মার্কিন হেফাজতে ৭৩ বছরের ভারতীয় বৃদ্ধার দুর্দশা নিয়ে সংসদে তোলপাড়! হরজিৎ কৌরের সঙ্গে কী ঘটেছিল?
US immigration: তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁকে ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা মেঝেতে শুয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়, বিছানা দেওয়া হয়নি। দুই হাঁটুর রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করা একজন মানুষের পক্ষে এটা কেমন কষ্ট হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
৭৩ বছরের এক ভারতীয় নারী, হরজিৎ কৌর। বয়সের ভার, দুই হাঁটুর সমস্যায়, নিজে নিজে দাঁড়ানো পর্যন্ত কষ্ট তাঁর। তবু যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের (ICE) হেফাজতে তাঁকে যেভাবে রাখা হয়েছিল, তা শুধু ‘অমানবিক’ নয়, উন্নত বিশ্বের মূল্যবোধকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে। হরজিৎ কৌরের গল্প এখন কেবল একজন নারীর ব্যক্তিগত লড়াই নয়; যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার ভেতরের নিষ্ঠুরতার প্রতিচ্ছবি। আর তাই ঘটনাটি উঠে এসেছে সরাসরি ভারতের সংসদে। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর স্পষ্ট বলেছেন,
এ আচরণ মানবিকতার সীমা লঙ্ঘন করেছে।
ঘটনার শুরু অবৈধ অবস্থানের অভিযোগে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কাগজপত্রে জটিলতার জন্য ইমিগ্রেশন কর্মকর্তােরা বৃদ্ধাকে আটক করেন। নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় বা বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু হরজিৎ কৌরের ক্ষেত্রে তার উল্টোটি ঘটেছে। ৬০-৭০ ঘণ্টা মেঝেতে শোয়া, হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা বৃদ্ধার কাছে চূড়ান্ত যন্ত্রণার হওয়াই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন
জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর! ২,৪১৭ ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে ট্রাম্পের আমেরিকা
তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁকে ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা মেঝেতে শুয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়, বিছানা দেওয়া হয়নি। দুই হাঁটুর রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করা একজন মানুষের পক্ষে এটা কেমন কষ্ট হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। অথচ মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁর শারীরিক অবস্থার ন্যূনতম বিবেচনাও করেননি। ব্যথা কমানোর ওষুধ চাইলেও তাঁকে দেওয়া হয় বরফ। এ যেন চিকিৎসার নামে উপহাস। একজন বৃদ্ধার জন্য এটি কেবল অবহেলা নয়, নির্মম অবজ্ঞাও বটে।
খাবার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু খেতে পারেননি, তারপরও দোষ দেওয়া হয়েছে তাঁকেই। ডিটেনশন সেন্টারে স্যান্ডউইচ দেওয়া হলেও তা তিনি খেতে পারেননি। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিশেষ খাবার দরকার ছিল, কিন্তু সেই প্রয়োজনের কথা চিন্তাই করা হয়নি।
জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তাকে হাতকড়া পরানো হয়নি। কিন্তু সেটিই যেন একমাত্র ‘মমতার প্রমাণ’ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। সংসদে মন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, “হাতকড়া না পড়ানোই মানবিকতার শেষ সীমা নয়। আটক অবস্থায় তাঁর সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।”
আরও পড়ুন
চিনে ভারতীয় নারীকে হেনস্থা! জন্মস্থান আরুণাচল বলেই আটক?
২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ১৮,৮২২ জন ভারতীয়কে নির্বাসিত করেছে। শুধু ২০২৫ সালে, নভেম্বর পর্যন্ত, ৩,২৫৮ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংখ্যা দেখলে বোঝা যায়, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কিন্তু ৭৩ বছরের একজন নারীকে এমন অযত্নে রাখা নজিরবিহীন।
ঘটনার পর ভারত কড়া ভাষায় মার্কিন প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। দিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের, বিশেষ করে বয়স্কদের সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। হরজিৎ কৌর এখন ভারতে। কিন্তু তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিটেনশন সিস্টেম বহুদিন ধরেই মানবাধিকার সংগঠনগুলির নজরে। হরজিৎ কৌরের ঘটনা আবারও তাদের নগ্ন রূপ সামনে এনেছে।
নিজেদের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের আদর্শ নিয়ে যারা বিশ্বকে শিক্ষা দেয়, সেই দেশের ভেতরেই কেন একজন বৃদ্ধা এতটা নিদারুণ উপেক্ষার শিকার হলেন? এই প্রশ্ন শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের। একজন বৃদ্ধার প্রতি অবহেলা কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়; মানবিকতার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া। আর হরজিৎ কৌরের নীরব কষ্ট সেই ব্যর্থতার সবচেয়ে তাজা প্রমাণ।

Whatsapp
