জেন জেডের বিনিয়োগ ঝড়ে বদলাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি?

GEN-Z's FINANCIAL INFLUENCE AND HABITS: আউটলুক বিজনেস-এর তথ্য বলছে, নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৫৬.২% ছিল ৩০ বছরের নিচে অর্থাৎ অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর অংশীদারিত্ব দ্রুত বাড়ছে।

AG

ভারতের তরুণ প্রজন্ম অর্থাৎ জেন জেডদের বিনিয়োগ অভ্যাসে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে। ক্লিয়ারট্যাক্সের সাম্প্রতিক তথ্য জানাচ্ছে, ২০২৪ সালে ২৫ বছরের নিচে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমার শতাংশ বেড়েছে। আয়কর রিটার্ন হল এমন এক ফর্ম, যার মাধ্যমে আমরা সরকারকে আমাদের বার্ষিক আয়ের হিসাব জানাই। এই ফর্মে বেতন, ব্যবসা, শেয়ারবাজার বা অন্যান্য উৎস থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত ট্যাক্স কাটা হয়েছে এবং আরও কত কর দিতে হবে—সব কিছু উল্লেখ থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের বৃদ্ধি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ নতুন ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই সংখ্যা বোঝাচ্ছে যে তরুণেরা আর স্রেফ সঞ্চয় বা ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল নন, বরং তারা সক্রিয়ভাবে শেয়ার বাজার, ট্রেডিং এবং ক্যাপিটাল গেইনের দুনিয়ায় প্রবেশ করছে। 

সবার আগে জানতে হবে এই জেন জেড কারা? জেন জেড হল ১৯৯৭ থেকে ২০১২  সালের গোড়ার দিকে জন্মানো প্রজন্ম, যাদের আজ বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মিলেনিয়ালদের পর এরা নতুন প্রজন্ম, যাদের বেড়ে ওঠা হয়েছে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। তাই এদের 'ডিজিটাল নেটিভ' বলা হয়। কাজের ক্ষেত্রে এরা ফ্রিল্যান্স, স্টার্টআপ বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে বেশি আগ্রহী। অনলাইন শপিং, সাবস্ক্রিপশন কালচার, শেয়ার মার্কেট বা ক্রিপ্টো— সব ক্ষেত্রেই এদের অংশগ্রহণ বাজারকে বদলে দিচ্ছে।পাশাপাশি এরা সামাজিকভাবে সচেতন। জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গসাম্য, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে সরব। সব মিলিয়ে, জেন জেড আজ প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির এক নতুন চালিকাশক্তি। জেন জেড বা তরুণ প্রজন্মের শেয়ার বাজারে প্রবেশকে শুধু উদ্দীপনা বা ফ্যাশন বলে হালকা ভাবে দেখা ঠিক হবে না। এর পিছনে রয়েছে গভীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত কারণ। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বড় ভূমিকা রাখছে।

মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন ব্রোকারেজ, নো-কমিশন ট্রেডিং এবং তাৎক্ষণিক কেওয়াইসির কারণে বাজারে প্রবেশ করা এখন কয়েক মিনিটের কাজ। পূর্বে যেখানে কাগজপত্র ও ব্যাঙ্কের বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে শেয়ার কেনা-বেচা জটিল ছিল, এখন তা ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব তরুণদের আচরণে বড় পরিবর্তন এনেছে। ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম— এই প্ল্যাটফর্মে দ্রুত লাভের গল্প, বিনিয়োগ টিপস, এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব তরুণদের ফোমো বা ফিয়ার অফ মিসিং আউট তৈরি করছে। তারা দেখছে বন্ধুরা বা অনলাইন কমিউনিটিতে লাভের গল্প শেয়ার করছে, ফলে বাজারে প্রবেশের প্রলোভন বাড়ছে। একটি সার্ভে অনুসারে, ২৫ বছরের নিচের ভারতীয়দের প্রায় ৬০% শেয়ার বা ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলেছে স্বল্পমেয়াদি লাভের আশা এবং সোশ্যাল প্রভাবের কারণে। এর পাশাপাশি চাকরি ও আয়ের অনিশ্চয়তা, ফ্রিল্যান্সিং এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতির প্রসার তাদেরকে আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য করছে। তারা কেবল বেতন বা ব্যাঙ্ক সঞ্চয়ে নির্ভর করতে চাইছে না। শেয়ার বাজার তাদের কাছে আয়ের এক সম্ভাবনাময় মাধ্যম। জেন জেড-এর শেয়ার বাজারে আগ্রহ হলো প্রযুক্তি-সুবিধা, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সমন্বয়। এটি কেবল বিনিয়োগ নয়, বরং তাদের অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা ও জীবনধারার নতুন রূপ, যেখানে ঝুঁকি নেওয়া, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং আর্থিক সচেতনতা— এই তিনটি একসাথে কাজ করছে।

আরও পড়ুন- নেপালের জেন জি-র বিক্ষোভের কারণ, কারা এই নেপোকিডস?

