বিড়ালের চোখ হয়ে উঠল চশমা! যেভাবে জন্ম নিল ক্যাট আই গ্লাসেস

Cat Eye Glasses History: শিনাসির নকশা দেখে নাক সিঁটকোলেন অনেকেই। বিশ্ববিখ্যাত সব চশমা নির্মাতারা (যেমন রে ব্যান) এই নকশার চশমা বানাতেই চাইলেন না।

বিড়াল চক্ষু চশমা। বিড়ালের মতো রহস্যময়, আদুরে অথচ ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা এক প্রাণী কমই আছে। ঠিক এই গুণ বা বৈশিষ্ট্যটিই কীভাবে যেন জুড়ে গিয়েছে মহিলাদের আকর্ষণে আর তার থেকেই মহিলাদের চশমাতেও! হালে ফের বাজার মাত করেছে ক্যাটস আই সানগ্লাস, সাধারণ চশমাতেও ক্যাট আই ধরন পছন্দ করছেন মহিলারা। মহিলাদের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা নিছক কম হয়নি, কম হবেও না। তবে বিড়াল কীভাবে হয়ে উঠল চশমার অনুপ্রেরণা? এই বিশেষ চশমার নেপথ্যে থাকা শিল্পীকেই শ্রদ্ধা জানিয়েছে গুগল ডুডল, ৪ অগাস্ট তাঁর জন্মদিনে।

ক্যাট-আই ছিল ইতিহাসে প্রথম মেয়েদের চশমার স্টাইল। ১৯২০-র দশকের শেষের দিকে আলটিনা শিনাসি মিরান্ডা প্রথম এই ক্যাট আই চশমার উদ্ভাবন করেন। বলা যায়, মূলত পুরুষ-চালিত চশমা শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তিনিই। হলিউডের কিংবদন্তী অড্রে হেপবার্ন এবং মেরিলিন মনরোর পরা সানগ্লাস হোক, বা সদ্য কলেজে পা রাখা ছাত্রীর নতুন চশমা বাছাই, ক্যাট আই এখনও রয়েছে পছন্দের শীর্ষে।

মেড ইন ম্যানহাটন : ক্যাট আই চশমা জন্ম নিল কীভাবে?

আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ডিজাইনার আলটিনা শিনাসি মিরান্ডা না থাকলে এই বিড়াল চোখের গল্প শুরুই হতো না। একদিন নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউতে একজন চোখের ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে দিয়ে যাওয়ার সময় শোকেসের দিকে চোখ গেল মিরান্ডার। ইউনিসেক্স ফ্রেম রাখা রয়েছে সেখানে। ডরোথি পার্কারের একটি লাইন মাথায় খেলে গেল হঠাৎ—“Men seldom make passes at girls that wear glasses”! ব্যাস, বিপ্লবের এই ছিল বুনিয়াদ। শিনাসি মিরান্ডা এমন এক জোড়া চশমা তৈরির কথা ভাবলেন যাতে একজন মহিলাকে আরও আকর্ষণীয় দেখাবে। ভেনিসের হার্লেকুইন মুখোশ নিয়ে নাড়াঘাঁটা করলেন। এই হার্লেকুইন মুখোশ থেকেই জন্ম নিল হারলেকুইন চশমা, যা পরে বিখ্যাত হয়ে গেল ক্যাট-আই নামে।

আরও পড়ুন- ছিল ধনীদের বিলাস! কীভাবে মধ্যবিত্ত মহিলাদের ‘জাতীয় পোশাক’ হয়ে উঠল নাইটি?

১৯০৭ সালের ৪ অগাস্ট নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে জন্ম শিনাসির। স্নাতকস্তরের পাঠ শেষ করার পরে প্যারিসে চিত্রকলা বিষয়ে পড়ার সময়ই শিনাসির এই শিল্প প্রেমের জন্ম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরই নিউ ইয়র্কের আর্ট স্টুডেন্টস লিগে নিজের শৈল্পিক ক্ষমতাকে শান দিতে থাকেন তিনি। তাঁর এই হার্লেকুইন চশমা তৈরি চশমা শিল্পে এক মোড় বদলানো ঘটনা বলা যায়। ১৯৩১ সালে, আমেরিকান অপটিক্যাল ফাল-ভ্যু প্রবর্তন করে- এটিই প্রথম প্যান্টোস্কোপিক ফ্রেম। এই প্রথম ফ্রেমের উপরের অংশে কব্জাগুলি বসানো হয় যাতে, যিনি চশমা পরে আছেন চশমার কাঁচটি তাঁর দিকে হেলে থাকবে। এই প্রযুক্তিগত উন্নতি চশমার নতুন আকারের দরজা খুলে দেয়। মুখের সঙ্গে আরও ভালো ফিট করবে এমন ফ্রেমের কদর বাড়তে থাকে।

