বাংলাদেশের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কতটা?
Bangladesh slum fire: রাত সাড়ে আটটার দিকে দেখা যায়, বাংলাদেশের বউবাজার এলাকার কুমিল্লা পট্টি, বরিশাল পট্টি এবং ‘ক’ ব্লক আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় শত শত মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন।
ঢাকার মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটল। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট টানা কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালানোর পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানানো হয়েছে। তবে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউনিটগুলি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। আগুন নেভানোর কাজে স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু বস্তির ভেতরের সরু পথ এবং ঘিঞ্জি জনবসতির কারণে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, উৎসুক জনতার ভিড়ও কাজ ব্যাহত করেছে। পাইপ কেটে যাওয়া এবং জলের স্বল্পতায়ও আগুন নেভাতে সময় লেগেছে। আগুন লাগার শুরুতে যে অঞ্চলটিতে আগুন ধরে—বরিশাল পট্টি, সেখান থেকে দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন
কলকাতা জুড়ে কম্পন, বাংলাদেশে নিহত ৩! সবচেয়ে ভয়াবহ ৬টি ভূমিকম্পের ঘটনা
রাত সাড়ে আটটার দিকে দেখা যায়, বাংলাদেশের বউবাজার এলাকার কুমিল্লা পট্টি, বরিশাল পট্টি এবং ‘ক’ ব্লক আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় শত শত মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ খামারবাড়ির ঈদগাহ মাঠে, কেউ এরশাদ স্কুল মাঠে, আবার কেউ মহাখালী টিঅ্যান্ডটি মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে শতাধিক পরিবারের সদস্যদের মালপত্র নিয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে যে ঘর থেকে প্রায় কিছুই বের করার সময় পাননি তাঁরা। খামারবাড়ির মাঠে আশ্রয় নেওয়া অটোরিকশাচালক রবিন শেখ প্রথম আলো-কে বলেন, তাঁদের তিনটি ভাড়া করা ঘর পাশাপাশি ছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন তাদের এলাকায় পৌঁছায়। এতটাই তাপ ছিল যে ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। রাত ৯টার দিকে তিনি জানান, তখন পর্যন্ত তাঁদের ঘর নিশ্চয়ই পুড়ে গিয়েছে। সঙ্গে থাকা স্ত্রী নুরেনা বেগম বলেন, আগুন প্রথমে বরিশাল পট্টি থেকে উঠেছিল।
আরও পড়ুন
ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে বাংলাদেশ, ক্ষয়ক্ষতি ঠিক কতটা?
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা রাতভর খোলা আকাশের নিচে কাটাতে বাধ্য হন। অনেকেই মশার কামড় থেকে বাঁচতে এবং ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাঠ কিংবা প্লাস্টিক পুড়িয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়ে বলে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে। শিশু, বৃদ্ধ-সহ সব বয়সি মানুষই হঠাৎ করে গৃহহীন হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
এদিকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ায় কিছু সময় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে থাকেন। আগুন কীভাবে লাগল এ বিষয়ে এখনও কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষে কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে সম্প্রতি যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, তার তদন্তে ‘নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
কড়াইলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ড নতুন নয়। তবে এবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শীতের শুরুতেই বহু পরিবার সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

Whatsapp
