নতুন শ্রম কোডে বিতর্ক, কেন ১০টি ট্রেড ইউনিয়ন তীব্র বিরোধিতা করছে?
India’s New Labour Codes: ১০টি জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, কোডগুলি 'শ্রমিক-বিরোধী ও মালিকপক্ষ-বান্ধব', 'প্রতারণামূলক', এবং 'গণতান্ত্রিক আলোচনাকে উপেক্ষা করা'।
কেন্দ্রীয় সরকার একসঙ্গে চারটি শ্রম কোড— Code on Wages (2019), Industrial Relations Code (2020), Social Security Code (2020) এবং Occupational Safety, Health and Working Conditions Code (2020) চালু করেছে। এই চারটি কোড কার্যকর হওয়ার ফলে পুরনো ২৯টি শ্রম আইন একত্রিত হয়ে গেল। সরকারের দাবি, এতে শ্রম আইন আরও সরল হবে, অপ্রয়োজনীয় জটিলতা কমবে এবং শ্রমিক ও নিয়োগকর্তা দুই পক্ষই সুবিধা পাবেন। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বাস্তবে এই আইন শ্রমিকদের অধিকার কমিয়ে দেবে এবং মালিকপক্ষের ক্ষমতা আরও বাড়াবে।
সরকার বলেছে, নতুন কোডগুলোর উদ্দেশ্য হলো ব্যবসা সহজ করা এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করা। সরকারের মতে—
•শ্রমিকদের বেতন, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা আরও ভালো হবে;
•গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীরা (যেমন ডেলিভারি বয়, ক্যাব রাইডার) প্রথমবারের মতো সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসবেন;
•Swiggy-Ola’র মতো অ্যাগ্রিগেটর কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট তহবিলে অর্থ জমা দেবে;
•কর্মীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার বাধ্যতামূলক;
•৪০ বছরের বেশি বয়সি শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা;
•মহিলারা রাতের শিফটে কাজ করলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক।
সরকারের কথায় এটি ভারতের শ্রম ব্যবস্থাকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করার একটি বড় পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন
স্বাধীন কাজের ইন্দ্রজালে কীভাবে প্রতারিত হচ্ছেন গিগ শ্রমিকেরা?
কিন্তু বাস্তব নিয়ে তীব্র সন্দেহ প্রকাশ করেছে দেশের বড় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। তাদের মতে, নতুন শ্রম কোডগুলোর মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার কমে যাবে এবং মালিকদের হাতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। তারা বলছে—
•কোড চালুর আগে শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি;
•অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন বাতিল করে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে;
•চাকরি নিরাপত্তা কমবে;
•বেতন ও কাজের সময় নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন;
•জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কত হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ নেই;
•অনিয়োজিত খাতে কাজ করা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন।
ট্রেড ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, এসব কোড শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারও সীমিত করবে, ফলে তাদের ন্যায্য দাবি জানানোর সুযোগ সংকুচিত হবে। ১০টি জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, কোডগুলি 'শ্রমিক-বিরোধী ও মালিকপক্ষ-বান্ধব', 'প্রতারণামূলক', এবং 'গণতান্ত্রিক আলোচনাকে উপেক্ষা করা'। কিছু সংগঠন এমন অভিযোগও তুলেছে যে, এই কোড শ্রমিকদের ‘আধুনিক দাসত্বে’ ঠেলে দিতে পারে।
বামপন্থী দলগুলোর বক্তব্য, এই আইন শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিয়ে বড় ব্যবসাকে সুবিধা দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না, এবং শ্রমিক-সরকার আলোচনার কোনো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়নি। ফলে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আরও পড়ুন
কোন কাজে কত টাকার ফারাক? কেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে যান?
শ্রম কোড কেন্দ্র ও রাজ্য দুই পক্ষেরই হাতে। কোড চালু হলেও এগুলো কার্যকর করতে হলে প্রতিটি রাজ্যকে নিজস্ব নিয়ম (rules) তৈরি করতে হবে। অনেক রাজ্য এখনও সেই নিয়ম তৈরি করেনি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন ঘোষণা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে শ্রমিকরা কবে এর সুবিধা বা ক্ষতি দেখতে পাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ২৬ নভেম্বর সারা দেশে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকরা কালো ব্যাজ পরে বিক্ষোভ দেখাবেন। তাদের দাবি, চারটি কোড প্রত্যাহার করতে হবে এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা, বেতন ও স্থায়ী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন শ্রম কোড নিয়ে কেন্দ্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলির টানাপোড়েন ক্রমেই বাড়ছে। সরকারের দাবি, আইনগুলি ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করবে এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা এক ছাতার নিচে আনবে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নগুলির মতে, এই আইন আসলে শ্রমিকদের অধিকার কমিয়ে মালিকদের ক্ষমতা বাড়াবে। কোনো আলোচনা বা সংলাপ ছাড়াই আইন চালু করায় ক্ষোভ আরও বাড়ছে। এখন দেখার ভবিষ্যতে কেন্দ্র কি শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি শুনে আলোচনায় বসবে, নাকি প্রতিবাদ আরও জোরদার হবে। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা কোন পথে এগোবে, তার উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।

Whatsapp
