পারে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কমিশনাররাও এই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন। 

ফৌজদারি আইনের তুলনায় এনএসএ কিছুটা আলাদা। এই আইন আগাম প্রতিরক্ষামূলক, শাস্তিমূলক নয়— এটি ক্ষতিকর কাজ প্রতিহত করার জন্য কবচ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এনএসএ-র উদ্দেশ্য নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অত্যাবশ্যক সরবরাহ বন্ধ হওয়া আটকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। এনএসএ-র অধীনে সন্দেভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওয়ার‍্যান্ট জারি করা যায়। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা, অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করা এবং সরকারী শর্তাবলী মেনে চলতে বাধ্য করা যায়।

আইন অনুসারে, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে ৫ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সরকারের তরফে গ্রেফতার হওয়ার কারণ জানাতে হবে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের উপদেষ্টা বোর্ড তিন সপ্তাহের মধ্যে মামলা পর্যালোচনা করে, 'পর্যাপ্ত কারণ' না পেলে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে হবে। এই গ্রেফতারির মেয়াদ সাধারণত ১২ মাসের বেশি হতে পারে না। এই আইনে সরকার 'জনস্বার্থে' তথ্য গোপন করতে পারে।

এখন সোনম চাইলে এই ওয়ারেন্ট চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, অথবা তিন সপ্তাহের মধ্যে উপদেষ্টা বোর্ডের পর্যালোচনার অপেক্ষা করতে পারেন। আর বোর্ড যদি 'পর্যাপ্ত কারণ' না পায়, তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

আরও পড়ুন- লাদাখ আর কিছু দিন, দায় কার?

বিকল্প রাস্তাও আছে, সোনম সংবিধানের ২২৬/৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে গ্রেফতারির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। সরকার নিজেও তাকে মুক্তি দিতে পারে। তবে এই আইন আদালতে প্রমাণ দাখিল ব্যতীতই একজন ব্যক্তিকে আটক করার ক্ষমতা দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

২০২৩ সালে উগ্র শিখ প্রচারক অমৃতপাল সিং, 'ওয়ারিস পাঞ্জাব দে'র নেতা, এনএসএ-র অধীনে আটক হয়ে অসমের ডিব্রুগড় জেলে স্থানান্তরিত হন। ২০১৭ সালে ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ 'রাভান' উত্তরপ্রদেশে এনএসএ-তে অভিযুক্ত হন। সুপ্রিম কোর্টে মামলা পৌঁছানোর পর আদেশ বাতিল হয়, এবং ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশে বেশ কয়েকজন প্রতিবাদকারী এনএসএ-তে অভিযুক্ত হন।

বহু সামাজিক সংগঠন এনএসএ-র অপব্যবহারের কথা বারবার উল্লেখ করেছে। ২০২০ সালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাফিল খান উত্তরপ্রদেশ সরকারের দ্বারা উস্কানিমূলক ভাষণের অভিযোগে এনএসএ-তে গ্রেফতার হন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাঁর মুক্তির নির্দেশ দেয়। মধ্যপ্রদেশে 'লাভ জিহাদ' মামলায় এবং উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় বারবার এনএসএ ব্যবহার হয়েছে।

More Articles