রাজভবনের কর্মীদের 'বিশেষ চিঠি'! শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফের ভয়াবহ অভিযোগ

Molestation Case against Governor: রাজ্যপাল রাজভবনের কর্মচারীদের চিঠি লিখে নির্দেশ দেন, এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশ কোনওরকম যোগাযোগ করলে তা এড়িয়ে যেতে হবে।

রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে। লোকসভা নির্বাচনের আবহে সারা পশ্চিমবাংলা এই নিয়ে তোলপাড়। রাজভবনের এক মহিলা কর্মী অভিযোগ এনেছিলেন, খোদ রাজ্যপাল তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন! এবার আরও ভয়ানক অভিযোগ তুলেছেন তিনি, সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগকারিণীর অভিযোগ করেছেন, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস রাজভবনের কর্মীদের এই বিষয়ে কোনও রকম মুখ না খোলার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। রাজ্যপাল রাজভবনের কর্মীদের একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে বলেছেন, এই শ্লীলতাহানির মামলার বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করা যাবে না বা যোগাযোগ করা হলে তা এড়িয়ে যেতে হবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, রাজভবনের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী সেই মহিলার অভিযোগ, তিনি জানতে পেরেছেন যে রাজভবনের কর্মচারীদের রাজ্যপাল এবং তার অনুচররা হুমকি দিচ্ছে যাতে কেউ তদন্তে সহযোগিতা করতে সাহস না পায়।

আরও পড়ুন- নক্ষত্রের দোষ নাকি শত্রুর বাড়বাড়ন্ত, কেন বারবার খাদের অতলে তলিয়ে যান কুণাল ঘোষ?

গত ৫ মে রবিবার, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজভবনের কর্মচারীদের চিঠি লিখে নির্দেশ দেন এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশ কোনওরকম যোগাযোগ করলে তা এড়িয়ে যেতে হবে। তিনি রাজভবনের কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালের কার্যকালের সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। কলকাতা পুলিশ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করার পরই সিভি আনন্দ বোস এই চিঠি পাঠান। সংবিধানের ৩৬১ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তাঁদের কার্যকালের সময় কোনও আদালতে কোনওরকম ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে না। সিভি আনন্দ বোস আরও লিখেছেন, যেহেতু রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে কোনও ফৌজদারি মামলা করা যাবে না এমনটা সাংবিধানিক নিয়মে আছে তাই পুলিশ কোনওভাবেই এই বিষয়ে তদন্ত করতে পারে না। করলে তা সংবিধান অবমাননা হয়।

অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, রাজ্যপাল যদি কোনও অন্যায়ই না করে থাকেন তবে কেন তদন্ত নিয়ে তাঁর এত আপত্তি? মহিলার প্রশ্ন, সিভি আনন্দ বোস দাবি করছেন যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগগুলিই মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদি রাজ্যপাল বিশ্বাস করেই থাকেন যে, এই মহিলা একজন মিথ্যাবাদী এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই কাজ করেছেন, তাহলে তিনি সাংবিধানিক ঢাল ব্যবহার করে নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন কেন? কেন তদন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না? তদন্তে কি সত্য প্রকাশের ভয় পাচ্ছেন রাজ্যপাল? প্রশ্ন ওই মহিলার।

আরও পড়ুন- যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত খোদ বাংলার রাজ্যপাল? যে ভয়ানক অভিযোগ সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে

গত ৩ মে, শুক্রবার, রাজভবনের কর্মচারী ওই মহিলা কলকাতা পুলিশের কাছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রাজ্যপাল গোটা বিষয়টিকেই 'অযৌক্তিক নাটক' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। রাজ্যপাল বলেছেন, এইসব অভিযোগ তুলে কেউই তাঁকে দুর্নীতি ফাঁস এবং হিংসা রোধের প্রচেষ্টা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।

অভিযোগকারিণী বলছেন, “আমি যে কোনও পরীক্ষার মুখোমুখি হতে রাজি, রাজ্যপালের সামনাসামনি বসতে রাজি...লাই ডিটেক্টর টেস্ট হোক বা যে কোনও উচ্চতর প্রযুক্তি হোক, আমি রাজি। যদি রাজ্যপাল নির্দোষ হন, তাহলে তিনি পালাচ্ছেন কেন?”

প্রশাসনের উপর এখনও আস্থা রাখছেন ওই মহিলা। পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও তাঁর দাবি। তবে রাজ্যপাল নিজের অবস্থানে অনড় থেকে প্রশাসন ও প্রশাসনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। বিষয়টি বহিরঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্ব হয়েই রয়ে গিয়েছে। সিভি আনন্দ বোস বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা 'নোংরা' রাজনীতি করছেন। তবে "রাজ্যপালের কার্যালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিদিগিরি" তিনি বরদাস্ত করবেন না।

কলকাতা পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশেষ দল ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিশেষ দলে আটজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। শনিবার, ৪ মে, হেয়ার স্ট্রিট থানার আধিকারিকরা শ্লীলতাহানির ঘটনায় গভর্নর হাউজে নিযুক্ত তিন কর্মকর্তা এবং এক কর্মীকে তলব করেন। রাজভবনের কোনও আধিকারিক তদন্তের জন্য আসেননি।

More Articles