ব্যাটের পর গলফ ক্লাব: কপিল দেবের আর এক মাঠ
Kapil Dev: গলফ কপিলকে টেনেছিল নিঃসঙ্গতার কারণেই। এখানে ব্যর্থ হলে কারও দিকে আঙুল তোলা যায় না। সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিজেকেই। সেই দায়িত্ববোধই তাঁকে ধীরে ধীরে খেলাটার ভিতরে নিয়ে যায়।
১৯৮৩-র লর্ডস মানেই কপিল দেব। এই সমীকরণ এতটাই পাকা যে তার বাইরে কপিলকে ভাবতেই অনেকের অসুবিধে হয়। অথচ ক্রিকেট ছাড়ার পর, প্রায় নিঃশব্দে, তিনি প্রবেশ করেছিলেন আর এক খেলায়। সেখানে গ্যালারির চিৎকার নেই, সতীর্থের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগও নেই। আছে শুধু নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের ভুল আর সেগুলো সামলে নেওয়ার দায়। গলফের সঙ্গে কপিল দেবের প্রথম পরিচয়টা খানিকটা কাকতালীয় ছিল। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ভারতে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্স গলফ খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কপিল তখনও ঠিক জানতেন না, গলফ বলতে কী বোঝায়। ডেলি গলফ ক্লাবে সোবার্স যখন ডান ও বাঁ-হাতে আলাদা হ্যান্ডিক্যাপের কথা বললেন, অর্থাৎ ডান হাতে খেললে তাঁর দক্ষতার মান দুই, আর বাঁ হাতে খেললে এক। তখন উপস্থিত অনেকেই অবাক হয়ে যান। কপিলও। কিন্তু সেদিন মাঠে দাঁড়িয়ে সোবার্সের খেলা দেখার অভিজ্ঞতাটা কপিলের মনে থেকে গিয়েছিল।
আসল গল্পটা ক্রিকেট ছাড়ার পরে শুরু হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে অবসর নেওয়ার পর কপিল গলফে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। তাঁর মনে হত এটা ‘বয়স্কদের খেলা’। তবু বন্ধুর জোরাজুরিতে একদিন মাঠে নেমেছিলেন। প্রথমদিকে ভালো লাগেনি, অস্বস্তিও ছিল। কিন্তু বল মারার সময় মাসল মেমরি ফিরে এল। দূরে বল পাঠানোর জোর যেন ক্রিকেট থেকেই এসেছিল। গলফ কপিলকে টেনেছিল নিঃসঙ্গতার কারণেই। এখানে ব্যর্থ হলে কারও দিকে আঙুল তোলা যায় না। সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিজেকেই। সেই দায়িত্ববোধই তাঁকে ধীরে ধীরে খেলাটার ভিতরে নিয়ে যায়। প্রশিক্ষক বিক্রমজিৎ সিংহ আর অমিত লুথরার কাছ থেকে প্রাথমিক দীক্ষা নিয়ে, খুব দ্রুতই শিখতে থাকেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যেই যাঁরা তাঁকে শিখিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গেই সমানে সমানে খেলতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন - বিশ্বকাপ ফাইনালে গ্যালারিতে ডাক পেলেন না ৮৩-র নায়ক কপিল দেব
সব দিন যে খেলাটা সহজ লেগেছে, তা নয়। খারাপ শট, খারাপ রাউন্ড, এসবও ছিল। কিন্তু সেখান থেকেই তিনি বুঝেছিলেন গলফ ক্রিকেটের তুলনায় অনেক বেশি মনোযোগ দাবি করে। আজও তিনি বলেন, খেলোয়াড় জীবনে যদি গলফের অভ্যাস থাকত, তাহলে হয়তো নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারটাই অন্যরকম হতে পারত। এই ভাবনাগুলোই পরে গিয়ে প্রভাব ফেলেছে তাঁর প্রশাসনিক ভূমিকায়।
পেশাদার গলফ সংস্থার সভাপতি হিসেবে কপিল দেব কখনও নিজেকে আলাদা করে সামনে আনতে চাননি। তবু তাঁর আমলে প্রতিযোগিতার মোট পুরস্কারমূল্য বেড়ে প্রায় ষাট কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আগামী দিনে লক্ষ্য আরও বড়। একশো কোটি টাকা। যদিও তিনি নিজেই মানেন, কাজটা সহজ নয়। তবে শুধু পুরস্কারের অঙ্ক বাড়ানো নয়, খেলোয়াড়দের দৈনন্দিন সমস্যাতেও নজর দিয়েছেন তিনি। প্রতিযোগিতার সময় বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যাতায়াত খরচ কমানো, খাবারের মান উন্নত করা, এসব নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। সব পরিকল্পনা যে এখনই বাস্তবায়িত হবে, এমন নয়। কিন্তু লক্ষ্য স্পষ্ট। একটি বিষয়ে কপিল দেব বরাবরের মতোই স্পষ্টভাষী। প্রশাসনে বেশি দিন আটকে থাকার পক্ষপাতী নন তিনি। দু’টি মেয়াদের বেশি দায়িত্বে থাকার ইচ্ছা নেই। যদিও ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে এই মানসিকতার অভাব নিয়ে তাঁর আক্ষেপ নতুন নয়।
ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কপিল দেব আকাশে ভেসে বেড়ান না। বিশ্বসেরার স্বপ্ন দেখানো তাঁর ধাতে নেই। তবে অলিম্পিক পদক; সেটাকে তিনি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য বলেই মনে করেন। ব্যাটের পরে গলফ ক্লাব হাতে নিয়েও কপিল দেব আসলে একই রয়ে গিয়েছেন। নিজের সঙ্গে লড়াই করছেন এখনও। পার ছুঁয়ে থেমে যাওয়ার লোক তিনি নন। প্রশ্ন শুধু একটাই, ভারতীয় গলফ তাঁর দেখানো পথে কতটা দূর এগোতে পারে।
Whatsapp
