আখলাক লিঞ্চিং মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ! রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি বৃন্দা কারাটের
Akhlaq Lynching Case: বৃন্দা কারাটের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আখলাক লিঞ্চিং মামলাটি প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে এবং সেই প্রক্রিয়ায় রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল লিখিত অনুমতি দিয়েছেন।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশের দাদরি এলাকার বিসাহাদা গ্রামে মোব লিঞ্চিংয়ের ঘটনাটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনের উপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছিল। গরুর মাংস রাখার সন্দেহে নিজের বাড়িতে মোহাম্মদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গুরুতরভাবে আহত হন তাঁর ছেলে দানিশও। দেশজুড়ে তখন ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে, সরকার আশ্বাস দেয় দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। সেই ঘটনার এক দশক পর আবারও এই মামলাটি জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে।
এই প্রেক্ষাপটেই সিপিআই(এম) নেত্রী ও প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ বৃন্দা কারাট রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে সরাসরি হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন। বৃন্দা কারাটের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আখলাক লিঞ্চিং মামলাটি প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে এবং সেই প্রক্রিয়ায় রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল লিখিত অনুমতি দিয়েছেন। বৃন্দা কারাটের মতে, এটি শুধু অন্যায় নয়, সম্পূর্ণভাবে বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা।
আরও পড়ুন
কেন আখলাক হত্যার মামলা প্রত্যাহার চায় যোগী সরকার?
চিঠিতে বৃন্দা কারাটের উল্লেখ করেছেন, আখলাক হত্যাকাণ্ডের মামলায় ইতোমধ্যেই চার্জশিট দাখিল হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে নিহতের কন্যা, যিনি প্রত্যক্ষদর্শী, আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে সমস্ত অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ মামলায় প্রমাণ আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে এবং আরও দু'জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া বাকি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননা বলেই মনে করছেন তিনি।
বৃন্দা কারাটের অভিযোগ, সরকার যে যুক্তিগুলি তুলে ধরছে— যেমন বন্দুক নয়, লাঠি ব্যবহার করা হয়েছে; নিহতের সঙ্গে অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না; মামলা চললে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হতে পারে, এই সবই আইনের চোখে অগ্রহণযোগ্য। তাঁর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে প্রসিকিউশন ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলাটি ঝুলিয়ে রেখেছে, সাক্ষীদের হাজিরার নোটিস দেয়নি এবং এখন সেই বিলম্বকেই মামলা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২১ ধারার সুস্পষ্ট অপব্যবহার।
চিঠির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে কারাত প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপালের সাংবিধানিক ভূমিকা নিয়ে। তাঁর মতে, যদি সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মব লিঞ্চিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধের মামলা প্রত্যাহারের পথে হাঁটে, তবে কি গভর্নরের দায়িত্ব নয় সরকারকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখতে পরামর্শ দেওয়া? সংবিধান ও আইনের শাসন রক্ষা করা কি রাজ্যপালের মৌলিক কর্তব্য নয়? কারাত সতর্ক করেছেন, যদি এই মামলা প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে একই যুক্তি দেখিয়ে সব মব লিঞ্চিং মামলাই বন্ধ করার বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি হবে।
আরও পড়ুন
মোদি জামানায় তুঙ্গে ধর্মের বিদ্বেষ! যেভাবে বেড়েছে হাড়হিম করা অপরাধ
এই কারণেই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যাতে তিনি হস্তক্ষেপ করে রাজ্যপালকে তাঁর দেওয়া অনুমতি প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। বৃন্দা কারাট স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত এবং সাংবিধানিকভাবে তাঁর কাছেই জবাবদিহি করেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রপতির এই হস্তক্ষেপ জরুরি বলেই তিনি মনে করেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গভর্নরের অনুমোদনে সরকারের দাখিল করা অ্যাফিডেভিট নিয়ে ১২ ডিসেম্বর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রসিকিউশনের অনুরোধে সেই শুনানি স্থগিত হয়েছে। ফলে আখলাক লিঞ্চিং মামলা আবারও এক অনিশ্চিত আইনি ও রাজনৈতিক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনাপ্রবাহ শুধু একটি পরিবারের ন্যায়বিচারের লড়াই নয়, বরং ভারতের বিচারব্যবস্থা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা এবং মব হিংসার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অবস্থান নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, যার উত্তর এখন রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে।

Whatsapp