জেন জেড প্রজন্মের বিপুল হারে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ভারতীয় অর্থনীতিকে কয়েকটি দিক থেকে বদলে দিচ্ছে। প্রথমত, বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনএসসি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে যেখানে ৩০ বছরের নিচের বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল ২২.৯%, ২০২৪-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০%। অর্থাৎ লাখ লাখ নতুন বিনিয়োগকারী প্রতিদিন লেনদেনে যুক্ত হচ্ছে, যার ফলে পুঁজিবাজারে অর্থপ্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এই বাড়তি তারল্য কর্পোরেট সংস্থার জন্য মূলধন সংগ্রহ সহজ করছে এবং শিল্প ও পরিষেবা খাতে নতুন বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করছে। তরুণ বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক রয়েছে নতুন সেক্টরের দিকে। ইভি, গ্রীন এনার্জি, ফিনটেক, বায়োটেক কিংবা টেক-স্টার্টআপে মূলধনের প্রবাহ বাড়ছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয়— প্রচলিত শিল্পের পাশাপাশি ভবিষ্যতমুখী খাতগুলিও শক্তিশালী হচ্ছে। ভারতের নিউ ইন্ডিয়া অর্থনীতির স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সঞ্চয় সংস্কৃতির বদল ঘটছে। আগে যেখানে পরিবারের মূল ভরসা ছিল ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট, সোনা, জমি, আজকের জেন জেড মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার বা ইনডেক্স ফান্ডকে বেছে নিচ্ছে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩৫ বছরের নিচের ৪৫% যুবক-যুবতী শেয়ার বাজারকে প্রাথমিক বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে দেখছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের পুঁজিবাজার গভীর ও স্থায়ী হবে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে আরও স্থিতিশীল ভিত্তি দেবে। জেন জেড প্রজন্মের মধ্যে ইতিমধ্যেই এমন কয়েকজনের নাম সামনে এসেছে, যারা খুব অল্প বয়সেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সাফল্যের নজির গড়েছেন। যেমন, মোতিলাল অসওয়ালের সূত্র থেকে জানা গিয়েছে আশু শেরাওয়াত, যিনি কিশোর বয়সেই ট্রেডিং শুরু করে মিলিয়নিয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন।

আবার ইয়াহু নিউজের তথ্য অনুযায়ী, আয়ুষ জৈন, মাত্র আঠারো-উনিশ বছর বয়সেই বিনিয়োগ দক্ষতার জন্য সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসেন। একইভাবে মিডিয়ামের সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃতান্ত কুমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানিয়েছেন, আঠারো বছর বয়সেই নিয়মিত বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি স্থিতিশীল মুনাফা গড়ে তুলতে পেরেছেন। দ্য হিন্দু-র তথ্য অনুযায়ী, শঙ্কর্ষ চন্দ, মাত্র তেইশ বছর বয়সেই যিনি অল্প বিনিয়োগ থেকে কয়েক লক্ষ টাকার মুনাফা তুলেছেন। মিড দে-এর খবর অনুসারে, কনিষ্ক গুপ্ত আঠারো বছর বয়সে শেয়ার মার্কেটে পা রেখে আজ নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট কমিউনিটি তৈরি করেছেন। দ্য ইন্ডিয়ান বুলেটিন বলছে সঙ্কল্প সিং রাজপুত, কলেজ জীবনে থেকেই অপশন সেলিং কৌশল ব্যবহার করে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বেশি লাভ করেছেন। এই নামগুলো প্রমাণ করে দিচ্ছে, নতুন প্রজন্মের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক জ্ঞানের মেলবন্ধন ভারতের শেয়ারবাজারে এক নতুন তরঙ্গ তৈরি করছে।

তবে এই প্রবল আগ্রহের সঙ্গে এসেছে বাস্তব সমস্যাও। ক্লিয়ারট্যাক্সের পরিসংখ্যানই বলছে, এই বয়সগোষ্ঠীর বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির হার তুলনামূলকভাবে বেশি। অর্থাৎ, তরুণেরা বাজারে ঝাঁপ দিচ্ছে প্রবল উৎসাহ নিয়ে, কিন্তু অভিজ্ঞতা ও ঝুঁকি-পরিচালনার অভাবে তারা প্রায়শই ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে একটি বৈপরীত্য। তারা ক্ষতি করলেও বাজার থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না, বরং প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকছে। এর মানে তরুণেরা এই নতুন অর্থনৈতিক পরিসরে নিজেদের জায়গা করে নিতে চায়, যদিও এর ফলস্বরূপ প্রাথমিক ক্ষতিও মেনে নিতে হচ্ছে। তরুণেরা অল্প সঞ্চয় দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করলেও যদি ধারাবাহিকভাবে লোকসান হয়, তা তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক স্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। একই সঙ্গে মানসিক চাপ, অনলাইন ফোমো এবং অপ্রামাণ্য ইনফ্লুয়েন্সারদের প্ররোচনা তাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক তরুণ স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য অতিরিক্ত স্পেকুলেশন বা ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডিং (যেমন ফিউচারস ও অপশন) করছে।

