এবার মহাকাশে বিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন! যে অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করছে চিন

China Space Power Station: কীভাবে মহাকাশে শক্তি সংগ্রহ করা যাবে আর তা কীভাবেই বা পৃথিবীতে আসবে? মহাকাশ থেকে তো কোনও পাইপের বা তারের মাধ্যমে তা পৃথিবীতে পাঠানো যাবে না।

প্রযুক্তি ও কৌশলগত বিষয়ে সারা বিশ্বকে হামেশাই তাক লাগিয়ে থাকে চিন। সাধারণ চোখে যা অদ্ভুতুড়ে, বিস্ময়কর এমন সমস্ত কিছুই বাস্তব করে দেখিয়েছে এই দেশ। অভাবনীয় প্রকল্পের তালিকায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে একটি বিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা। তবে এই ধরাধামে নয়। চিন মহাকাশে তৈরি করতে চলেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র! এই প্রকল্পটিকে পৃথিবীর উপর নির্মিত থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। থ্রি গর্জেস ড্যাম হচ্ছে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র যা মধ্য চিনের হুবেই প্রদেশের ইচাং-এর সানডুপিংয়ের কাছে ইয়াংজি নদীর উপর তৈরি। ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র (২২,৫০০ মেগাওয়াট) থ্রি গর্জেস বাঁধটি নদীর অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণের উপর নির্ভর করে প্রতি বছর গড়ে ৯৫±২০ টন বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

জীবাশ্ম জ্বালানি ক্রমহ্রাসমান। আর সেই জ্বালানি ব্যাপক জলবায়ু সংকটও ঘটাচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই পরিবেশবিদরা, চিন্তাবিদরা সৌরশক্তির মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির আরও বেশি ব্যবহার করার উপায় নিয়ে কাজ করছেন। গত কয়েক দশকে সৌরশক্তি নিয়ে ব্যাপক উন্নতিও হয়েছে। তবে আরেকটি বিষয়ে কাজ চলছে। চেষ্টা হচ্ছে সৌর প্যানেলগুলিকে সূর্যের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার। মহাকাশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির ধারণাটিও বেশ কিছুকাল ধরেই চর্চায় রয়েছে। এই ধরনের কেন্দ্রের সুবিধা হচ্ছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যে সৌররশ্মি প্রতিফলিত ও শোষিত হয়ে যায়, তার পরিমাণ কমে যাবে। সৌরপ্যানেলগুলি আরও বেশি শক্তি সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে।

যদি সত্যিই সৌরপ্যানেলগুলি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে পারে, স্থায়ীভাবে সূর্যালোক সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে পৃথিবীতে সৌরশক্তি আরও বেশি ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু কীভাবে মহাকাশে শক্তি সংগ্রহ করা যাবে আর তা কীভাবেই বা পৃথিবীতে আসবে? মহাকাশ থেকে তো কোনও পাইপের বা তারের মাধ্যমে তা পৃথিবীতে পাঠানো যাবে না। চিন অবশ্য 'ওয়ারলেস' পদ্ধতিতেই তা পৃথিবীতে পাঠানোর কথা ভাবছে। উচ্চ-শক্তির রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে মাটিতে স্থাপিত রিসিভারগুলিতে সৌরশক্তি ফেরত ফেরত পাঠানো হবে।

আরও পড়ুন- সূর্যের গায়েও রয়েছে বড় ‘ডার্কস্পট’, হদিশ পেল নাসা, কারণ জানলে চমকে যাবেন আপনিও

একটি নতুন লং মার্চ-৯ (CZ-9) পুনঃব্যবহারযোগ্য সুপার-হেভি রকেটের মাধ্যমে চিন কক্ষপথে নানা যন্ত্র নিয়ে যাবে। এই রকেটের সাহায্যেই, চিন মহাকাশচারীদের চাঁদে নিয়ে যাওয়ারও উদ্দেশ্যও কাজ শুরু করবে শিগগিরই বলে আশা করছে। রকেট বিজ্ঞানী এবং চাইনিজ আকাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্য লং লেহাও জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে ৩৬,০০০ কিমি উপরে একটি জিওস্টেশনারি কক্ষপথে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এই কাজটি সম্পূর্ণ হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পৃথিবীর মানুষদের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। জানা যাচ্ছে, এক বছরে সংগৃহীত সৌরশক্তি পৃথিবী থেকে উত্তোলিত তেলের মোট পরিমাণের সমতুল্য হবে।

প্রকল্পটি কবে শুরু হবে বা কতদিনে শেষ হবে তা নিয়ে বিশদ তথ্য দেয়নি চিন। আইসল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি স্পেস সোলারের সঙ্গে মিলে ২০৩০ সালের মধ্যে এমনই একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে। ২০৩৬ সালে একটি আপগ্রেড পাওয়ার স্টেশনও তৈরি হবে যা ১,৫০০ থেকে ৩,০০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি সংগ্রহ করতে পারবে সূর্য থেকে। তাত্ত্বিকভাবে বিষয়টি দুর্দান্ত মনে হলেও বিজ্ঞানীরা কতখানি দক্ষভাবে পৃথিবীতে সৌরশক্তি স্থানান্তর করতে পারেন সেটাই এখন প্রশ্ন।

More Articles