ভোটের আগে NSG নামিয়ে অস্ত্র উদ্ধার! অশান্ত সন্দেশখালির দখল রাখতে পারবে তৃণমূল

CBI and NSG in Sandeshkhali: সিবিআই গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল, ধৃত শাহজাহান শেখের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়িতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা মজুত রয়েছে। খবর পেয়েই সন্দেশখালিতে অভিযান চালানো হয়। নামে এলএসজি।

ভোট কাছে আসতে না আসতেই ফের উত্তপ্ত সন্দেশখালি। শুক্রবার দ্বিতীয় দফার ভোট চলাকালীনই সন্দেশখালি থেকে উদ্ধার হল প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। এলাকায় তল্লাশিতে নামে সিবিআই। সন্দেশখালির মাঠে নামে ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ডের কম্যান্ডো। অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অভিযানে নামেন জওয়ানরা। ভোট আসতেই কেন ফের উস্কে উঠল সন্দেশখালিতে অশান্তি?

কিছু দিন আগেই সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা। লোকসভা ভোটের আগে রীতিমতো রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের উৎপাতে। দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর অবশেষে ধরা পড়েন শেখ শাহজাহান। আগেই অবশ্য ধরা পড়েছিল শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ শিবু ও উত্তম। স্বাভাবিক ভাবেই লোকসভা ভোটের বিরাট ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় সন্দেশখালি।

লোকসভা ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে। সন্দেশখালি ইস্যু মাথায় রেখে লোকসভা ভোটে বসিরহাটে বিজেপি প্রার্থী করেছে সন্দেশখালির প্রতিবাদীদের মুখ রেখা পাত্র। বামেরা প্রার্থী করেছে সন্দেশখালি ঘটনার প্রতিবাদী বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। তৃণমূল অবশ্য আস্থা রেখে সেখানকার সংখ্যালঘু ভোটেই। তবে ভোট কাছে আসতে না আসতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল সন্দেশখালি।

আরও পড়ুন: নজরে সন্দেশখালি প্রতিবাদী প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদই বসিরহাটে ভরসা বামেদের

সিবিআই গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল, ধৃত শাহজাহান শেখের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়িতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা মজুত রয়েছে। খবর পেয়েই সন্দেশখালিতে অভিযান চালানো হয়। এবং খবর যে ভুয়ো নয়, তার প্রমাণ মেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই। সন্দেশখালি থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। এমনকী রোবট দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে সন্দেশখালিতে, এমন খবরও মিলেছে। শুক্রবার সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার মল্লিকপুরে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ হাফিজুল খাঁ-এর ভগ্নিপতির বাড়িচে তল্লাশি চালায় তদন্তকারীরা। হাফিজুলের বাড়িটি মূল রাস্তা থেকে প্রায় ২০০ মিটার, সেটি ভেড়ি দিয়ে ঘেরা। সেখানে যাওয়ার একটাই মাত্র রাস্তা, এবং তা ইট পাতা। সেই রাস্তা কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে আটকে তল্লাশি চালানো হয় বাড়িটিতে। যেখান থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-বোমা উদ্ধার হয়। এমনকী বাড়ির মাটি খুঁড়ে প্রচুর বিদেশি বন্দুক মিলেছে বলেও দাবি। ওই বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র মিলতে পারে বলেও অনুমান গোয়েন্দাদের।

অস্ত্রের খোঁজ পাওয়ার পরেই সন্দেশখালিতে পৌঁছয় এনএসজি ও বম্ব স্কোয়াড। এনএসজি-র মূলত তিনটি শাখা। একটি বম্ব ডিসপোজাল ও ডিটেকশন স্কোয়াড। খবর পেয়েই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে এনএসজি জওয়ানরা। আসলে সন্দেশখালিতে যেখান থেকে অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে, সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। সেই সব বিস্ফোরক নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও সেগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্যও এনএসজি-র বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে তলব বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত তালেবের বাড়ি থেকে ১২৮ রাউন্ড গুলি , পাঁচটি অত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র , বেশ কয়েকটি দেশি বন্দুক, বোমা তৈরির মশলা-সহ বেশ কিছু বোমা উদ্ধার হয়েছে। যেখানে সেখানে বিস্ফোরক মজুত থাকতে পারে, এমন অনুমান করে বাড়ির আশপাশে অটোমেটিক রোবট স্ক্যানার দিয়ে তল্লাশি করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয়েছিল অত্যাধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সও। সাম্প্রতিক বেঙ্গালুরুতে ক্যাফে বিস্ফোরণেও এনএসজির ডেটা সেন্টারের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কী ধরনের আইডি ব্যবহার করা হয়েছে এবং কি ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে সেটা জানতে পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের। এ ক্ষেত্রেও সন্দেশখালিতেও সেই সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞমহলের।

আদালতের নির্দেশে একদিন আগেই শেখ শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছে সিবিআই। আগেই সন্দেশখালিতে জমি জবরদখল ও নারী নির্যাতনের যাবতীয় অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ সিবিআইকে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে ই-মেইল আইডি তৈরি করে স্থানীয়দের অভিযোগ গ্রহণ করে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ই-মেইলে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে এক নির্যাতিতার বাড়ি গিয়ে কথা বলেন তাঁরা। অভিযোগকারিনী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ড করে সিবিআই। সেই বয়ানের ভিত্তিতে দায়ের করা হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ।

আরও পড়ুন: ১% ঘটে থাকলেও ১০০% লজ্জার! সন্দেশখালি মামলায় যেভাবে শাসকদলকেই দুষল হাইকোর্ট

আর তার পরের দিনই অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠল সন্দেশখালি। ভোটের আগে ফের সন্দেশখালি থেকে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার ব্যাপারটিকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না বিশেষজ্ঞমহল। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় নেতাদের দাপটে সন্দেশখালিতে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি। এবার প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল সন্দেশখালি থেকে। ভোটঘোষণা হতে না হতেই স্থানীয় এলাকায় টহল দিয়েছে বাহিনী। প্রশ্ন উঠেছে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ হাফিজুলের বাড়িতে কেন বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক মোতায়েন করা হয়েছিল? ভোটে অশান্তি ছড়ানোর ফের কোনও পরিকল্পনা ছিল সন্দেশখালিতে? সেসব জানতে ফের তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই গোয়েন্দারা। এতদিন ধরে তৃণমূলই শাসন করেছে সন্দেশখালিতে। শেখ শাহাজাহানের ঘটনাকে ঘিরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে তৃণমূল। লক্ষ্মীর ভান্ডারে ভাতা বাড়িয়ে পুরনো দাপট ফেরানোর যাবতীয় চেষ্টা করেছে ঘাসফুল শিবির। প্রায় প্রতিদিন আবিরখেলা, মেয়ে-বউদের তাতে সামিল করা, এসব করে যাবতীয় ধারণা বদলেরও কম চেষ্টা করেনি তারা। কিন্তু ভোটের আগেই শাহাজাহান-ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারকে কি ভালো চোখে দেখবে মানুষ? তার ছাপ কতটা পড়বে লোকসভা ভোটের রেজাল্টে? ভাবাচ্ছে সন্দেশখালি।

More Articles