শ্রদ্ধা-আফতাবের মধ্যে ছিল তৃতীয় কোনও মহিলা? পুলিসের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়
Delhi Murder Case: আফতাব কি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে? এই সন্দেহ বারবার তাড়া করত শ্রদ্ধাকে...
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নেটফ্লিক্সে একটি সিরিজ মুক্তি পায়। সিরিজটির নাম ‘Dahmer – Monster: The Jeffrey Dahmer Story’। সিরিজটি দেখার পর অনেকেই রীতিমতো ঘাবড়ে যান। ভাবতে থাকেন, এমনটাও সম্ভব? ১৯৭৮-১৯৯১ এই কয়েক বছরে আমেরিকায় ১৭ জন নিরীহ মানুষকে খুন করেছিল জেফ্রি ডাহমার। শুধু তাই নয়, খুন করার পর তাঁদের দেহগুলি টুকরো টুকরো করে কেটে সে সংরক্ষণও করেছিল। প্রতিটা দেহাংশ রেখে দিয়েছিল ফ্রিজের ভিতর। সেই হত্যালীলারই একটি টুকরো আনা যাক। ১৯৯১ সালের ২৭ মে ডাহমারের শিকার ছিল কোনেরাক সিন্থাসোমফোন নামেরে এক ১৪ বছরের কিশোর। সে যখন তার ঘরে ঢোকে, তখন ডাহমারের বেডরুমের মেঝেতে আরও একটি দেহ পড়েছিল। পূর্ববর্তী সেই শিকারের সঙ্গেই সেই কিশোরকে খুন করে দেহ খণ্ড খণ্ড করে ডাহমার। অভিনয়ের জন্য প্রশন্সিত হয় নেটফ্লিক্সের এই সিরিজটি। কিন্তু ‘ডেক্সটার’-এর পাশাপাশি এই সিরিজটিও কি দেখেছিল দিল্লির আফতাব আমিন পুনেওয়ালা? অবশ্য সিরিজটি রিলিজের আগেই তো সে তার প্রেমিকা শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে হত্যা করে…
আরও পড়ুন : আফতাব একা নয়, যোগীরাজ্যেও প্রেমিকার দেহ টুকরো টুকরো, রাজ্যে রাজ্যে কেন বাড়ছে এই ধরনের অপরাধ?
নানা ঘটনার ঘনঘটায় ভরা এই দেশ ভারত। খেলা, সংস্কৃতি, দুর্নীতি, রাজনীতির ঝড়-ঝঞ্ঝা চলছেই। তার মাঝেও কিছু কিছু খবর আমাদের ভিতর থেকে নাড়িয়ে রেখে দেয়। দিল্লির হত্যাকাণ্ড সেরকমই একটি ঘটনা। বিগত কয়েকদিন ধরে খবরের কাগজ কিংবা চ্যানেল খুললেই সবার চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে। কী করে এমন কাজ করতে পারল আফতাব? ভালবাসার মানুষটির এমন পরিণতি করতে হাত কাঁপল না? এর পাশাপাশিই চলছে রাজনীতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মুনির নানা মত। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের দিকে ফিরে দেখলে একের পর এক রহস্য নতুন করে সামনে আসছে। আফতাবের পলিগ্রাফি টেস্ট থেকে শুরু করে খুনের অস্ত্র উদ্ধার হল কিনা- সবদিকেই নজর আমাদের। তার মাঝখানেই উঠে আসছে বিভিন্ন সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন : শ্রদ্ধার কাটা মাথা ফেলার আগে অভাবনীয় কীর্তি আফতাবের! দেহের বাকি টুকরো কোথায় কোথায় ফেলেছিলেন?
