১৩ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি! বেলজিয়াম আদালতের রায়ে দেশে ফিরছেন পলাতক মেহুল চোকসি

Mehul Choksi Extradition: বেলজিয়াম আদালত রায়ে দিয়েছে, চোকসির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষ থেকে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো বেলজিয়ামের আইনেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

ভারতের বহুল আলোচিত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের জালিয়াতি মামলার মূল অভিযুক্ত মেহুল চোকসি-কে এবার ভারতে ফেরানোর রাস্তা খুলে গেল। বেলজিয়ামের আদালত রায় দিয়েছে, তাঁকে ভারতে পাঠানো যাবে। আদালত বলেছে, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি আনা হয়েছে, সেগুলি গুরুতর অপরাধ, আর তিনি যে বলছেন তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বা অপহরণ করে ধরা হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই।

বেলজিয়াম আদালত রায়ে দিয়েছে, চোকসির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষ থেকে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো বেলজিয়ামের আইনেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। আদালত বলেছে, চোকসির দাবি তাঁকে 'রাজনৈতিক কারণে টার্গেট করা হয়েছে', তা প্রমাণিত নয়। তাই ভারতের অনুরোধে তাঁকে ফেরানো যেতে পারে। এই রায়ের ফলে চোকসিকে ভারতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করার পথ খুলে গেল।

আরও পড়ুন

নীরব মোদি: দেশের ১১ হাজার কোটি লুট করে আজও পলাতক হিরে ব্যবসায়ী

ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI) ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) অভিযোগ করেছে, মেহুল চোকসি ও তাঁর ভাগ্নে নীরব মোদি মিলে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) থেকে প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকা জালিয়াতি করেছেন। তাঁরা ভুয়ো কাগজপত্র ও প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ তুলেছিলেন এবং পরে তা ফেরত দেননি। চোকসির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি (ষড়যন্ত্র), ৪০৯ (বিশ্বাসভঙ্গ), ৪২০ (প্রতারণা) ও ৪৭৭এ (হিসাব জাল করা) ধারায় মামলা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ীও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

চোকসি আদালতে বলেন, “আমাকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। ভারতে গেলে আমি ন্যায্য বিচার পাব না।” কিন্তু ভারতের সরকার আদালতকে আশ্বাস দেয়, তাঁকে মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলের ব্যারাক ১২-তে রাখা হবে। সেখানে থাকবে চিকিৎসা ও নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা। তাঁকে নির্যাতন করা হবে না এবং নিজের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থাকবে। এই নিশ্চয়তাগুলি আদালত গ্রহণ করেছে এবং বলেছে, “ভারতে তাঁর নিরাপত্তা ও বিচার প্রক্রিয়া ন্যায্য থাকবে।”

আরও পড়ুন

লোপাট কোটি কোটি টাকা, ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির শিকড় কতটা গভীরে?

এই রায়কে ভারতের জন্য বড়ো সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, বহু বছর ধরে চোকসি দেশের থেকে পালিয়ে ছিলেন। ২০১৮ সালে কেলেঙ্কারির পর তিনি প্রথমে অ্যান্টিগায় পালান, পরে বেলজিয়ামে আশ্রয় নেন। ভারত সরকার তখন থেকেই তাঁকে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বেলজিয়াম আদালতের এই রায়ের ফলে ভারতের হাতে এখন চোকসিকে ফেরানোর আইনি অনুমতি এসেছে। তবে চোকসি চাইলে এখনও বেলজিয়ামের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারেন।

বেলজিয়াম আদালতের এই রায় মেহুল চোকসির জন্য বড়ো ধাক্কা। যদি চোকসির আপিল খারিজ হয়, তবে তাঁকে দ্রুত ভারতে ফেরানো হতে পারে। তখন শুরু হবে দেশের অন্যতম বড়ো আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলার পরবর্তী অধ্যায়।

More Articles