যে সঙ্গমে ডুব দিচ্ছেন ভক্তরা, সেই গঙ্গার জল কতটা দূষিত? চমকে দেবে এই তথ্য

Mahakumbh Ganga Pollution 2025: ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুসারে, যে ভক্তরা জলে ডুব দিতে চলেছে তাদের জলের গুণমান সম্পর্কে জানানো উচিত ছিল। তবে সেই নির্দেশ স্বাভবিকভাবেই মানা হয়নি।

মহাকুম্ভ মেলা চলছে। হিসেব বলছে, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আয়োজিত এই মেলাতে এবার মানুষ আসবেন প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন! এত মানুষ গঙ্গাস্নানও করবেন। 'পাপ' ধুয়ে ফেলবেন গঙ্গা নদীর জলে। গঙ্গা সেই পাপসমেত জল নিয়ে এগিয়ে চলবে সাগরের দিকে। তবে সেই পাপের চেয়েও ঢের বেশি কলুষ ইতিমধ্যেই গঙ্গার জলে বর্তমান। যে গঙ্গজল নিয়ে পবিত্রতার এত কাহিনি, সেই গঙ্গার জলকে কতখানি পরিচ্ছন্ন রেখেছে মানুষ? যে জলকে পবিত্র ভেবে মানুষ ডুবে যাচ্ছেন, পাপক্ষয়ী জলে অবগাহন করছেন সেই জলের গুণমান কেমন? ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুসারে, যে ভক্তরা জলে ডুব দিতে চলেছে তাদের জলের গুণমান সম্পর্কে জানানো উচিত ছিল। তবে সেই নির্দেশ স্বাভবিকভাবেই মানা হয়নি। আর মানা হলেও কতজন তাতে সতর্ক হতেন সেটাও বড় প্রশ্ন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের নির্দেশিকায় ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বলেছিল, মহাকুম্ভের সময় প্রয়াগরাজে পর্যাপ্ত পরিমাণে গঙ্গার জল থাকা উচিত এবং এর গুণমান পানের এবং স্নানের জন্য উপযুক্ত হওয়া উচিত। মকর সংক্রান্তির সময় এই উত্সবে বিশাল জনসমাগম হয়েছে। প্রয়াগরাজের চারপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এসেছেন। তা সত্ত্বেও গঙ্গার ছোট স্রোতগুলি পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়নি।

আরও পড়ুন- ৪৫০ মিলিয়ন মানুষের বর্জ্য! কুম্ভমেলা সামলাচ্ছেন সেই ‘অস্পৃশ্য’ সাফাইকর্মীরাই

সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের রিয়েল-টাইম ওয়াটার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম অনুসারে, ১৪ জানুয়ারি, সংক্রান্তির দিনে দুপুর ২টোর মধ্যে প্রয়াগরাজ সঙ্গমে গঙ্গার জলে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (BOD) মাত্রা দাঁড়ায় প্রতি মিলিলিটারে চার মিলিগ্রাম। থাকা উচিত প্রতি মিলিলিটারে ৩ মিলিগ্রাম। যত বেশি মাত্রা বিওডি, তার মানে জলে তত বেশি জৈব পদার্থের ঘনত্ব। অর্থাৎ যত বেশি জৈব পদার্থের ঘনত্ব, সেই জলের গুণমান তত খারাপ।

উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড অনুসারে, সংগঠিত স্নানের জন্য ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতি লিটারে ৩ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয় এই বিওডি। নদীতে জলপ্রবাহের উন্নতির জন্য অবিরাম জল নিষ্কাশন সত্ত্বেও এই ফলাফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ড্রেন বা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশন সঠিকভাবে কাজ করছে না।

ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল এর আগে আদেশ দিয়েছিল, ভক্তদের ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে গঙ্গার জলের রিয়েল-টাইম গুণমান সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে তৈরি করা সাসটেইনেবিলিটি অফ রিভার গঙ্গা ওয়াটার নামক প্ল্যাটফর্মটিও কাজ করছে না। উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ওয়েবসাইটেও কেবল ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জলের গুণমানের তথ্য উল্লিখিত আছে।

আরও পড়ুন-নাগা সন্ন্যাসী কারা! রহস্যে ভরা এদের সাধনার পদ্ধতি জানলে শিউরে উঠতে হয় 

২০১৯ সালেও প্রয়াগরাজের কুম্ভে জলের গুণমান অত্যন্ত খারাপ ছিল। সেবার কুম্ভমেলায়, ১৩০.২ মিলিয়ন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখনও মকরস্নানের দিন সন্ধ্যার তুলনায় সকালে বিওডি মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। যমুনা নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক থাকলেও জলের pH, বিওডি, এবং কলিফর্ম মাত্রাছাড়া ছিল। গঙ্গার উপনদীগুলির মধ্যে কালী নদী ছিল সবচেয়ে দূষিত। সঙ্গমে, যেখানে ভক্তরা মূলত স্নান করেন, কুম্ভের সময় সেখানে জল মারাত্মক দূষিত ছিল।

সঙ্গমে গঙ্গার জলের গুণমান প্রতিদিন দু'বার মাপা হয়- সকাল ও সন্ধ্যায়। দেখা গেছে, সকালে, গঙ্গার জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক ছিল কিন্তু pH, বিওডি এবং কলিফর্মের মত্রা ছিল বেশি।সন্ধ্যাতেও বিষয়টি একই। আর স্নানের দিনে, সঙ্গমে বিওডি মাত্রা সকালের তুলনায় সন্ধ্যায় যথেষ্ট বেশি ছিল। মহাশিবরাত্রি এবং এর পরবর্তী দিনগুলিতে জলে কলিফর্মের মাত্রা সকালে এবং সন্ধ্যায় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

নদীতে জলের পরিবাহিতা সাধারণত প্রতি সেন্টিমিটারে ১০০ থেকে ১,০০০ মাইক্রোসিয়েমেন। বর্তমানে, সঙ্গমে জলের পরিবাহিতা প্রতি সেন্টিমিটারে ৭০৪ মাইক্রোসিয়েমেন। যা যথেষ্ট ভালো। তবে জলের পরিবাহিতা কমে গেলেই জলের গুণমান আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।

More Articles