সেই পথ ধরেই আলটিনা শিনাসি নানা রকম চশমার নকশা আঁকার পরে অবশেষে এই ক্যাট আই আবিষ্কার করেন। এই প্রথম পুরুষ এবং মহিলাদের চশমা আলাদা করে শ্রেণিবদ্ধ হলো আর রোজের দরকারের পাশাপাশি ফ্যাশনের এক চরম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠল ক্যাট আই। তবে অত সহজ তো নয় কিছুই! শিনাসির নকশা দেখে নাক সিঁটকোলেন অনেকেই। বিশ্ববিখ্যাত সব চশমা নির্মাতারা (যেমন রে ব্যান) এই নকশার চশমা বানাতেই চাইলেন না। ম্যাডিসন অ্যাভিনিউতে একটি বুটিক অপটিক্যাল দোকানে একজন সহযোগীকে খুঁজে পেলেন শিনাসি মিরান্ডা। তাঁর এই নয়া ক্যাট আই ডিজাইনগুলি আমেরিকান লেখক ক্লেয়ার বুথ লুস এবং অভিনেত্রী ক্যাথারিন কর্নেলের মতো হাই-প্রোফাইল মহিলাদের কাছে বিক্রি করলেন সেই ব্যক্তি। ১৯৩০-এর দশকের শেষের দিকে, হার্লেকুইন চশমা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে সেগুলি বিক্রির জন্য শিনাসি তাঁর নিজস্ব কোম্পানি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে, চশমা শিল্পে বিপ্লব ঘটানো এবং অপটিক্যাল চশমাকে ফ্যাশনে রূপান্তরিত করার জন্য লর্ড এবং টেলরের কাছ থেকে আমেরিকান ডিজাইন পুরস্কার লাভ করেন শিনাসি।

১৯৪৭ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর পরেই, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর নয়া ক্যাট আই লুক নিয়ে আসেন। বাইরের প্রান্তটি আরও সরু, একজন মহিলার মুখের গঠনকে আরও নিখুঁতভাবে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। ১৯৫০-এর দশকে হলিউডের ফ্যাশনে অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হয়ে যায় ক্যাটস আই গ্লাসেস। মেরিলিন মনরো ক্যাটস আইকে নিজের সিগনেচার লুক করে তুলেছিলেন। গ্রেস কেলি এবং এলিজাবেথ টেলরের বিশেষ পছন্দ ছিল এই বিড়াল চক্ষু। তারপর, ১৯৬১ সালে, অড্রে হেপবার্ন অলিভার গোল্ডস্মিথ 'ম্যানহাটান' সানগ্লাস পরে ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফনি'-তে অভিনয় করলেন। বড় আকারের ক্যাট-আই সানগ্লাস সেই থেকে হয়ে উঠল বিখ্যাত। ইতালিতে, আনুক আইমি এবং সোফিয়া লরেনের মতো সেই সময়ের চলচ্চিত্র তারকারাও অন-স্ক্রিন এবং অফ-স্ক্রিন দুই ক্ষেত্রেই ক্যাট-আই পরতে শুরু করলেন। এরপর থেকে বিশ্বজুড়েই কদর বাড়ে ক্যাট আই সানগ্লাসের। এদেশে রেখা থেকে শুরু করে বর্তমানের সমস্ত অভিনেত্রীই ক্যাট আই চশমাকে করে তুলেছেন নিজেদের আকর্ষণের অন্যতম উপাদান। ফ্যাশনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সাধারণ জীবনেও ক্যাট আই চশমা হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। আর এই সবের নেপথ্যে রয়েছেন শিনাসি। তাঁর ১১৬ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তাঁকে সম্মান জানিয়েছে। চশমার প্রয়োজনকে বিলাসের সোহাগে ডুবিয়েছিলেন তো তিনিই, সেই কোন কালে!

More Articles