আউটলুক বিজনেস-এর তথ্য বলছে, নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৫৬.২% ছিল ৩০ বছরের নিচে অর্থাৎ অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর অংশীদারিত্ব দ্রুত বাড়ছে। এতে বাজারে অস্থিরতা তৈরির সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই বিনিয়োগ শিক্ষা, আর্থিক সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে, জেন জেড-এর সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল, আধুনিক ও ভবিষ্যত-কেন্দ্রিক করছে। তরুণদের আগ্রহ শুধু শেয়ার বাজারকে শক্তিশালী করছে না, বরং অর্থনীতির দিকনির্দেশ পাল্টে দিয়ে নতুন খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন- ভারতে পর্নোগ্রাফি দেখা, শেয়ার করা কি অপরাধ? কী বলছে দেশের আইন?

তবে এই ইতিবাচক ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতন বিনিয়োগের উপর জোর দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এ কারণে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু বাজারে প্রবেশ সহজ করলেই চলবে না— আর্থিক শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, কর কাঠামো ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কৌশল শেখানো দরকার। ব্রোকারেজ প্ল্যাটফর্মগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে— তরুণ ব্যবহারকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক সচেতনতামূলক কোর্স, ঝুঁকি-ডিসক্লোজার এবং ডেমো-অ্যাকাউন্ট চালু করা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকেও আইটিআর ২ ও আইটিআর ৩ ফাইলিং সম্পর্কিত সহজ নির্দেশিকা দেওয়া উচিত, যাতে নতুন বিনিয়োগকারীরা ট্যাক্সে ভুল না করে। সব মিলিয়ে, ভারতের তরুণ প্রজন্মের এই অগ্রগতি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে তাতে রয়েছে বড়সড় বিপদের সম্ভাবনাও। এটি একটি দ্বিমুখী ছবি— একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তারা কতটা দায়িত্বশীলভাবে শিখে, ঝুঁকি সামলে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে পারে তার ওপর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮–২৫ বছরের প্রায় ৫৬% তরুণ ইতিমধ্যেই শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছে। সেবি-র তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে নতুন খোলা ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের প্রায় ৪০% এসেছে টিয়ার-টু এবং টিয়ার-থ্রি শহর থেকে, অর্থাৎ ছোট শহরের তরুণরাও এখন বড় শহরের সমান গতিতে বিনিয়োগ করছে। লিঙ্গভিত্তিক অংশগ্রহণেও বদল আসছে। গ্রো অ্যাপের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত তিন বছরে মহিলা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২.৫ গুণ বেড়েছে, যার বড় অংশই ২০–৩০ বছর বয়সি। তবে এর সঙ্গে নতুন ঝুঁকিও বাড়ছে—রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনলাইন ট্রেডিং জালিয়াতির মামলা ১৩% বেড়েছে, যা মূলত অনভিজ্ঞ তরুণ বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য করছে। পাশাপাশি মানসিক চাপে ভোগার দিকও উঠে আসছে— ডিলয়েটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৫ বছরের নিচের ৬৪% তরুণ বিনিয়োগকারী লোকসান হলে উদ্বেগ ও হতাশায় ভোগে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ভারতের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতমুখী করছে ঠিকই, কিন্তু এর সঙ্গে শিক্ষার ঘাটতি, জালিয়াতির আশঙ্কা এবং মানসিক চাপের মতো ঝুঁকির বাস্তব উপস্থিতি উপেক্ষা করা যাবে না।

নতুন বিনিয়োগকারীরা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে ট্রেডিং শুরু করার ফলে শুধু পুঁজিবাজারে তারল্যই বাড়ছে না, সরকারের কর রাজস্বও বেড়েছে। সেবি ও সিবিডিটি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিকিউরিটিজ ট্রানজ্যাকশন ট্যাক্স আদায় প্রায় ২৩% বেড়ে ৩০,০০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে, যার বড় অংশ এসেছে নতুন খুচরো বিনিয়োগকারীদের লেনদেন থেকে। একই সঙ্গে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স এবং ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স থেকেও সরকারের আয় দ্রুত বাড়ছে— সিবিআর-ই বলছে, গত পাঁচ বছরে কেবল ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স সংগ্রহের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১৮%। এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি সরকারের ব্যালেন্স শিটে। অতিরিক্ত রাজস্ব, কল্যাণমূলক প্রকল্প ও ডিজিটাল উদ্যোগে ব্যয় করার সুযোগ তৈরি করছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি তরুণ প্রজন্মের এই প্রবণতা টেকসই হয়, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের কর-জিডিপি অনুপাত ১১.৭% থেকে ১৪% পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। অর্থাৎ, তরুণদের শেয়ার বাজারে সক্রিয় অংশগ্রহণ কেবল ব্যক্তিগত আর্থিক অভ্যাস নয়, জাতীয় অর্থনীতির স্থিতি ও বৃদ্ধির জন্যও এক বড় সহায়ক শক্তি।

More Articles