সম্প্রতি আরও একটি খবর দুঁদে পুলিস অফিসারদেরও রীতিমতো চমকে দিচ্ছে। গত ১৮ মে ঝগড়া চলাকালীন শ্রদ্ধাকে গলা টিপে খুন করে আফতাব। এরপর নিজের প্রেমিকার মৃতদেহটির ৩৫ টি টুকরো করে। সেগুলি সংরক্ষণ করার জন্য রাতারাতি সে বাড়িতে নিয়ে আসে একটি ফ্রিজ। সেই ফ্রিজেই রাখা থাকত শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডু। ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করার জন্য রীতিমতো গুগল সার্চ করে। এরপরও সেই বাড়িতে অন্যান্য মহিলাদের যাতায়াত ছিল। তদন্ত সূত্রে পুলিস জানতে পেরেছে, শ্রদ্ধাকে খুনের পরপরই অন্য এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক শুরু হয় আফতাবের। এমনকী সেই মহিলা আফতাবের বাড়িতেও আসেন। সেই বাড়ি, যার ফ্রিজে তখনও পড়ে রয়েছে শ্রদ্ধা ওয়ালকরের মৃতদেহের টুকরো। তবে এখানেই শেষ নয়। তদন্ত করতে করতে পুলিস জানতে পারে, একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে শ্রদ্ধা-আফতাবের সম্পর্কের সূত্রপাত। সেই একই ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমেই এই মহিলার সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয় আফতাবের। এবং শুধু তাই নয়, এই মহিলা নিজে একজন ডাক্তার! আরও ভালো করে বললে, একজন মনোবিদ। আপাতত সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত আরও এগোনোর চেষ্টায় পুলিস।
আরও পড়ুন : ৭০ টুকরো স্ত্রী, ৩০০ টুকরো প্রেমিক! প্রেমের এমন নৃশংস পরিণতি বারবার দেখেছে দেশ
এই একটি তথ্য আরও কিছু সম্ভাবনার কথা সামনে নিয়ে আসে। দৈনন্দিন খবর দেখতে দেখতে এখন আমরা জেনে গিয়েছি যে, শ্রদ্ধা তাঁর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে আফতাবের কাছে চলে এসেছিল। তাঁর ইচ্ছে ছিল বিয়ে করে সুখের সংসার তৈরি করার। কিন্তু আফতাবকে বিয়ের কথা বললে সে রাজি হয়নি। তারপরই দু’জনের মধ্যে তুমুল বিবাদ হয়। এখানেই প্রশ্ন আসে, বিবাদের কারণ কি কেবলই বিয়ে করতে চাওয়ার কথা বলা? নাকি আফতাবের জীবনে তৃতীয় কারও আগমনের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন শ্রদ্ধা? আফতাব কি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন? এই সন্দেহই বারবার তাড়া করত শ্রদ্ধাকে? পুলিস সেই ব্যাপারটিকেও এড়িয়ে যাচ্ছে না। বরং জানা গিয়েছে, আফতাব যে কোনওভাবে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করছেন, এটা সন্দেহ করেছিলেন শ্রদ্ধা। ফোনে ব্যস্ত থাকা, অন্য মহিলার সঙ্গে কথা বলা- এসবও ছিল সন্দেহের তালিকায়। তাহলে এই ‘অন্য মহিলা’-ই কি সেই মনোবিদ? সেই সম্পর্কে পথের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন শ্রদ্ধা? বিয়ের কথা বলার পরই কি সেই কাঁটা সরানোর পরিকল্পনা করেন আফতাব? প্রশ্নের ভিড় সবার মনেই…
আরও পড়ুন : কাটা মুণ্ডুকে মেকআপ, একই ঘরে যৌনতা! আফতাবের মানসিক বিকৃতির আড়ালে লুকিয়ে যে সত্য
তদন্তে জানা গিয়েছে, মে মাসের পর প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছত্রপুর জঙ্গলে গিয়ে দেহের টুকরোগুলি ছড়িয়ে দিয়ে আসত আফতাব। সন্দেহ এড়াতে গভীর রাতে এই কাজগুলি করত সে। তারপরও ওই মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল আফতাব। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, বাড়ির ফ্রিজের ভিতরেই পড়ে রয়েছে জ্বলজ্যান্ত একটি রহস্য। এতটাই স্বাভাবিক, নির্বিকার ছিল আফতাব পুনেওয়ালা। এমন ব্যাপারটিই পুলিসকে ভাবিয়ে তুলছে। সেইসঙ্গে আসছে আরও একটি প্রশ্ন। আফতাব বারবার বলেছে, ‘ডেক্সটার’ নামক সিরিজটি দেখে সে ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েছিল। দেহ লোপাটের উপায় পেয়েছিল। শ্রদ্ধাই কি তাহলে প্রথম? নাকি মৃতের তালিকা দীর্ঘ হতে পারে? শ্রদ্ধার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু না হলে কি মৃতের তালিকা বাড়তে পারত? এই কথা ভেবেই আরও চমকে উঠছেন সবাই।
আরও পড়ুন : নৃশংস খুনের আসল কারণ কী, জানতে নার্কো টেস্ট আফতাবের! ঠিক কীভাবে হয় এই পরীক্ষা
এখনও হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। জঙ্গলের ভেতর বেশ কিছু মানুষের দেহাংশ ও হাড় পাওয়া গিয়েছে বটে। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট না হলে সেগুলি শ্রদ্ধার দেহের অংশ কিনা তা প্রমাণ করাজাবে না। আইনের চোখে শ্রদ্ধা ওয়ালকর এখনও ‘নিখোঁজ’। তাই রহস্যের মেঘ এখনও সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয়নি। এর ভাঁজে ভাঁজে আর কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, সেটারই খোঁজে পুলিস-গোয়েন্দা। স্রেফ বিয়ে করতে না চাওয়া, না তৃতীয় কোনও ব্যক্তির ছায়া, কেন চলে যেতে হল শ্রদ্ধাকে। গোটা দেশের নজর এখন সেদিকেই।