কাঞ্চা শেরপা: ১৯৫৩ সালের মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের শেষ জীবিত সদস্য প্রয়াত
Kanchha Sherpa: কাঞ্চা তখন কেবল ১৯ বছরের এক পাহাড়ি ছেলে। কাজ ছিল খাবার, তাঁবু আর সরঞ্জাম বহন করা। সেই কাজেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার উচ্চতায়।
১৯৫৩ সালে মানুষ প্রথমবার এভারেস্ট জয় করেছিল। সেই সময় দলে ছিলেন কাঞ্চা শেরপা। স্যার এডমন্ড হিলারি আর তেনজিং নোরগের সঙ্গে তিনিও ছিলেন সেই অভিযানে। আজ তিনি আর নেই। নেপালের কাঠমান্ডুতে ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হয়ে গেল সেই ঐতিহাসিক দলের জীবন্ত অধ্যায়।
কাঞ্চা তখন কেবল ১৯ বছরের এক পাহাড়ি ছেলে। কাজ ছিল খাবার, তাঁবু আর সরঞ্জাম বহন করা। সেই কাজেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার উচ্চতায়, মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছিলেন অভিযাত্রীদের। সবাই জানে হিলারি আর তেনজিংয়ের নাম, কিন্তু কাঞ্চাদের মতো শেরপারাই সেই জয়কে সম্ভব করেছিলেন। নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সবাই শুধু দুইজনের নাম জানে। কিন্তু যাঁরা মালপত্র টেনেছিলেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের কেউ মনে রাখে না।”
আরও পড়ুন
দুর্ঘটনা কেড়েছিল দুই পা, এক হাত! সব অক্ষমতাকে হারিয়ে যেভাবে এভারেস্ট ডিঙোলেন যুবক
বহু বছর পর্বতারোহণের পর তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছেড়ে দেন। নামচে বাজারে একটি লজ খোলেন। কাঞ্চা গড়ে তুলে ছিলেন 'কাঞ্চা শেরপা ফাউন্ডেশন', দরিদ্র বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাহাড় আর মানুষের সেবা করেছেন তিনি।
কাঞ্চা শেরপার জীবনের গল্প আসলে শুধু একটি পর্বতারোহীর কাহিনি নয়, পরিশ্রমী মানুষেরও ইতিহাস। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় মানেই আজ সাহসের প্রতীক। কিন্তু এই গৌরবের নেপথ্যে ছিল শত শত কাঞ্চার ঘাম, ঠান্ডায় জমে যাওয়া নিঃশ্বাস, আর তুষারে ঢেকে যাওয়া পদচিহ্ন। যেখানে তেনজিং নোরগে ও হিলারি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি, সেখানে কাঞ্চা শেরপার মতো মানুষদের নাম হারিয়ে গিয়েছে পাহাড়ের নীরবতায়। অথচ তাঁরাও সমান সাহসী, সমান ত্যাগী। তাঁরা না থাকলে হয়ত ইতিহাস অন্যরকম হত।
আরও পড়ুন
এভারেস্টজয়ীরাও ভয় পান! পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্বত এটিই…
উল্লেখ্য, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার। এটি নেপাল ও তিব্বতের সীমান্তে, হিমালয়ের মহালংগুর পর্বতশ্রেণিতে অবস্থিত। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমুন্ড হিলারি ও নেপালের তেনজিং নোরগে শেরপা প্রথম মানুষ হিসেবে পৌঁছে যান এভারেস্টের শীর্ষে। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জন হান্ট। বিশাল সেই দলে ছিলেন প্রায় ৪০০ জন বাহক ও ২০ জন শেরপা গাইড। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন তরুণ কাঞ্চা শেরপা।
কাঞ্চা শেরপারা কখনও আলো খোঁজেননি। তাঁর চোখে পর্বত মানে ছিল শান্তি, প্রকৃতি, আর মানুষের সীমা অতিক্রমের সাহস। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছেন পাহাড়ের কোলে। কাঞ্চা শেরপার জীবন যেন সেই অমোঘ স্মরণ— ইতিহাস কেবল শীর্ষে ওঠা মানুষের নয়, বরং যাঁরা পায়ের তলায় পথ তৈরি করে দেয়, তাঁরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

Whatsapp
